
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) মনোনয়নপত্র বিতরণের মধ্যে দিয়ে ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে নির্বাচনী আমেজ। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের মতো চাকসু নির্বাচনেও কয়েকটি প্যানেল হওয়ার আলোচনা শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। চাকসুতেও ছাত্রদল একক প্যানেল ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের একাধিক নেতা। অন্যদিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠনে তোড়জোড় শুরু করেছে ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ইসলামি ছাত্র আন্দোলনসহ অন্যরা।
নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে ৫০ এর কাছাকাছি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে। প্রথম দিনে প্যানেল হিসেবে মনোনয়ন নিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জোট প্যানেল ‘দ্রোহ পর্ষদ’। এছাড়া ‘চাকসু ফর র্যাপিড চেঞ্জ’ নামে প্যানেল ঘোষণার কথা জানিয়েছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের চবি শাখা সদস্য সচিব রোমান রহমান।
বাম সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে ভিন্ন একটি প্যানেল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। সবমিলিয়ে চাকসু নির্বাচনে আটটির বেশি প্যানেল হতে পারে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এবারের নির্বাচনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের বাইরেও এমফিল ও পিএইচডির শিক্ষার্থীরা প্রার্থী হতে পারবেন। আচরণবিধি অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া কিংবা নিতে আসতে পারবেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) মতো ওএমআর পদ্ধতিতেই ভোট দেবেন শিক্ষার্থীরা।
কোনো সংগঠন যদি প্রাপ্ত সম্মান দেখায়, তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনের কথা জানিয়ে রোমান রহমান বলেন, ‘আমরা দুটি বড় ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল ও শিবিরের সাথে কথা বলছি। তারা যদি আমাদের প্রাপ্ত সম্মান দেখায়, আমরা তাদের সঙ্গে নির্বাচনে যেতে রাজি আছি। তাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি নিজেরাও ইনক্লুসিভ প্যানেল গঠনের জন্য ক্যাম্পাসের আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রভাগের সৈনিকদের সঙ্গে কথা বলছি। আগামীকাল আমরা মনোনয়ন নেওয়ার চিন্তা করেছি।’
একক প্যানেল ঘোষণার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাকসুতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ছাত্রদলের প্রথম সারির এক নেতা বলেন, ‘বড় ছাত্র সংগঠন হওয়ায় আমাদের একক প্যানেল দিতে হয়। আর এখানে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী থাকেন, তাদের সংগঠন সম্মান করে। তাই অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চাকসুতেও একক প্যানেল ঘোষণা করা হবে। কেন্দ্রের নির্দেশনায় দ্রুতই আমরা প্যানেল ঘোষণা করব।’
ডাকসু ও জাকসুতে শিবিরের নিরঙ্কুশ জয় চাকসুতে প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডাকসু ও জাকসুতে শিবিরের একচেটিয়া জয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এটার প্রভাব চাকসুতে পড়বে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ চবির পরিবেশটা একটু ভিন্ন। তবে জাকসুতে স্বতন্ত্র ভিপির জয় একটি ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে, বিকল্পও সম্ভব।’
ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে প্রশাসনের অনিয়ম, কেন্দ্র দখল, প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছিল উল্লেখ করে ছাত্রদলের এ নেতা বলেন, ‘সে আশঙ্কা চাকসুতেও আছে। শিক্ষার্থীরা চায় খোলামেলা, শান্তিপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন, যেখানে সবার আস্থা থাকবে এবং প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।’
ডাকসু, জাকসু ও রাকসুর মতোই প্যানেল ঘোষণা করতে যাচ্ছেন জানিয়ে শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্যানেল গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্রুতই নাম ঘোষণা করা হবে। প্যানেলে জুলাই যোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, নারী শিক্ষার্থীরা থাকবেন।’
এদিকে নিজেদের প্যানেলের প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করেছে ইসলামি ছাত্র আন্দোলন। ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠন করছে জানিয়ে চবি শাখার সভাপতি ও চাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটি প্যানেল ঘোষণা করব। এখানে জুলাই যোদ্ধা, নারী, প্রতিবন্ধী সবাই অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
আগামীকাল প্যানেল ঘোষণা করতে পারেন জানিয়ে ইসলামী ছাত্র মজলিসের শাখা সভাপতি সাকিব মাহমুদ রুমি বলেন, ‘প্যানেল গঠনে ব্যস্ত সময় পার করছি। আমরা একটি ইনক্লুসিভ প্যানেল ঘোষণা করবো। এখানে প্রকৃত শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যারা হবেন, এমন কাউকে রাখা হবে।’
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ এখনও প্যানেল দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি জানিয়ে শাখার সদস্য সচিব আল মাসনূন বলেন, ‘আমরা প্যানেল দেব কিনা এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। আগামীকাল জানাতে পারব।’
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক মাহফুজুর রহমান ও সদ্য বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় সংগঠক রাশিদুল হক দিনারের নেতৃত্বে স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। জিএস পদপ্রার্থী রাশিদুল হক বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের সবাইকে নিয়ে আমরা একটি স্বতন্ত্র প্যানেল আগামীকাল ঘোষণা করব।’
এছাড়াও বাম সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে ভিন্ন একটি প্যানেল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। সবমিলিয়ে চাকসু নির্বাচনে আটটির বেশি প্যানেল হতে পারে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এবারের নির্বাচনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের বাইরেও এমফিল ও পিএইচডির শিক্ষার্থীরা প্রার্থী হতে পারবেন। আচরণবিধি অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া কিংবা নিতে আসতে পারবেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) মতো ওএমআর পদ্ধতিতেই ভোট দেবেন শিক্ষার্থীরা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। চাকসু নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখেছি। আজ দ্বিতীয় দিনে এ উচ্ছ্বাস আরও বেড়েছে। ধারণা করছি, আগামীকাল সবাই মনোনয়ন সংগ্রহ করবে। আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করব।’
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। ২৩ সেপ্টেম্বর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। ২৫ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে। ওএমআর পদ্ধতিতে হবে ভোটগ্রহণ। পরে এলইডি স্ক্রিনে দেখানো হবে ফলাফল।’