
জেলায় জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২৩ সালে এক বছরেই অনুমোদন দেওয়া হয় ৮ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের। অনুমোদন দেওয়া হলেও দুই বছর পরে এসেও কোনো ধরনের কার্যক্রমই শুরু করতে পারেনি ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) ‘৫০তম বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২৩’-এ এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে। আইন পাসের পর সরকার সরকারি গেজেটে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়; যা আইনটি কার্যকর হওয়ার তারিখ ও নিয়মাবলী নির্দেশ করে। এরপর এ আইনের অধীনেই বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারিত হয়। এরপর ভিসি নিয়োগ হলে বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ার পথ অনেকটাই এগিয়ে যায়।
জানা গেছে, দেশে সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উত্থানপর্বে সবচেয়ে বেশি সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পায় বিগত ১৫ বছরে। ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত দেশে এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৩২টি। বর্তমানে দেশে অনুমোদনপ্রাপ্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৬২টি। এছাড়াও দেশের প্রতিটি জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনায় সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে ৪৪ জেলায়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৩ সালে অনুমোদনপ্রাপ্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ (নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়); মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় মেহেরপুর; বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়; লক্ষ্মীপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়নগঞ্জ।
ভর্তি কার্যক্রমে যেতে পারে দুই বিশ্ববিদ্যালয়
আসন্ন ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রমে যেতে পারে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এটা নিয়েও আমরা অগ্রসর হচ্ছি। হয়তো তাদের দুটো করে সাবজেক্ট থাকবে। প্রয়োজন হলে অবশ্যই তারা গুচ্ছে আসবে।’
ভিসি নিয়োগ হয়েছে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের
গত বছরের ২ ডিসেম্বর মেহেরপুরের মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দিন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২৩-এর ১০(১) ধারা অনুযায়ী ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দিনকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পাশ হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। এরপরে আর কোনো অগ্রগতি নেই। দীর্ঘসূত্রতায় আটকে আছে শরীয়তপুরের মানুষের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। আর কোনো কালক্ষেপণ নয়, দ্রুত শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন জেলার বিশিষ্টজনেরা। গত ৩০ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন ফোরাম’ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ দাবি জানান।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৬ জানুয়ারি দেশের ৫৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষিত নারায়ণগঞ্জের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এর নাম পরিবর্তন করে নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। এর আগে, ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভায় বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুমোদন পায়, যা ২ নভেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয়। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সরকার এখনো জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এদিকে ২০২৩ সালের ১৯ জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয় লক্ষ্মীপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে পরবর্তীতে আর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
এছাড়াও ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ দুইটি প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমও এখনো শুরু হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের বিষয়ে ইউজিসি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আইন পাস হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এখনো কোনো কাজ শুরু করেনি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার আগ পর্যন্ত এগুলো নিয়ে ইউজিসি কোনো কাজ করবে না। বর্তমানে এটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছে।