Image description

নয়া দিল্লিস্থ ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজর বলেছেন, ‘গাজা উপত্যকা হামাস-মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলের সামরিক অভিযান চলবে’। একই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির সামনে ‘দুটি পথ খোলা’ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।

বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, রিউভেন আজর জানান, ৪২ দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি শেষ হয়েছে। কিন্তু হামাস বন্দিদের মুক্তি না দেওয়ায় ইসরাইলের সামনে সামরিক পদক্ষেপ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

যদিও গাজা যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ীই এর প্রথম ধাপে যে ৩৩ বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল, তার থেকেও বেশি (দুজন) জিম্মির মুক্তি দিয়েছে হামাস। বিপরীতে নির্ধারিত সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি দিতেই গড়িমসি করে ইসরাইল।

পরে তো আর মেয়াদই বাড়ালো না দখলদার সরকার। উলটো হামাসকে দোষারপ করে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল গত ১ মার্চ থেকে। তার ওপর গত ১৭ মার্চ দিবাগত রাত থেকে গাজাবাসীর ওপর ভয়াবহ বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। যাতে এক রাতেই নিহত হয় ৪১২ জন ফিলিস্তিনি।

এ অবস্থায় শান্তির আহ্বান জানিয়ে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, আলোচনার জন্য তাদের দরজা সবসময় খোলা।  

তবে, ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘শান্তি আসতে পারে আজই, যদি হামাস আমাদের শর্ত মেনে নেয়’।

এক্ষেত্রে তিনি দুটি প্রধান শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন। তা হলো-

  • সব বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে।
  • হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র হতে হবে, যাতে তারা আর কখনো ইসরাইলে হামলা চালাতে না পারে।

তবে হামাস ‘শান্তি চায় না’, বরং মার্কিন মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব একাধিকবার প্রত্যাখ্যান করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

রিউভেন আজর বলেন, ‘সামরিক চাপ প্রয়োগ করেই এর আগে ২৫৪ জন বন্দির মধ্যে ১৯৫ জনকে মুক্ত করা হয়েছে। এটিই কার্যকর পদ্ধতি’।

সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

তিনি আরও বলেন, ‘যদি কূটনৈতিকভাবে সমাধান না আসে, তাহলে আমরা সামরিকভাবেই তা নিশ্চিত করবো’।

আর এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ‘ইসরাইলকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন জানিয়েছে’, যা এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি আনার লক্ষ্যে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ইসরাইলের জবাব

তবে ইসরাইলের এহেন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে আজরের দাবি, ‘সমালোচনা বাস্তবতাকে বদলে দিতে পারে না। বাস্তবতা হলো- হামাস এখনো বন্দিদেরকে ধরে রেখেছে। শুধু ইসরাইলিদেরই নয়, বরং সমগ্র ফিলিস্তিনি জনগণকেও তারা জিম্মি করে রেখেছে’।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, হামাস আন্তর্জাতিক সাহায্য নিজেদের দখলে নিচ্ছে এবং তা ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে বিক্রি করছে, যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

গাজার ভবিষ্যৎ এবং হামাসের শেষ পরিণতি

ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, যাতে গাজায় একটি নতুন ও মধ্যপন্থি ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব গঠিত হতে পারে’।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘হামাসের দিন শেষ। তারা চাইলে শান্তিপূর্ণভাবে গাজা ছেড়ে চলে যেতে পারে। নয়তো সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের নির্মূল করা হবে’।

হামাসের সামনে মাত্র দুটি বিকল্প:

  • কূটনৈতিক আলোচনায় ফিরে এসে শর্ত মেনে নেওয়া।
  • সার্বিক সামরিক অভিযানের মুখোমুখি হওয়া, যা গাজা থেকে হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম পথটিই বেছে নিতে চাই। তবে হামাস যদি সহযোগিতা না করে, তাহলে দ্বিতীয় পথেই এগোবো’।

আজরের মতে, বর্তমানে হামাস ৫৯ জন ইসরাইলি বন্দিকে ধরে রেখেছে এবং এখনো তাদের মুক্তি দিতে রাজি হয়নি।