Image description

নেপালের সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে স্বাগত জানিয়ে হাজারও সমর্থক রাজধানী কাঠমান্ডুতে সমাবেশ করেছে এবং বিলুপ্ত রাজতন্ত্র পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে। পশ্চিম নেপাল সফর শেষে গত রোববার (৯ মার্চ) কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে প্রায় ১০ হাজার সমর্থক রাজাকে স্বাগত জানান।

এসময় তারা স্লোগান দিতে থাকে, ‘রাজপ্রাসাদ খালি করো, রাজাকে ফেরাও, দেশ বাঁচাও। আমাদের প্রিয় রাজা দীর্ঘজীবী হোন। আমরা রাজতন্ত্র চাই।’

রাজার সমর্থকদের ভিড়ের কারণে বিমানবন্দরে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে যাত্রীদের হেঁটে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। তবে, সেখানে মোতায়েন শত শত দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে বাধা দেয় এবং কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।

 

২০০৬ সালে ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে জ্ঞানেন্দ্র শাহ তার স্বৈরাচারী শাসন ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ২০০৮ সালে দেশটির সংসদ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর তিনি রাজপ্রাসাদ ছেড়ে সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন শুরু করেন।

কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে নেপালের অনেক নাগরিক রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি তুলছেন। তাদের অভিযোগ, প্রজাতান্ত্রিক শাসন কাঠামো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে ব্যর্থ হয়েছে এবং দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৮ সালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার পর দেশটিতে ১৩বার সরকার পরিবর্তন হয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের একজন ৭২ বছর বয়সী থির বাহাদুর ভাণ্ডারি বলেন, আমরা রাজাকে পূর্ণ সমর্থন জানাতে এবং তাকে সিংহাসনে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে এখানে এসেছি।

সমাবেশে অংশ নেওয়া ৫০ বছর বয়সী কাঠমিস্ত্রি কুলরাজ শ্রেষ্ঠা ২০০৬ সালের রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে এখন তিনি তার মত পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন ব্যাপক দুর্নীতি, আর রাজনীতিবিদরা দেশের জন্য কিছুই করছে না। আমি রাজতন্ত্রের পতনের পক্ষে ছিলাম, ভেবেছিলাম এটি দেশের জন্য ভালো হবে। কিন্তু এখন দেখছি, আমি ভুল ছিলাম। দেশ আরও গভীর সংকটে পড়েছে, তাই আমার মত পরিবর্তন হয়েছে।

তবে, রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবির বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি জ্ঞানেন্দ্র শাহ। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাবেক রাজাকে ক্ষমতায় ফেরানোর সম্ভাবনা খুবই কম।

প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে প্রাসাদে রাজপরিবারের সদস্যরা হত্যার শিকার হলে ভাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হয়ে নেপালের রাজা হন জ্ঞানেন্দ্র। প্রথমদিকে তিনি সাংবিধানিক রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও ২০০৫ সালে সম্পূর্ণ ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। তিনি সরকার ও সংসদ ভেঙে দেন, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের কারাগারে পাঠান এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সামরিক বাহিনীর সহায়তায় দেশ শাসন করেন।

সূত্র: এপি