
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের কর্মী সানজিদ সরকার (স্মরণ) এবং তার বন্ধু রাব্বী, রায়হানসহ আরও ছয়জনের বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীকে ক্লাসের কথা বলে ডেকে এনে র্যাগিং, মানসিক হয়রানি ও অপমান করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত সবাই লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী। তবে অভিযুক্ত স্মরণসহ অন্যান্যরা ছাত্রীর অভিযোগকে মিথ্যা বলে পাল্টা অভিযোগ করেন।
গত ১০ সেপ্টেম্বর (বুধবার) ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী বিভাগীয় প্রধান বরাবর দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করেন, ক্লাসের কথা বলে তাকে ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রেখে তার ফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং ব্যক্তিগত বিষয় টেনে এনে অপমান ও মানসিক হয়রানি করা হয়। তিনি বলেন, ‘এর আগেও র্যাগিংয়ের ভয়ে আমি ক্যাম্পাস ছাড়তে চেয়েছিলাম।‘
অভিযোগের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মী এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের ৮/১০ জন শিক্ষার্থী মিলে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি দৈনিক যুগান্তরের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেনকে ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ করে হুমকি-ধামকি প্রদান করেন।
পরে খবর জানতে পেরে ঘটনাস্থলে কর্মরত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য সাংবাদিকরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টর ও উপাচার্য উপস্থিত হলে বিষয়টির সমাধান হয়। এ সময় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন উপস্থিত সাংবাদিক ও ছাত্র উপদেষ্টাকে কটাক্ষ করে কথা বলেন।
ঘটনার কিছুক্ষণ পর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী স্মরণকে শুভকামনা জানান আল আমিন। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘স্মরণ শুধু ছাত্রদলের একজন কর্মী নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। শিক্ষার্থীদের জন্য লড়াই করে অল্প সময়ে সে ব্যাচের বন্ধুমহল এবং জুনিয়রদের মধ্যে তার স্থান করে নিয়েছে। জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাই। নোংরামি বন্ধ হোক। শুভ কামনা স্মরণ।‘
অপরদিকে ১৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত স্মরণসহ আরও কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় প্রধান বরাবর পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন। তাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, তারা ওই নারী শিক্ষার্থীকে মাত্র ত্রিশ মিনিট মাঠে ডেকেছিলেন এবং মুক্ত আলোচনা করেছেন। পরবর্তীতে সন্ধ্যা সাতটায় তাকে মেসে পৌঁছে দিয়েছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তও দাবি করেন তারা।
এ বিষয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তাদের ডেকেছিলাম। তখন তারা ওই মেয়ের নামে পাল্টা অভিযোগ তোলে। এ বিষয়টা আমরা প্রশাসন বরাবর পাঠাতে চাইছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষার্থী ভেবে উপাচার্য তখন বিষয়টাকে বিভাগের মধ্যে সমাধান করতে বলেন। যেহেতু ২পক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন তাই আমাদের বিষয়টা তদন্ত করে বের করা দরকার।‘
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘প্রশাসন বরাবর অভিযোগটা এখনো আসেনি।বিষয়টি আমি শুনেছি। ঐ মেয়েটা বিভাগীয় প্রধান বরাবর অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে একটি রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দেওয়া হবে।‘
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. শওকত আলী বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করব। যে অভিযুক্ত প্রমাণিত হবে, তাকে অবশ্যই বহিষ্কার করা হবে। অভিযুক্তকে এক সেমিস্টার হলেও বহিষ্কার করা হবে।‘