
যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যায়নরত ৩০০ বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা প্রত্যাহার করে নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাস।এই শিক্ষার্থীদের ‘উন্মাদ' হিসেবে অভিহিত করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি দাবি করছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এর এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
তবে তাদের কেউ আদৌ কোনো অপরাধের জন্য অভিযুক্ত কিনা তা জানানো হয়নি।
মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রতিবাদে অংশ নেয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার গায়নায় আনুষ্ঠানিক সফরের সময় রুবিও বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই এটা করছি। যখনই আমি এই উন্মাদদের কাউকে পাচ্ছি, তাদের ভিসা নিয়ে নিচ্ছি।’ এর ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে তারা এই শিক্ষার্থীদের ‘কাছে থেকে মুক্তি' পাবেন বলেও জানান তিনি।
শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি করছে দাবি করে রুবিও বলেন, ‘আমরা আপনাকে আসার জন্য এবং পড়াশোনার জন্য ভিসা দিয়েছি, সামাজিক অ্যাক্টিভিস্ট (আন্দোলকর্মী) হওয়ার জন্য নয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ক্ষতি করার জন্য নয়।’
ক্ষমতায় আসার পর থেকে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি, বিশেষ করে ইসরায়েল নিয়ে ভিন্নমত পোষণকারী বিদেশিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এর মধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার ও ডিপোর্ট বা জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
রুবিও এই বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি তুলে ধরে বলেন, ‘আপনি আমাদের মিথ্যা বলে ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করলে এবং সেই ভিসার মাধ্যমে এই ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলে আমরা আপনার ভিসা প্রত্যাহার করবো।’
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট বা প্রথম সংশোধনীতে বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হলেও ট্রাম্প প্রশাসন বলছে বিদেশি নাগরিকদের জন্য তা প্রযোজ্য নয়, যদিও এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে চরম দ্বিমত রয়েছে।
সবশেষ গত মঙ্গলবার ম্যাসাচুসেটসে টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের তুর্কি ডক্টরাল শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্ককে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেন অভিবাসন কর্মকর্তারা। তিনি ক্যাম্পাসের একটি পত্রিকায় গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতির আহ্বান জানিয়ে নিবন্ধ লিখেছিলেন।
অন্য বন্দীদের মতোই তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কোনো অভিযোগ নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র দাবি করেছেন, তিনি ‘মার্কিনিদের হত্যায় উৎসাহ দেওয়া বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হামাসকে সমর্থন দেয়ার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত।’
ঐ রাজ্যের ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য আয়ান্না প্রেসলি তার আটককে ‘মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন ‘বৈধ প্রক্রিয়ায় থাকা শিক্ষার্থীদের অপহরণ' করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। রুমেইসাকে তিনি ‘রাজনৈতিক বন্দী' বলেও উল্লেখ করেন।
এর আগে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি থাকা ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খালিল এবং ভারতের পোস্ট ডক্টরাল গবেষক বদর খান সুরি সহ অনেক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে যুক্তরাষ্টের প্রশাসন। তারাও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত নন। আদালত এই দুইজনেরই ডিপোর্ট সাময়িকভাবে স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে।