Image description

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) ‘জুলাই ৬’ হলের ছাত্রদের ওঠানোর জন্য দ্বিতীয় ধাপের তালিকা প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। এ তালিকা বাতিল করে নতুন তালিকা প্রকাশ করা এবং প্রশাসনের হাতে থাকা হলের ১০ শতাংশ সিট বাতিলের জন্য ৯ আগস্ট আমরণ অনশনে বসেন পাঁচ ছাত্র। এরপর ফলাফল স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, সাত ঘণ্টা অনশন করে দুই ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রশাসন তালিকা বাতিলের ঘোষণা দেয়। তাদের হাতে থাকা ১০ শতাংশ সিট নিয়ে পরের দিন উপাচার্য ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আশ্বাস দিলে পাঁচ ছাত্র অনশন ভাঙেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেটাতে অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা আছে। কোটার আসন রাজনৈতিক প্রভাব ও সমন্বয়কের মাধ্যমে বণ্টন করা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটা আসন রাজনৈতিক প্রভাব ও সমন্বয়কের মাধ্যমে বণ্টন করা ছাড়াও হলের পুরা তালিকা তৈরি করার সময় হলের যে নীতিমালা রয়েছে, সেটি মানা হয়নি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আবাসিক হল পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা’ থেকে জানা যায়, সিট বরাদ্দের জন্য জ্যেষ্ঠতা, মেধা এবং অসচ্ছলতা- এ তিন বিষয়ের সমন্বয় করা হবে। সেখানে জ্যেষ্ঠতার সর্বোচ্চ নাম্বার ৫.২ (স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষ), মেধা ৪ (গড় সিজিপিএ), অস্বচ্ছলতার জন্য ২ নাম্বার, যেটি বিভাগের সভাপতি প্রত্যায়নপত্রের মাধ্যমে ঠিক করে দেবেন। সবমিলিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর হবে ১১.২। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। জানা যায়, নীতিমালায় মেধার সর্বোচ্চ নাম্বার ৪ থাকলেও তালিকা প্রকাশ করতে গিয়ে সেটা করা হয়েছে ১৪। এসএসসি এবং এইচএসসির ফলাফলকে মেধার নাম্বার হিসেবে গণনা করার কথা উল্লেখ না থাকলেও সিট বরাদ্দের তালিকা তৈরী করার সময় এ দুটি পরীক্ষার জন্য ৫ করে ১০ নাম্বার যোগ করা হয়েছে। ফলে মেধার মোট নাম্বার গিয়ে দাঁড়ায় ১৪। এসএসচি এবং এইচএসচি পরীক্ষার ফলাফল যোগ করাতে যারা এ পরীক্ষাগুলোয় খারাপ ফলাফল করেছেন, তারা সিটের পাওয়া থেকে পিছিয়ে গেছেন।

শুধু মেধার নম্বরেই নয়, নীতিমালা ভঙ্গ করা হয়েছে অসচ্ছলতার নম্বরেও। নীতিমালায় যেখানে অস্বচ্ছলতার নম্বর ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ২, সেটাকে করা হয়েছে ১০। এ নম্বর বিভাগের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রত্যায়িত হওয়ার কথা থাকলেও সেটা হয়নি। সভাপতিদের থেকে প্রত্যায়নপত্র দিলেও নম্বর নেওয়া হয়নি। এ নম্বর সহকারী হল প্রভোস্টরা ছাত্রদের পারিবারিক অসচ্ছলতার কথা জিজ্ঞেস করে নির্ধারণ করেছেন। ছাত্রদের জিজ্ঞেস করে অসচ্ছলতার নম্বর নির্ধারণের কারণে ফলাফলে ব্যবধান তৈরি হয়।

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের একটি ফলাফল থেকে দেখা যায়, নীতিমালা অনুযায়ী ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের (৩য় বর্ষ ১ম সেমিস্টার) সর্বোচ্চ নাম্বার হওয়ার কথা ৯.১, কিন্তু সেখানে নম্বর হয়েছে ৪০। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের (২য় বর্ষ ১ম সেমিস্টার) সর্বোচ্চ নাম্বার হওয়ার কথা ৮.১, কিন্তু সেটা করা হয়েছে ৩৬। শুধু এটি নয়, ছাত্রদের জিজ্ঞেস করে অসছলতার নম্বর দেওয়াতে কোনো কোনো শিক্ষাবর্ষে অসচ্ছলতার নম্বর বেশি আবার কোনোটিতে নম্বর কমও দেখা গেছে। 

জুলাই ৬ হলের প্রভোস্ট ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে পূর্বে ২ নম্বরকে কনভার্ট করে ১০ এবং টোটাল মার্ককে ৪০ নম্বর করা হয়েছে, এটা সত্য। অসচ্ছলতার তথ্য বিভাগ থেকে নেওয়া হয়নি। অনেকে মিথ্যা ফলাফল দিয়েছে, আমরা সেটা ক্রস চেক করিনি। যেমন কারও সিজিপি ২.৯৮, কিন্তু সে লিখে দিয়েছে ৩.৯৮। আমরা তাদের বিশ্বাস করে মূল মার্কশিট আনতে বলিনি। কিন্তু তারা আমাদের বিশ্বাস রেখে অবিশ্বাসের কাজ করে দিয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু ছাত্ররা ফলাফলের পুরা প্রক্রিয়াটা নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন, তাই এবার নীতিমালায় যা আছে, সেটিই অনুসরণ করা হবে। ২১টি বিভাগের চেয়ারম্যানদের চিঠি দিয়ে বলা হবে, অ্যাকাডেমিক ফলাফল এবং অস্বচ্ছলতার মার্ক ঠিক করে দিতে। ফলাফল বিভাগেই আছে, আর কোন ছাত্র সচ্ছল আর কোন ছাত্র অসচ্ছল, সেটা বিভাগের চেয়ারম্যানরা ভালো জানেন। এ মার্কসগুলো বিভাগ থেকে দেওয়া হলে প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ হবে। আর হল প্রশাসনের ওপরও দায় আসবে না।’