
২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। কেউ উচ্ছ্বসিত, কেউ আবেগাপ্লুত। আবার কেউ কেউ হয়তো নীরব, হতাশ—কারণ কাঙ্ক্ষিত জিপিএ-৫ ধরা দেয়নি। কিন্তু সত্যি বলতে কী, জিপিএ-৫ না পাওয়াই জীবনের পরাজয় নয়। বরং এটিই হতে পারে ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু।
চলতি বছরের প্রকাশিত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থী। গত বছর জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। অর্থ্যা, এবার গত বছরের তুলনায় ৪৩ হাজার ৯৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ কম পেয়েছেন। যারা জিপিএ-৫ পাননি, তাদের অনেকেই হতাশ হবেন। এটাই স্বাভাবিক। তবে, বিশিষ্টজনেরা বলছেন, বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক পরীক্ষার মধ্যে একটিতে জিপিএ-৫ না পাওয়া জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নয়।
শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, “প্রথমেই স্বীকার করে নিচ্ছি যে ফল ভালো হওয়াটা খুবই ভালো। জিপিএ-৫ পাওয়া ভালো, সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া আরও ভালো। কারণ, সবাই জানে, ফল ভালো হলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া যায়। ভবিষ্যতেও অনেক জায়গায় ভালো করা যায়। কিন্তু ফল ভালো না হলে জিপিএ-৫ না পেলে যে সব খারাপ হয়ে যায় তা কিন্তু নয়। মোটেও নয়। এ জন্য ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা যে বন্ধ হয়ে যায়, ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যায়, মোটেও তা নয়।”
জিপিএ-৫ যারা পাননি, তারা কী করবেন? এ পরিস্থিতিতে কী করা উচিত? কীভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব? শিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী ও সফল শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার আলোকে তুলে ধরা হলো ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
১. হতাশ না হয়ে বাস্তবতা মেনে নিন
প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে, একটা ফলাফল জীবনের পূর্ণ প্রতিচ্ছবি নয়। এসএসসি জীবনের সূচনা মাত্র। তাই জিপিএ-৫ না পাওয়াকে বড় ব্যর্থতা ভাবার সুযোগ নেই। এর চেয়ে জরুরি হলো নিজের ভুল ও দুর্বলতা চিনে নেওয়া এবং তা কাটিয়ে উঠার প্রস্তুতি নেওয়া।
২. ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ঠিক করুন, পরিকল্পনা গড়ুন
জিপিএ-৫ না পেলে কলেজে ভর্তি বা কাঙ্ক্ষিত বিষয় নিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আসতে পারে। তবে বাংলাদেশের অনেক ভালো কলেজ এখন ভর্তির সময় বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা, এসএসসি-পরবর্তী পরিকল্পনা ও আগ্রহ বিবেচনায় নেয়। তাই এখনই নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে প্রস্তুতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
৩. নিজেকে প্রশ্ন করুন—কোথায় ঘাটতি ছিল?
কোন বিষয়গুলোতে নম্বর কম এসেছে? প্রস্তুতিতে কোথায় ছিল ঘাটতি? পরীক্ষার হলে কি সময় ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হয়েছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করলে পরবর্তী পরীক্ষাগুলোয় সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।
৪. পরবর্তী ধাপে নিজেকে প্রমাণ করুন
মনে রাখতে হবে, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলই উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই যারা এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাননি, তারা এইচএসসিতে ভালো করে তা পুষিয়ে নিতে পারেন। বাস্তবে এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা এসএসসিতে জিপিএ-৫ না পেলেও এইচএসসিতে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।
৫. নিজের আগ্রহ ও দক্ষতা জানুন
সব ছাত্রছাত্রী একভাবে সব বিষয়ে ভালো নাও হতে পারেন। কেউ গণিতে দুর্বল হলেও অসাধারণ শিল্পী হতে পারেন, কেউ বিজ্ঞানে কাঁচা হলেও ভালো বক্তা হতে পারেন। তাই নিজের আগ্রহ ও দক্ষতা খুঁজে বের করে সেদিকেই মনোযোগ দেওয়াই শ্রেয়।
একটা ফলাফল দিয়ে জীবনকে মাপা যায় না। জিপিএ-৫ না পেয়ে যারা আজ দুঃখিত, তারা যেন এটুকু বুঝে নেন—ব্যর্থতা আসলে শিক্ষারই আরেক নাম। সঠিক পরিকল্পনা, অধ্যবসায় এবং আত্মবিশ্বাস থাকলে জীবনের যেকোনো পরীক্ষায় সফল হওয়া সম্ভব।