
শুক্রবার দুপুরে মিয়ানমারের সাগাইং শহরের কাছে ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর দেশটির রাজধানী নেইপিদোর একটি ১,০০০ শয্যার হাসপাতালকে ‘গণহতাহতের এলাকা’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে কতগুলো মৃতদেহ এসেছে আর কতজন মারা গেছেন- তা নিশ্চিত নয়। তবে এ পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মান্দালয়ের একটি মসজিদে জুমআ’র নামাজরত অবস্থায় ছাদ ধসে ১০ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। আরও প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
হাসপাতালের অবস্থা
নেইপিদোর ওই হাসপাতালটির নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে এটি রাজাধানী শহরের অন্যতম বৃহৎ হাসপাতাল।
এএফপি জানিয়েছে, আগত আহতদের হাসপাতালের বাইরেই রাস্তার পাশে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অনেককে স্ট্রেচারে শুইয়ে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে, আর স্বজনরা তাদের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন।
একজন চিকিৎসক বলেছেন, ‘আমি আগে এমন দৃশ্য দেখিনি। আমরা পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছি, তবে আমরা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি’।
এদিকে ভূমিকম্পের প্রভাবে হাসপাতালের ভবনটিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রবেশপথের অংশ ধসে পড়ায় সেখানে একটি গাড়ি চাপা পড়েছে।
ভূমিকম্পের প্রভাব
- মান্দালয় ও সাগাইং শহরে বহু আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
- ইরাবতী নদীর পুরোনো সেতু পুরোপুরি ধসে পড়েছে।
- থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী একটি বৌদ্ধ মঠ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
এদিকে মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন চীনের ইউনান প্রদেশে শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় ভূকম্পন সংস্থা এটি ৭.৯ মাত্রার বলে জানিয়েছে।
সেইসঙ্গে ভারতের কলকাতা, মণিপুর এবং বাংলাদেশের ঢাকা ও চট্টগ্রামেও হালকা কম্পন অনুভূত হয়েছে।
থাইল্যান্ডে জরুরি অবস্থা ঘোষণা
এদিকে মিয়ানমারের পাশাপাশি শক্তিশালী ভূমিকম্প থাইল্যান্ডের ব্যাংকক পর্যন্ত অনুভূত হয়েছে। এতে ব্যাংককের একটি ৩০ তলা নির্মাণাধীন ভবন পুরোপুরি ধসে পড়েছে এবং সেখানে ৭৮ জন আটকে পড়েছেন। এতে তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। ভবনটি সরকারি অফিস ভবন হিসেবে ব্যবহারের কথা ছিল।
এছাড়া আরও বেশকিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কিছু মেট্রো পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মেট্রো স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেন প্রচণ্ডভাবে কাঁপছে। অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বহুতল ভবনের ছাদে থাকা সুইমপুল থেকে পানি উপচে পড়ছে।
স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর মানুষকে চিৎকার করে সাহায্য চাইতে শুনেছি’।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা ব্যাংককে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।
এই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।