
২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় ১৭তম দিনে রাষ্ট্রপক্ষের ৪৬তম সাক্ষী মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে এই সাক্ষ্যগ্রহণের জেরা শেষ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আদালত এ পর্যায়ে বিরতিতে রয়েছেন। দুপুরের বিরতির পরে শেখ হাসিনারসহ তিন জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বেলা দেড়টার দিকে ট্রাইবুনালে উপস্থিত হয়েছেন তিনি।
এর আগে মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের ৪৬তম সাক্ষী হিসেবে এই মামলায় দ্বিতীয় দিনের জবানবন্দি দেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তারপর তাকে জেরা শুরু করে আজকে শেষ করেছেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে (স্টেট ডিফেন্স) নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
এ নিয়ে শেখ হাসিনার মামলায় ৪৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে নাহিদের জবানবন্দির মধ্য দিয়ে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) ছাড়া সাক্ষ্যগ্রহণ হতে পারে।
মাহমুদুর রহমানের জবানবন্দির জেরায় ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ কীভাবে পরিচালিত হতো, গত ১৭ বছরে ফ্যাসিবাদের উত্থান, বিকাশ ও পরিণতির পূর্ণ বর্ণনা উঠে এসেছে। শেখ হাসিনা কীভাবে বিরোধী পক্ষকে দমন করে অবৈধ ক্ষমতায় টিকে ছিল তুলে ধরে হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছেন মাহমুদুর রহমান।
এর আগে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর প্রথম দিনের মতো জবানবন্দি দেন মামহমুদুর রহমান।
এর আগে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে এর আগে গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ১৫তম দিনে মামলার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ট্রাইব্যুনালে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা থাকলেও ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে সেদিন উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এর আগে, মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) ১৪তম দিনে ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের ৪৫তম সাক্ষী হিসেবে সিআইডি ঢাকার ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে কর্মরত সাব ইন্সপেক্টর মো. শাহেদ জোবায়ের লরেন্স তার জবানবন্দি পেশ করেন। সাক্ষ্যগ্রহণের নির্ধারিত দিনে সাবেক আইজিপি ও রাজসাক্ষী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
এর আগে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ১৩তম দিনে তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তারও আগে গত ২ সেপ্টেম্বর ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এ মামলার আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তার জেরা শেষ হয় ৪ সেপ্টেম্বর।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে দমনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত ৪৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
সাক্ষ্যগ্রহণের নির্ধারিত দিনে প্রতিদিনের মতো আজও সকালে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে। এই মামলায় গত ৩ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা অব্যাহত।