
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। বুধবার (২২ অক্টোবর) রাত সাড়ে বারটার দিকে ক্যাম্পাসে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ সময় শিক্ষার্থী শহীদ তারেক হুদা হলের পেছনে ও ড. কুদরত ই খুদা হলের সামনের অংশ জড়ো হয়ে চেঁচামেচি করতে থাকেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রদলপন্থী দুইটি দলের মধ্যবর্তী অন্তঃকোন্দলের জেরেই এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যার জের ধরে তাদের মধ্যে মারামারি হয় ও এতে চুয়েটের উক্ত ব্যাচের পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সিয়াম ও পুরকৌশল বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাওয়াদুল করিম জামিসহ কয়েকজন আহত হন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষর্থী মো. সিয়াম বলেন, ‘আমি শহীদ তারেক হুদা হলের ক্যান্টিনে বসে খাবার খাচ্ছিলাম সে সময় আমার বন্ধু আবির (হোসাইন শহীদ আবির, মেকাট্রনিক্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ) আমাকে কল দেয়। তাই আমি তার সাথে কথা বলতে যাই। সেখানে তারা ৭-৮ জন বিভিন্ন ইস্যুতে আমাকে প্রশ্ন করা শুরু করে ও একপর্যায়ে আবির আমার গায়ে হাত তুলে। আমি আক্ষেপ নিয়ে সেখান থেকে চলে আসা শুরু করি। তখন আমার এক বন্ধু আমাকে কল দিলে আমি তাকে সামনে আগাতে বলি।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু ঠিক ওই সময় আবিরসহ ওরা আমার দিকে ছুটে আসে ও আমাকে পেছন থেকে লাথি মারে। আমি মাটিতে পড়ে যাই। তখন ২৩ ব্যাচের জামি আমাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসে। তখন তারা ২২ ব্যাচের ৪ জন মিলে জামিকে মারধর করে। পাশাপাশি ওরা ২১ ব্যাচের ভাইদের গায়েও হাত তুলে। তৎক্ষনাৎ হলের অনেক শিক্ষার্থী এগিয়ে আসলে তারা দৌড়ে অন্য হলে (ড. কুদরত ই খুদা) প্রবেশ করে।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত চুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমরা বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। মো. সিয়াম তখন হঠাৎ রাগারাগি করে চলে গেলে ওদের হল (শহীদ তারেক হুদা) থেকে অনেকজন শিক্ষার্থী আমাদের দিকে আসা শুরু করে। তখন আমরা কোনোভাবে সেখান থেকে ড. কুদরত ই খুদা হলে প্রবেশ করি।’
শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, সিয়াম ও আবির একসময় ভালো বন্ধু হলেও, ছাত্রদলের দুই গ্রুপে যুক্ত থাকায় তাদের মধ্যে কোন্দল দেখা দেয়। সিয়াম অভিযোগ করেন, ছাত্রদলের কাজে তারা বেশি সক্রিয় থাকায় অন্য গ্রুপ সুবিধা করতে পারছেনা। এ ক্ষোভের কারণেই তাদের উপর হামলা হয়। এ হামলার পেছনে চুয়েট ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি ওয়াসিফ রাশেদের হাত থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে চুয়েট শাখা ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি ওয়াসিফ রাশেদ বলেন, এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট একটা কথা। এ ঘটনার সাথে ছাত্রদলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দুইবন্ধুর কথা কাটাকাটি থেকে এ ঘটনার সূত্রপাত। ছাত্রদলের মধ্যে দলীয়করণ হওয়ার এখনো কোনো সুযোগ নেই।
উক্ত ঘটনার ব্যাপারে চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মাসুম রানা বলেন, আমরা সঠিক সময়ে গিয়ে পরিস্থিতি ঠান্ডা করেছি। দুই পক্ষের কথা শুনেচ্ছি। এখন তদন্ত ও প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব ও দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করব।
উল্লেখ্য, চুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও অভ্যন্তরে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক সক্রিয়তা চলমান বলে অভিযোগ করেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা৷ তারা আরো মনে করেন, ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর না হলে এমন ঘটনা সামনে আরো ঘটতে পারে।