Image description

বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক তামান্না বেগম বলেছেন, রাষ্ট্র যেন শিক্ষকদের কিছু দিতে গেলেই দরিদ্র হয়ে পড়ে। এমন ধারণা বদলানো দরকার। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও শিক্ষকরা এখনো প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। তবু সীমিত সুযোগ ও সামর্থ্য নিয়ে তারা জাতি গঠনের কাজ করে যাচ্ছেন নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের সঙ্গে।

সোমবার (৬ অক্টোবর) জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০২৫ ও সরকারি সাত কলেজ শিক্ষা ক্যাডারের স্বার্থ সংরক্ষণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বদরুন্নেসা কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, আমার রক্তে শিক্ষকতা মিশে আছে। কারণ, আমার বাবা ছিলেন একজন শিক্ষক। ১৯৯৪ সালে ঘোষণার পর থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছরের দিবসটি আমাদের কাছে শুধু আনন্দের নয়, বরং এক ধরনের প্রতিবাদেরও প্রতীক।

তামান্না বেগম বলেন, আমাদের সমাজে এখনো মনে করা হয় শিক্ষক মানেই হাঁটু পর্যন্ত ব্যাগ ঝুলিয়ে, মাথায় ছাতা নিয়ে হাঁটছেন এমন একজন মানুষ। অথচ শিক্ষকরা জাতি গঠনের মূল কারিগর। শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা না হলে শিক্ষা কখনোই প্রকৃত অর্থে মানবিক হবে না। স্বাধীনতার পর এত বছরেও শিক্ষকরা কি তাদের প্রাপ্য থেকে? আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। রাষ্ট্র যেন শিক্ষকদের কিছু দিতে গিয়ে দরিদ্র হয়ে পড়ে, এমন এক চিত্র এখনো বিদ্যমান।

তিনি বলেন, যারা বিসিএসের মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন, তাদের অনেকে ১২ বছরেও পদোন্নতি পান না। আমরা রাষ্ট্রের কাঠামোয় ‘ক্যাডার’ হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও মর্যাদা বা সুযোগের দিক থেকে বঞ্চিত। শিক্ষকতা বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি অবমূল্যায়িত পেশা। সীমিত সম্মান, সীমিত বেতন ও সুযোগের মধ্যেও শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেখানে দুই-তিনজন শিক্ষক আছেন, সেখানেও তারা শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

অধ্যক্ষ তামান্না বেগম বলেন, আমি ২০১৭ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছি। কিন্তু আজও আমাদের অবস্থান একই পর্যায়ে। মামলা, চিঠি-পত্র– সব করেছি; তবু কোনো অগ্রগতি হয়নি। অবসরের (পিআরএল) সময় শিক্ষকরা অর্ধেক বেতন পান– এই বিষয়টি অনেকেরই জানা নেই। ভেবেছিলাম জীবনের শেষ সময়টা শান্তিতে কাটাব, কিন্তু দেখা গেল সেই আনন্দটুকুও আমাদের ভাগ্যে নেই। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু যদি সেই মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে না দেওয়া হয়, তাহলে আমরা কখনোই সমৃদ্ধ জাতি হতে পারব না।

সভার সঞ্চালনা করেন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ড. মো. মাসুদ রানা খান। আর সভাপতিত্ব করেন আহ্বায়ক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল। এসময় দেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, অধ্যাপকসহ শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।