![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/f8cb47418a89bc076ef56e7d2e2a76ef.png)
চতুর্থ বছরে পা দিতে যাওয়া ইউক্রেন সংকট সমাধানে কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন?—এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তার মতে, এই সংকট নিরসনে সাহায্য করতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মিত্র চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।এ নিয়ে বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পুরো বিষয়টি তুলে ধরেছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন। প্রতিবেদনটি যুগান্তর পাঠকদের জন্য আলোকপাত করা হলো-
ট্রাম্পের আশা
চলতি বছরের শুরুর দিকে (জানুয়ারিতে) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি, চীন আমাদের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে সহায়তা করবে…। তাদের এ বিষয়ে ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে এবং আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করব’।ট্রাম্প সে সময় দাবি করেন, ক্ষমতা গ্রহণের কয়েকদিন আগেই তিনি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ফোনে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখে বার্ষিক নিরাপত্তা সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের উপস্থিতিতে বিষয়টি আবার আলোচনায় আসতে পারে।তবে সম্প্রতি চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি করে ট্রাম্প কি এই উদ্যোগকে জটিল করে ফেলেছেন? মার্কিন প্রেসিডেন্ট চলতি মাসেই চীনা আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের ইস্যুটি হতে পারে বিরল এক ক্ষেত্র, যেখানে চীন-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
চীনের অবস্থান
চীন বরাবরই নিজেকে ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তি স্থাপনকারী হিসেবে দেখাতে চেয়েছে। চীনা কর্তৃপক্ষ একটি নিজস্ব শান্তি পরিকল্পনাও উপস্থাপন করেছে, যদিও সেটি বেশ অস্পষ্ট।তবে পশ্চিমা বিশ্ব বরাবরই চীনের এই উদ্যোগকে সন্দেহের চোখে দেখেছে। কারণ বেইজিং দৃঢ়ভাবে মস্কোর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। যা চীনের জন্য একটি কঠিন সমীকরণ। কেননা, চীন একদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন করতে পারে। অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করা বেইজিংয়ের জন্য কৌশলগতভাবে ক্ষতিকর হতে পারে।
চীনের জন্য ঝুঁকি এবং লাভ
চীনা বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, শি জিনপিং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ঝুঁকিতে ফেলতে চাইবেন না। কারণ এটি চীনের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।চীন একদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়। অন্যদিকে তাদের লক্ষ্য বিশ্ব ব্যবস্থাকে নিজের সুবিধামতো পুনর্গঠন করা।নিউ ইয়র্কের স্টিমসন সেন্টারের চীন-বিষয়ক পরিচালক ইউন সান বলেন, ‘ট্রাম্প যদি চীনের সহযোগিতাকে মার্কিন-চীন সম্পর্কের উন্নতির প্রধান শর্ত হিসেবে মূল্যায়ন করেন, তাহলে বেইজিং এতে আগ্রহী হতে পারে। তবে তারা অবশ্যই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইবে না’।
ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ ও মিউনিখ সম্মেলন
এদিকে শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় আলোচনা হবে। সেখানে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল নিয়ে উপস্থিত থাকবেন।এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বর্তমানে ইউরোপ ও ইউক্রেন সফর করছেন। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ইউক্রেন-রাশিয়া বিষয়ে ট্রাম্পের দূত জেনারেল কিথ কেলোগ ইউরোপে মিত্রদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত।তার ওপর মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টও কিয়েভ সফরে যাচ্ছেন। এই সফরে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের বিষয়েও আলোচনা হবে।
ইউক্রেনের জন্য সহযোগিতা: বিনিময়ে সম্পদ?
ট্রাম্প সম্প্রতি ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমরা ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছি। তাহলে তারা আমাদের খনিজ সম্পদের সুযোগ দেবে না কেন?’এ সময় তিনি ‘ইউক্রেন হয়তো একদিন রাশিয়ার অংশ হয়ে যাবে’ বলেও মন্তব্য করেন। আর তার এই মন্তব্যগুলো ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
চীনের ভূমিকা: সত্যিই কি শান্তি চায় দেশটি?
চীন দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের নিরপেক্ষ বলে দাবি করলেও তারা রাশিয়ার বড় অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সহায়ক হয়ে উঠেছে। চীন রাশিয়াকে সামরিক খাতে ব্যবহারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ রপ্তানি করছে। যা নিয়ে পশ্চিমারা বলছে, চীন রাশিয়ার যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার শক্তি বৃদ্ধি করছে।এছাড়া বেইজিং কখনোই রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি, বরং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়িয়েছে।চীন যদি রাশিয়ার ওপর সত্যিই চাপ প্রয়োগ করতে চায়, তাহলে তারা রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে চাপে ফেলতে পারত। কিন্তু বেইজিং এটা করবে না, কারণ তারা রাশিয়াকে দুর্বল অবস্থায় দেখতে চায় না।
শি জিনপিং কি ট্রাম্পের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় আগ্রহী?
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ট্রাম্পের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় আগ্রহী কিনা, সেটি নির্ভর করবে ট্রাম্পের শর্তগুলোর ওপর। এর আগে বাইডেন প্রশাসন চীনকে পুতিনের ওপর চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। এখন ট্রাম্প তার নিজস্ব উপায়ে চীনকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন।তবে বেইজিং এই (ইউক্রেন) যুদ্ধকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে—একটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার পতন ত্বরান্বিত করার জন্য।এ বিষয়ে কানার্জি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর সিনিয়র ফেলো তং ঝাও বলেন, ‘চীন এখন এমন একটি বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়, যেখানে আমেরিকার প্রভাব কম থাকবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো চীনের পক্ষে থাকবে।
শান্তি, নাকি রাজনৈতিক স্বার্থ?
চলমান যুদ্ধ ও ধ্বংসযজ্ঞ থামাতে চীন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি হতে পারে, যা এই তিন দেশের জন্য লাভজনক হতে পারে। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘শান্তি চুক্তির পরও যদি রাশিয়া তার দখল করা অঞ্চলগুলো ধরে রাখে, তাহলে তা আদতে যুদ্ধের সমাপ্তি নয়, বরং একটি সাময়িক বিরতি হবে’।
পুরো আলোচনার মূল বিষয়:
✅ ট্রাম্প চান চীন ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় ভূমিকা নিক।
✅ চীন রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইবে না।
✅ ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনকে সহায়তার বিনিময়ে খনিজ সম্পদ চায়।
✅ চীন যুদ্ধকে আমেরিকার মনোযোগ এশিয়া থেকে সরানোর সুযোগ হিসেবে দেখছে।
✅ ইউক্রেন যুদ্ধ কি সত্যিই শেষ হবে, নাকি শুধু বিরতি আসবে?
এখন, পাঠক হিসেবে আপনার মতামত কী? চীন কি সত্যিই ইউক্রেনে শান্তি আনতে আগ্রহী, নাকি এটি কেবলই একটি কৌশল? আর ট্রাম্প-ই বা কি করতে চান?