২০১৪ সালে কোলন ক্যানসারে মারা যান তার বাবা, তারপর সিদ্ধান্ত নেন মেডিকেলে পড়বেন, চিকিৎসক হবেন। চিকিৎসক হওয়ার প্রথম ধাপে পা দিয়ে প্রয়াত বাবাকে স্মরণ করলেন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় দ্বিতীয়স্থান অধিকারী মো. সানজিদ অপূর্ব বিন সিরাজ।
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হয়েছেন সানজিদ। সানজিদের টেস্ট স্কোর ৯০ দশমিক ৫ এবং তার মেরিট স্কোর ১৯০ দশমিক ৫।
জানা গেছে, সানজিদের বাবার মৃত্যু হয় কোলন ক্যানসারে। এই মৃত্যু তাকে নাড়া দিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘কলেজে ওঠার পর সিদ্ধান্ত নিলাম চিকিৎসক হব। ক্যানসার নিয়ে কাজ করব। সেই স্বপ্ন পূরণে এক ধাপ এগোলাম মাত্র। এখন আসল যুদ্ধ শুরু হবে।’
সানজিদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষার আগে গড়ে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা ঘুমাতেন। বাকি সময় পড়ার মধ্যে ডুবে থাকতাম। ইংরেজি পড়তে গিয়ে বেগ পেতে হতো। ভয় ছিল, ইংরেজিতে নম্বর তুলতে পারব না। শেষ পর্যন্ত ভালো ফল করাই সবাই খুশি।’
সানজিদের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের গারাংগিয়া গ্রামে। তারা তিন ভাই। মা খাইরুন্নেছা মোস্তারীসহ থাকেন চট্টগ্রাম নগরের মোহাম্মদপুর এলাকার ভাড়া বাসায়। তার বাবা ছিলেন কলেজশিক্ষক।
রবিবার (২০ জানুয়ারি) ভর্তি পরীক্ষার ফল পাওয়ার পর সানজিদের ভাইয়েরা আনন্দে মেতে ওঠেন। তবে মায়ের চোখ ভিজে গিয়েছিল। সানজিদ বলেন, ‘ফলাফল জানানোর পর কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান আমার দুই ভাই। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন।’
২০২২ সালে চট্টগ্রাম নগরের সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেন সানজিদ। জিপিএ-৫ নিয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। ২০২৪ সালে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। সানজিদ বলেন, ‘কলেজে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। পত্রপত্রিকা পড়ার অভ্যাস রয়েছে। পত্রিকায় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। এরপর ভর্তি পরীক্ষার জন্য নাওয়া–খাওয়া ভুলে শুধু পড়েছি।’
সব সময় জটিল বিষয় নিয়ে পড়তে পছন্দ করেন সানজিদ। জানালেন, কলেজের প্রথম বর্ষ থেকেই বিজ্ঞানের বিষয়গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন। তবে ইংরেজি নিয়ে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। ভর্তি পরীক্ষার আগে সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার জন্য সানজিদের পরামর্শ হলো, কলেজের প্রথম বর্ষ থেকেই বিজ্ঞানের বিষয়গুলো আয়ত্তে আনতে হবে। পাশাপাশি ইংরেজির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।