
ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে আটক করেছে তুরস্কের পুলিশ। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তাসহ একাধিক অভিযোগে বুধবার নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। এর আগে তার বাড়িতে তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। খবর আনাদলু এজেন্সির।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ধরা হয় একরেম ইমামোগলুকে। গত বছরের মার্চে এরদোয়ানের দলকে পরাজিত করে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ইমামোগলুর গ্রেপ্তারকে ‘আমাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান’ বলে প্রতিবাদ করেছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)।
ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের পর ইস্তাম্বুলের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি চারদিনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে কোনো সভা-সমাবেশ। এর আগে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) উচ্চশিক্ষা কাউন্সিলের নিয়মাবলীতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে মেয়রের ডিপ্লোমা বাতিল করে ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, মেয়র একরেম ইমামোগলুকে আটক করে পুলিশ সদর দপ্তরে নেওয়া হয়েছে। তবে তার বাড়িতে তল্লাশির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানায়নি। দেশটির সংবাদমাধ্যমে খরব প্রকাশিত হয়েছে, দুর্নীতির তদন্তের অংশ হিসেবে এ তল্লাশি চালানো হয়েছে।
ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয় মেয়র একরেম ইমামোগলুর বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ এমন সময় নেওয়া হল যখন দেশজুড়ে বিরোধীদের ওপর ধরপাকড় অভিযান চলছে। ইমামোগলুর জনপ্রিয়তা আগামী যেকোনো নির্বাচনে ভালো ফলের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর মাঝেই তাকে আটকের ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে সমালোচকরা অভিযোগ করেছেন।
তবে তুরস্কের সরকার বিরোধীদের আনা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, দেশের বিচারবিভাগ স্বাধীন। নির্দোষ কাউকেই আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। ইস্তাম্বুলের মেয়রের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত চলছে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যোগসূত্রের অভিযোগে তদন্তের অংশ হিসেবে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত মাসে দেশটির নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) কারাবন্দি এক নেতা গোষ্ঠীটির সদস্যদের অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দেন। এর মাধ্যমে দেশটিতে এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা বিদ্রোহের অবসানের পথ তৈরি হয়েছে; আঞ্চলিক শান্তির জন্যও বিদ্রোহীদের এই ঘোষণাকে বড় পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক কিছু মতামত জরিপে ৫৪ বছর বয়সী একরেম ইমামোগলুকে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের চেয়ে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে পৃথক দুটি তদন্ত চলছে; যার মধ্যে অপরাধমূলক সংগঠনের নেতৃত্বদান, ঘুষ লেনদেন ও টেন্ডার জালিয়াতির অভিযোগ আছে।
আগামী ২০২৮ সালে তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই নির্বাচনের আগে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেশটির প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) আনুষ্ঠানিকভাবে ইমামোগলুর নাম ঘোষণার কথা রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে ইস্তাম্বুলের দুই মেয়াদের এই মেয়র বলেছেন, তিনি কোনও কিছুতেই হাল ছাড়ছেন না এবং চাপের মুখেও নিজের অবস্থানে অনড় থাকবেন। ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের পর ইস্তাম্বুলে বিক্ষোভের আশঙ্কা করছে এরদোয়ান সরকার।