Image description

এবার মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলশী গ্যাবার্ডের বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে করা মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নব-নিযুক্ত মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস। যদিও তার উত্তরে অখুশি হতেই পারে ভারতের মোদি সরকার। ভারতীয় এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বিষয়টিকে কূটনৈতিক আলোচনার ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এদিকে তুলশীর করা মন্তব্য যে শুধু সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ছিলো তা নয় তিনি কথা বলেছিলেন হিজবুত তাহরীর সম্পর্কেও যা ছিলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খেলাফত কার্ড ব্যবহারের অপচেষ্টা এটি আর বলার অপেক্ষা রখে না।

 

সম্প্রতি মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড ভারত সফরে গণমাধ্যমের সামনে বলেছেন, বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিশেষ করে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যে তার এমন মন্তবব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর মাঝেই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিং এ উঠে এসেছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। দেশটির স্থানীয় সময় সোমবার ওই ব্রিফিং এ এক ভারতীয় সাংবাদিক বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুতে প্রশ্ন করেন। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নবনিযুক্ত মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস ওই প্রশ্নের সরাসরি কোন উত্তর দেননি। তিনি বিষয়গুলোকে কূটনৈতিক আলোচনার ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করে আগাম কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

 

ব্রিফিংয়ে ওই ভারতীয় সাংবাদিক বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, মার্কিন নির্বাচনের কয়েকদিন আগে তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রার্থী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এখন যেহেতু পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও প্রায় ৬০ দিন ধরে দায়িত্বপালন করছেন, সেই হিসেবে বাংলাদেশে হিন্দুদের পরিস্থিতি সম্পর্কে তার মূল্যায়ন কী এবং তিনি কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন? এর জবাবে ট্যামি ব্রুস বলেন, আচ্ছা, আবারও বলছি, আপনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথা বলছেন যে অন্য দেশে কী ঘটছে তা নির্দিষ্ট কিছু দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ট্রাম্পপ্রশাসন কীভাবে দেখে থাকে?

 

এই পর্যায়ে ভারতীয় ওই সাংবাদিক বাংলাদেশ সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করেন। এর জবাবে ট্যামি ব্রুস বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্যই এই বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রকৃতি সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেন। ট্যামি আরো বলেছেন, যখন আলোচনা, কূটনৈতিক বিবেচনা এবং এর সঙ্গে জড়িত পক্ষগুলোর মধ্যে কথোপকথন এবং কী ঘটতে পারে সেই কথা আসে, তখন আমি এখানে অনুমান করে বলতে চাই না যে ফলাফল কী হবে। আপনিও চান না যে আমি সেটা করি। আমি মনে করি সবচেয়ে ভালো কাজ হবে...। পরবর্তীতে সাংবাদিক আবারও নতুন করে তার প্রশ্নটি করতে চাইলে তাকে আবারও থামিয়ে দেন। তিনি বলেন, আমি যা উত্তর দেবো না তা হলো সরকার থেকে সরকার পর্যায়ে কূটনৈতিক বিবেচনা অথবা একটি নির্দিষ্ট দেশে কী ঘটছে সে সম্পর্কে কোনও মনোভাব প্রকাশ এবং এমন কোনও পদ্ধতিতে কথা বলা যা কূটনৈতিক ধরণের কথোপকথনের মধ্যে পড়ে এবং স্পষ্টতই এসব আমি বলতে পারি না।

 

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের মাধ্যমে ভারতীয় পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর তাদের টার্গেট ছিল মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের ভারত সফর। সেই সফরকে উদ্দেশ্য করে মাঠে নামে পর্দার আড়ালের কুশিলভরা। তারই অংশ হিসেবে খেলা হলো হিজবুত তাহারিরে কথিত ‘ইসলামি খেলাফত’ কার্ড। এই সংগঠনকে পরিকল্পিতভাবে সামনে আনা হলো তুলসী গ্যাবার্ডের ভারত সফরের এক সপ্তাহ আগে। বায়তুল মোকাররমের সামনে এক বড় জামায়াত করল নিষিদ্ধ সংগঠন তাহরির। তাদের হাতে সুস্পষ্টভাবে ইংরেজি হরফের লিখা খেলাফতের ব্যানারকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রদর্শন করা হলো। যদিও হিজবুত তাহারীর মাঠে নামার পর তাদের ঠেকাতে কঠোর হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গ্রেফতার করা হয়েছে অনেককে। সরকারের এই অ্যাকশনে থাকার পরও ভারত নোংরা খেলায় মেতেছে।

 

সেই সাক্ষাৎকারে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের কথায় ইসলামী খেলাফতের আদর্শের কথা বিশেষভাবে উঠে আসে। গ্যাভার্ড বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ধরনের খেলাফতের আদর্শ চিহ্নিত করে পরাজিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ট্রাম্প এ ধরনের আদর্শকে কট্টর ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।যদিও তুলশীর এই বক্তব্যের পর যতটা মনে হয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই এসব মিথ্যা প্রোপাগান্ডায় উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ নিয়ে, সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসের কথায় তা ভুল প্রমাণিত হলো। কারণ, ভারত বরাবরই ফ্যাসিস্ট হাসিনার পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা সংখ্যালঘু নির্যাতন থেকে শুরু করে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন নিয়েও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা তুলে ধরতে চায় আন্তর্জাতিক মহলে।