
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত এ তালিকায় কেন্দ্রীয় সংসদের ২৩ এবং সিনেটের পাঁচ পদের বিপরীতে লড়ছেন ৩২০ জন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী আছেন। ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে এত ছাত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে সচেতন মহলের ধারণা।
আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের ভোটের জন্য রাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে ৩৪ ও সিনেটে ৭ নারী শিক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আবার কেউ লড়ছেন ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলে। এর মধ্যে ভিপি পদে একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাসিন খান (২০২০-২১)। পাশাপাশি তিনি সিনেট সদস্যপদেও লড়ছেন। জিএস পদে মাঠে আছেন পরমা পারমিতা (২০১৮-১৯), নুসরাত জাহান নুপুর (২০১৯-২০), আছিয়া খাতুন (২০১৯-২০) এবং আফরিন জাহান (২০১৮-১৯)।
এজিএস পদে আছেন জান্নাত আরা নওশিন (২০২১-২২) এবং ছাত্রদল সমর্থিত জাহিন বিশ্বাস এষা (২০২০-২১), ক্রীড়া সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ছাত্রদল সমর্থিত নার্গিস খাতুন (২০১৯-২০)।
সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আছেন সারাফ আনজুম বিভা (২০২১-২২), মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আবিদা আক্তার লাবনী (২০২১-২২), ছাত্রদল মনোনীত স্বপ্না আক্তার (২০১৮-১৯), শিবির সমর্থিত সাইয়িদা হাফছা (২০১৯-২০), সুমাইয়া মুস্তারিন মুন (২০১৯-২০), হেমা আক্তার ইভা (২০১৮-১৯), সামসাদ জাহান (২০১৯-২০) এবং নিশা আক্তার (২০২০-২১)।
সহকারী সম্পাদক (মহিলাবিষয়ক) পদে আছেন হাসনাহেনা বর্ষা (২০২০-২১), নুসরাত জাহান অহনা (২০২২-২৩), নাদিয়া হক (২০২২-২৩), জান্নাতুল ফেরদৌসি তৃষা জান্নাত (২০২০-২১), শ্রেয়সী রায় (২০২১-২২), শিবির মনোনীত সামিয়া জাহান (২০২০-২১), ফারহিন শবনম শায়ন্তি (২০২৪-২৫), নূসরাত আফরিন (২০১৯-২০) এবং ছাত্রদল সমর্থিত নুসরাত ঈষিতা (২০১৯-২০)।
সহকারী সম্পাদক (পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইশিথা পারভিন তিথি (২০২০-২১) এবং শিবির সমর্থিত মাসুমা ইসরাত মুমু (২০২২-২৩)।
কার্যনির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তামান্না আক্তার (২০২২-২৩), জান্নাতুন নাঈম তুহিনা (২০১৯-২০), ইউষা জান্নাত সোহা (২০২২-২৩), রেনেসা রাত্রী (২০২০-২১) এবং তাহরিমা আক্তার (২০১৮-১৯)।
এছাড়া সিনেটের পাঁচ পদের বিপরীতে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ৬০ জন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী সাতজন। তারা হলেন-তাসিন খান, জান্নাতুন নাঈম তুহিনা, ইউষা জান্নাত সোহা, রেনেসা রাত্রী, পরমা পারমিতা, তাহরিমা আক্তার এবং আফরীন জাহান।
সব মিলিয়ে রাকসুর আসন্ন নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের উপস্থিতি এবারের মতো এতটা ব্যাপক আর কখনোই দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীদের মতে, এত বড়সংখ্যক নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ কেবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে বৈচিত্র্যময় করছে না; বরং বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে নারীর নেতৃত্ব, নীতি নির্ধারণে অংশগ্রহণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকা ক্রমশ শক্তিশালী করে তুলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ বিষয়ক সহকারী সম্পাদক লুবনা শারমিন বলেন, এটা আমাদের জন্য বড় অর্জন। একটি বিগ রেভল্যুশন ঘটেছে এবার। আমি এটাকে খুবই পজিটিভভাবে দেখছি। সব ধরনের ভয়ভীতি কাটিয়ে তারা যে অংশগ্রহণ করেছে, এটাই অনেক। সামনে আরো নারী শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে বলে আমরা আশাবাদী।
জিএস প্রার্থী নুসরাত জাহান নুপুর বলেন, রাকসু যেহেতু ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে পরিচালিত একটি গণতান্ত্রিক মঞ্চ, তাই শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তার লক্ষ্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ এবং শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ হিসেবে গড়ে তোলা।
ভিপি প্রার্থী তাসিন খান বলেন, তফসিল ঘোষণার আগেই সাইবার টিম গঠনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সাইবার বুলিংয়ের কারণে অনেক নারী শিক্ষার্থী আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের একটি সাইবার টিম গঠন করলেও তাদের কার্যক্রম এখনো স্পষ্ট নয়। এতে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে, যা হতাশাজনক।
এদিকে সাইবার সুরক্ষায় বট/ফেক আইডি নিয়ন্ত্রণ ও গ্রুপ অ্যাক্সেস যাচাইসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন রাকসুর নারী প্রার্থীরা। গতকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
তাদের দাবিগুলো হলো- অফিসিয়াল সুরক্ষা নীতি প্রণয়ন, নারীবান্ধব অবকাঠামো ও সুরক্ষা, সাইবার সেফটি ও জেন্ডার রেসপন্স সেল, বট/ফেক আইডি নিয়ন্ত্রণ ও গ্রুপ অ্যাক্সেস যাচাই, গোপনীয়তা সুরক্ষা নীতি, ডিজিটাল লিটারেসি ও সেফটি প্রশিক্ষণ এবং ভেরিফায়েড অফিসিয়াল চ্যানেল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভিপি প্রার্থী তাসিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অংশীজনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুস্পষ্ট কোনো সাইবার নীতিমালা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে খোলা বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ, পেজ ও মেসেঞ্জার চ্যাটে বিভ্রান্তিকর তথ্য, গুজব, চরিত্র হনন এবং ব্যক্তিগত আক্রমণমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, নারী শিক্ষার্থীদের ছবি, ভিডিও ও ব্যক্তিগত তথ্য অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বা বিকৃত করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, পোস্ট ও কমেন্ট যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ।