Image description

বিশ্ব ইতিহাস সাক্ষী, রাশিয়াকে পরাজিত করা কোনো শক্তির পক্ষেই সম্ভব হয়নি। যুগে যুগে দেশটি আক্রমণের শিকার হলেও, আক্রমণকারীরাই পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারির জবাবে মস্কো স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ইতিহাসের সেই গৌরবময় অধ্যায়, যেখানে নেপোলিয়ন ও নাৎসি বাহিনী রাশিয়ার মাটিতে এসে লজ্জাজনক পরাজয়ের শিকার হয়েছিল।

১৮১২ সালে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন তার বিখ্যাত ‘গ্র্যান্ড আর্মি’র ছয় লাখ সেনা নিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করেন। এই বাহিনীতে ফরাসি, ইতালীয়, জার্মানসহ বহু দেশের সেনারা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইউরোপ জয় করা নেপোলিয়নের জন্য এটি ছিল একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল রাশিয়ার শীতকালীন যুদ্ধনীতিকে অবমূল্যায়ন করা। রুশ বাহিনীর প্রতিরোধ এবং তীব্র শীতের কারণে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে নেপোলিয়নের সেনা সংখ্যা এক লাখে নেমে আসে। চূড়ান্ত পরাজয়ের পর নেপোলিয়নকে নির্বাসনে যেতে হয়, এবং ফরাসি সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যায়।

নেপোলিয়নের পর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নেতৃত্বাধীন নাৎসি বাহিনীও রাশিয়াকে দখল করতে এসে চরম পরাজয়ের সম্মুখীন হয়। কুখ্যাত ‘অপারেশন বারবারোসা’র মাধ্যমে জার্মান বাহিনী রাশিয়ার মাটিতে প্রবেশ করলেও, স্টালিনগ্রাদের যুদ্ধ এবং কুরস্কের যুদ্ধের মতো ঐতিহাসিক বিজয়ে রুশ বাহিনী তাদের সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে। এই যুদ্ধেই নাৎসি বাহিনীর শক্তির মেরুদণ্ড ভেঙে যায়, এবং শেষ পর্যন্ত হিটলার আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।

বিশ্বের বৃহত্তম দেশ হিসেবে রাশিয়ার ভৌগোলিক বৈচিত্র্য দেশটির প্রতিরক্ষার জন্য বিশাল সুবিধা বয়ে এনেছে। দেশটির বিস্তীর্ণ এলাকা, বরফে আচ্ছাদিত অঞ্চল, দুর্গম পর্বতমালা এবং নদীগুলি শত্রুদের জন্য প্রবেশ করা কঠিন করে তোলে। এছাড়া, রাশিয়ার শীতকাল যুদ্ধের ময়দানে এক অতিরিক্ত অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। যেখানে অন্যান্য দেশের সেনারা হিমশীতল পরিবেশে টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত, সেখানে রুশ বাহিনী শীতকালীন যুদ্ধে পারদর্শী হওয়ার কারণে শত্রুদের নির্মূল করতে সক্ষম হয়।

শুধু প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষাই নয়, রাশিয়া নিজেদের সামরিক প্রযুক্তি এবং অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করেছে। দেশটির বিশাল সম্পদ এবং সামরিক খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ রাশিয়াকে আরও অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে। আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, কৌশলগত পরিকল্পনা এবং দৃঢ় মনোবল—সব মিলিয়ে রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধেও পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার শক্তিমত্তার প্রমাণ মিলেছে। ইউরোপ ও পশ্চিমা শক্তির প্রত্যক্ষ সহায়তা সত্ত্বেও রাশিয়ার এক ইঞ্চি জমিও কেউ দখল করতে পারেনি। বরং কৌশলী আক্রমণ ও প্রতিরোধের মাধ্যমে রুশ বাহিনী শত্রুদের পিছনে ঠেলে দিয়েছে।

ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, তাড়াহুড়ো করে নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী কৌশল এবং ধৈর্যের মাধ্যমে যুদ্ধ জিতে রাশিয়া। শত্রুদের বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে, খাবার ও রসদ সরবরাহ বন্ধ করে রুশ বাহিনী প্রতিপক্ষের শক্তি নিঃশেষ করে ফেলে। পুতিনের নেতৃত্বে সেই কৌশল আরও নিখুঁত হয়েছে। শক্তিশালী অর্থনীতি, আধুনিক সামরিক প্রযুক্তি ও ভৌগোলিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মিলিয়ে রাশিয়া আজও অজেয়। তাই ইতিহাস বলছে, রাশিয়াকে হারানোর স্বপ্ন দেখাই বৃথা।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/iN0Oyg7-PAU?si=kY_SWjBMWrsYGHw_