তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার টঙ্গী ক্যাম্পাসে চলমান ছাত্র-শিক্ষক আন্দোলনের জেরে একইদিনে পরপর দুই ভিন্ন নোটিশ জারি হওয়ায় অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ ও বিভ্রান্তি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে আলোচনা–সমালোচনা।
গত মঙ্গলবার চার দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে শিক্ষক কর্তৃক আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষকদের হেনস্তার ঘটনারও অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে প্রায় সাত ঘণ্টা শিক্ষকরা অবরুদ্ধ থাকেন ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে।
শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল—“যৌক্তিক আন্দোলনে কেন মারধর? যারা মারধর করেছে, তাদের বহিষ্কার করতে হবে। দাবি গ্রহণযোগ্য বিবেচনায় মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি তাৎক্ষণিকভাবে তিন শিক্ষককে বহিষ্কার করেন।
পরে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরে গেলেও শিক্ষকরা বসে পড়েন পাল্টা আন্দোলনে। তাদের অভিযোগ— আন্দোলনকারীরা মাদ্রাসার সম্পদ নষ্ট করেছে, অসংখ্য জানালার গ্লাস ভেঙেছে এবং শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। বহিষ্কারাদেশ ফিরিয়ে নিতে হবে। একপর্যায়ে শিক্ষকরা বাসায় ফিরলেও পরের দিন কর্মবিরতি পালন করেন।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) শিক্ষকদের বহিষ্কারাদেশ বাতিলের দাবিতে আলিম দ্বিতীয় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে নামেন। গণসাক্ষর নেন শিক্ষকদের বহিষ্কারাদেশ বাতিলের। পরে শিক্ষক প্রতিনিধি দল তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন।
তবে বিপত্তি ঘটে একদিনে দুই নোটিশে তীব্র বিভ্রান্তি ও সমালোচনা। বুধবার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত প্রথম নোটিশে বলা হয়, গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শিশু থেকে কামিল পর্যায়ের সকল পাঠদান কার্যক্রম ও আলিম ২য় বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হলো।
এই ঘোষণার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে— “দেশসেরা মাদ্রাসা হঠাৎ বন্ধ কেন?”
কিন্তু একই দিনে দ্বিতীয় একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়— অনিবার্য কারণে শিশু থেকে নবম শ্রেণির সকল পরীক্ষা ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে নির্ধারিত রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।”
একদিনে পরপর দুই নোটিশে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা পড়েছেন চরম বিভ্রান্তিতে। ফেসবুকে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। শিক্ষক ও ছাত্রসংসদের বিভিন্ন নেতা-কর্মীর পাল্টা-পাল্টি মন্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
কি ঘটছে কিংবা সংকট কিভাবে কেটে উঠবে প্রশাসন সেটি দেখার প্রহর গুনতেছে শিক্ষার্থীরা।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এবং বিভ্রান্তি দূর করতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড.হিফজুর রহমান তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, বিশেষ কিছু দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকায় আমার উদ্ধৃতি দিয়ে মাদ্রাসা বন্ধের বিষয়ে এবং ১৮-১১-২৫ তারিখে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে অসত্য তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সংশ্লিষ্ট সকলকে এ বিষয়ে সতর্কতার সহিত সংবাদ পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করা হলো। অযথা কোনো সংবাদ পরিবেশন করে মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুন্ন করা অথবা ছাত্রদের শান্ত পরিবেশ কে অশান্ত করা কোনভাবেই কাম্য নয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।