Image description

এবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পাশে দাঁড়ালেন ইউরোপীয় মিত্ররা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কার্যালয় ‘ওভাল অফিস’কাণ্ডে জেলেনস্কিকে সমর্থন দিলেন তারা। এ নিয়ে একে একে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন রাশিয়াকে আগ্রাসী ও ইউক্রেনকে নিপীড়িত বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া ইউক্রেনকে সাহায্য করা ও তিন বছর আগে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়টি সঠিক সিদ্ধান্ত ছিলো বলে মন্তব্য করেন । জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ এক্সে এক পোস্ট দিয়ে বলেন,  ইউক্রেনীয়দের চেয়ে বেশি কেউ শান্তি চায় না। এছাড়া জার্মানি ও ইউরোপের উপর নির্ভর করতে পারে ইউক্রেন- এ মন্তব্য করেন তিনি। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এর মিত্রদের মধ্যে ‘ তাৎক্ষণিক শীর্ষ সম্মেলন’ প্রয়োজন। 

বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেননি। তবে শনিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে লন্ডনের স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন জেলেনস্কি। এরপর ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হওয়ার কথা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি- উভয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি আরো বলেন, ইউক্রেনের জন্য অটুট সমর্থন আছে স্টারমারের এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার যা করার তিনি সেগুলো সব করছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সমর্থনও পেয়েছেন জেলেনস্কি। ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরশুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, আপনি একা নন প্রিয় প্রেসিডেন্ট। তিনি আরো বলেন, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করবো। জেলেনস্কিকে ‘ওয়ার লিডার’ বলেও সম্বোধন করেন উরশুলা। জেলেনস্কি  অবশ্য অনেকের বার্তায় সাড়া দিয়েছেন। তিনি তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। রাশিয়ান সাবেক প্রেসিডেন্ট ও  সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপ-প্রধান দমিত্রি মেদভেদেভ টেলিগ্রামে এক পোস্টে বলেন,  ট্রাম্প ইউক্রেনের কব্জির ওপর জোরে চপেটাঘাত করেছেন। 

জেলেনস্কিকে ‘কোকেইন ক্লাউন’ বলেও মন্তব্য করেন দমিত্রি। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো জেলেনস্কির মুখের ওপর কেউ সত্য বলেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘ওই অকৃতজ্ঞ শূকরের’ কব্জির ওপর জোরে চপেটাঘাত করা হয়েছে। এটা প্রয়োজন ছিলো। তবে তা পর্যাপ্ত না । আমাদের অবশ্যই ইউক্রেনকে মিলিটারি সাহায্য বন্ধ করতে হবে। জেলেনস্কির সঙ্গে সংযম দেখানোর জন্য ট্রাম্পের  প্রশংসা করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। তিনি বলেন, আমার মনে হয় হোয়াইট হাউসে বলা জেলেনস্কির মিথ্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ২০২২ সালে কিয়েভ একা ছিলো। দেশটির পাশে কেউ ছিলো না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরশুলা ভন ডার লিয়েন এক্সে এক পোস্ট দিয়ে ইউক্রেনের মানুষকে সাহসী, নির্ভিক ও শক্তিশালী হতে বলেন। ইইউয়ের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা ক্যালাস বলেন, এটা পরিষ্কার যে মুক্ত বিশ্বের একজন নতুন নেতা প্রয়োজন। এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি বলেন, ইউক্রেনই ইউরোপ। আমরা ইউক্রেনের পাশে আছি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আমরা ইউক্রেনকে সাহায্য করবো। জেলেনস্কির প্রশাংসা করেছেন ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট রবার্তা মেৎসোলা ও ইউরোপীয়ান কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট অ্যান্তোনিও কস্তা। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিকায়েল মার্টিন বলেন, ইউক্রেনের পাশে আছে আয়ারল্যান্ড। 

ইউক্রেন সফরের কথা স্বরণ করে তিনি বলেন, আমি যখন জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম তখন দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাকে পূর্ণ সমর্থনের বিষয়টি পুনরাবৃত্তি করেছি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিমোন হ্যারিস মনে করেন - যুদ্ধের জন্য ইউক্রেন দায়ী নয়। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউক্রেনের পাশে থাকবে কানাডা। এক্সে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, রাশিয়া অন্যায়ভাবে ইউক্রেনে আক্রমণ করেছে। তিন বছর ধরে ইউক্রেনীয়রা সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য তাদের যে লড়াই তা আমাদের সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গহর স্টোরে হোয়াইট হাউসের ঘটনাকে হৃদয়বিদারক বলে নিন্দা করেছেন। ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লাক রাসমুসেন সাম্প্রতিক ঘটনাকে কিয়েভের জন্য বিপত্তি বলে মন্তব্য করেছেন। 

সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন এক্সে বলেন, ইউক্রেনের পাশে আছে সুইডেন। তিনি আরো বলেন, ইউক্রেন শুধু স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে না বরং সমগ্র ইউরোপের জন্য লড়াই করছে। ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পিটার অরফান ইউক্রেনের প্রতি ফিনল্যান্ডের প্রতিশ্রুতির বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন। পোলান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এক্সে এক পোস্টে বলেন, প্রিয় ইউক্রেনীয় বন্ধু আপনারা একা নন। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইউক্রেনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। এদিকে পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টিনেগ্রো বলেছেন- ইউক্রেন সবসময় পর্তুগালের ওপর নির্ভর করতে পারে। তবে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান হলেন ওইসব ইউরোপীয়দের মধ্যে অন্যতম, যিনি ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। জেলেনস্কিকে সমর্থন দিয়ে লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন- ইউক্রেন, তুমি কখনোই একা না। লাতভিয়ার প্রধানমন্ত্রী এভিকা সিলিনা ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়ার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। চেক রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট পিটার পল এক্সে বলেন, আমরা ইউক্রেনের পাশে আছি। তিনি আরো বলেন, ইউরোপের জন্য এটি প্রচেষ্টা জোরদার করার সময়। মলদোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্ডু এক্সে বলেন, সত্য খুবই সাধারণ। রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন চালিয়েছে। রাশিয়া আক্রমণকারী। ইউক্রেন তার স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য লড়ছে। আমরা ইউক্রেনের পাশে আছি। 

লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী লুক ফ্রিডেন তার দেশের ইউক্রেনকে সমর্থন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রোমানিয়ার অন্তবর্তী প্রেসিডেন্ট ইলি বোলোজান ইউরোপীয়ানদের নিরাপত্তায় ইউক্রেনের গুরুত্বের বিষয়ে জোর দিয়েছেন। এছাড়া তিনি ইউক্রেনকে সমর্থনের বিষয়েও মত দিয়েছেন। অস্ট্রিয়ার তত্ত্বাবধায়ক চ্যান্সেলর আলেকজ্যান্ডার শ্যালেনবার্গ ইউক্রেনকে সমর্থনের বিষয়টি পুুনর্ব্যক্ত করেছেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাশিয়াকে আগ্রাসী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল- যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ভিত্তিতে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে জোর তাগিদ দিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ওভাল অফিস সত্যকে বদলে দিয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়া পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন চালিয়েছে। এটা জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন।