Image description

তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। বিরোধী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) এই নেতা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত। কয়েক দিন পরে সিএইচপির পক্ষ থেকে একরেম ইমামোগলুকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তাঁর গ্রেপ্তার দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গ্রেপ্তারের পর একরেম ইমামোগলুকে আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে প্রসিকিউটরেরা তাঁকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহায়তা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন এবং ‘অপরাধী সংগঠনের সন্দেহভাজন নেতা’ বলে আখ্যায়িত করেন।

এ ছাড়া এই তদন্তের অংশ হিসেবে আরও ১০০ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি ইস্তাম্বুলের গভর্নর কার্যালয় শহরের আশপাশে চার দিনের জন্য সাধারণ মানুষের চলাচলে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর এক ভিডিওবার্তায় ইমামোগলু বলেছেন, জনগণের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখা যাবে না। তিনি আরও জানান, তিনি গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন।

গত বছর অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে ইমামোগলু দ্বিতীয়বারের মতো ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর দল সিএইচপি সেই নির্বাচনে ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারায় বড় জয়লাভ করেছিল। অন্যদিকে এটি এরদোয়ানের ২২ বছরের শাসনের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী পরাজয় ছিল।

কিন্তু একরেম ইমামোগলুর হঠাৎ গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশ্লেষকেরা প্রশ্ন করেছেন, এ ধরনের ঘটনা বিরোধীদের দমন নাকি আইনগত পদক্ষেপ?

অনেকে বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন। তবে এরদোয়ান ও তাঁর দল একে আইনি প্রক্রিয়ার অংশ বলে দাবি করেছে। তুরস্কের বিচারমন্ত্রী ইলমাজ তুঞ্চ বলেছেন, এই গ্রেপ্তারকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলা ‘ভুল ও বিপজ্জনক’। কারণ, দেশে আইনের শাসন বজায় রয়েছে।

এদিকে গ্রেপ্তারের ঠিক এক দিন আগে ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইমামোগলুর ডিগ্রি বাতিল করেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইমামোগলুর ডিগ্রি বাতিল করে তাঁকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ, তুর্কি সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক। ইমামোগলু এই সিদ্ধান্তকে ‘আইনবহির্ভূত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

সিএইচপি একে ‘কূটনৈতিক অভ্যুত্থান’ বলে উল্লেখ করে অভিযোগ করেছে, এটি দেশের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া বন্ধ করার চেষ্টা। দলের চেয়ারম্যান ওজগুর ওজেল বলেছেন, জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করা গণতন্ত্রের ওপর আঘাতের শামিল।

ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর তুর্কি মুদ্রা লিরার মান রেকর্ড পরিমাণে কমে যায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ঘটনাকে গণতন্ত্রের ওপর হুমকি হিসেবে দেখছে। জার্মানি একে ‘রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের অংশ’ বলে অভিহিত করেছে। ফ্রান্স বলেছে, এই গ্রেপ্তার তুরস্কের গণতন্ত্রের ওপর ‘গুরুতর প্রভাব’ ফেলতে পারে।

এদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমন করতে ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন এলাকায় গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইন্টারনেট নজরদারি সংস্থা নেটব্লকস জানিয়েছে, তুরস্কে এক্স (টুইটার), ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে।

ইমামোগলুর বিরুদ্ধে এর আগেও মামলা হয়েছে। ২০২২ সালে তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের অবমাননা করার অভিযোগে আড়াই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন।

২০২৮ সালে তুরস্কের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এরদোয়ান যদি সংবিধান পরিবর্তন করেন বা আগাম নির্বাচন ডাকেন, তাহলে তিনি আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। ইমামোগলুর গ্রেপ্তার তুরস্কের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিরোধী দলগুলোর দাবি, এটি সরকার কর্তৃক বিরোধীদের কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা।