Image description

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে ‘নির্বাচনী বিতর্ক’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে আয়োজিত বিতর্কে সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থীরা অংশ নেন।

রাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী বিতর্কের উদ্বোধন করেন। রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং ফোরামের (আরইউডিএফ) সহযোগিতায় এ বিতর্কের আয়োজন করে রাকসু নির্বাচন কমিশন।

বিতর্কের প্রথম সেশনে রাকসুর ৯ জন ভিপি পদপ্রার্থী অংশ নেন। চারটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয় পর্বের প্রথম ধাপে প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে কী করবেন, তা উপস্থাপন করেন। দ্বিতীয় ধাপে তিনটি নির্ধারিত প্রশ্নের উত্তর দেন, তৃতীয় ধাপে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্ব হয় এবং সবশেষে কনক্লুশন পর্বের মাধ্যমে সেশন শেষ হয়। পরবর্তী সেশনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থীদের মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।

ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, আমাদের প্যানেলটি একটি ইনক্লুসিভ প্যানেল। চাইলে কেবল ছাত্রশিবিরের সদস্যদের নিয়েই প্যানেল গঠন করতে পারতাম; কিন্তু আমরা তা করিনি। বিভিন্ন মতাদর্শের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করেই প্যানেল দিয়েছি। আমাদের ইশতেহার ১২ মাসের হলেও ইনশাআল্লাহ ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যেই অধিকাংশ লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ-এর ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, রাকসুকে আমরা গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে দেখি। জুলাই আন্দোলনেও আমরা ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলাম। নির্বাচিত হলে আবাসন ও খাদ্যসংকট নিরসন, সাইবার বুলিং প্রতিরোধ সেল গঠন এবং রাকসুকে একটি ছায়া সংগঠন হিসেবে সক্রিয় রাখার উদ্যোগ নেব।

রাকসুর একমাত্র নারী ভিপি প্রার্থী তাসিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সচেতন শিক্ষার্থীদের জায়গা। তাই আমরা মুখরোচক ইশতেহার দিইনি; বরং বাস্তবায়নযোগ্য ১২টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এর মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের বাস্তব সমস্যার সমাধান। নির্বাচিত হলে আবাসন সংকট দূরীকরণ, ভর্তি নীতিমালা সহজীকরণ, শিক্ষকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং উপাচার্য নির্বাচন পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেব।

‘রাকসু ফর র‍্যাডিক্যাল চেইঞ্জ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী মারুফ বলেন, রাকসুর মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক উৎকর্ষতা অর্জন সম্ভব। এজন্য দরকার দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার পরিবেশ। প্রশাসনের জবাবদিহিতা ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একাডেমিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার মাধ্যমে রাকসুকে প্রকৃত অর্থে সক্রিয় করা হবে।

স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী নোমান ইমতিয়াজ বলেন, রাকসু একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হওয়া উচিত। আমার প্রতিশ্রুতি একটাই—শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক প্রভাব নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ হতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অনুকূল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আবাসন সংকট সমাধানই হবে প্রথম কাজ।

ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি ও ভিপি প্রার্থী মাসুদ কিবরিয়া বলেন, প্রতিটি নির্বাচনই রাজনৈতিক। তবে আমি চাই শিক্ষার্থীরা বুঝুক তাদের অধিকার কী এবং কীভাবে তা প্রতিষ্ঠা করা যায়। নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার ও ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নে রাকসুকে কাজে লাগাব।

ভিপি প্রার্থী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, রাকসুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা আমার প্রথম দাবি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, আবাসন, লাইব্রেরি সংস্কার ও মানসম্মত গবেষণা পরিবেশ তৈরিতে রাকসুকে সক্রিয় করব।

মাহবুব আলম বলেন, নির্বাচিত হলে আবাসন সংকট নিরসনই হবে আমার প্রথম কাজ। আমরা ১৫ বছরের একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করব, যাতে খাদ্যের মানোন্নয়ন, চিকিৎসা সুবিধা ও বিভাগভিত্তিক সমস্যা সমাধান অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রতিটি বিভাগে একজন প্রতিনিধি রেখে রাকসুর দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরুল্লাহ নূর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক ও প্রাইভেট পলিসি তৈরি করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের মৌলিক সমস্যা সমাধান হয়। মাদক প্রতিরোধে অ্যান্টি-ড্রাগ ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম চালু করব এবং দরিদ্র-মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি তহবিল গঠন করব। রাকসুকে শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের সঙ্গে যুক্ত করে একটি সামাজিক দায়িত্বশীল প্ল্যাটফর্মে পরিণত করতে চাই।

রাজনৈতিক সচেতন ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি, ফ্যাসিবাদী নীতির বাইরে এসে একাডেমিক উৎকর্ষতা অর্জন, শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাকসু নির্বাচনের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থীরা।