Image description
আজ সোমবার উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আবাসন সুবিধার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতীকী অনশন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরাছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা আবাসন সুবিধার দাবিতে আজ সোমবার উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সকাল ১০টা থেকে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতীকী অনশন করছেন। নারী শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসিকীকরণ নিশ্চিত করাসহ অস্থায়ীভাবে ছাত্রীদের আবাসনের দাবিসহ কয়েকটি দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছেন।

আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হলে আসন পাওয়া আমাদের অধিকার। কিন্তু আমাদের সিটের জন্য কেন এভাবে রাস্তায় অনশনে বসতে হবে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের অনাবাসিক শিক্ষার্থী সাইমুন নাহার বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা অনাবাসিক শিক্ষার্থী আছে, হলের বাইরে থাকার কারণে আমাদের নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমার বাসা মিরপুরে, শুধু এ কারণে আমাকে সিট দেওয়া হয় না। কিন্তু হলে না থাকতে পারায় আসা–যাওয়াসহ অনেক ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় আমাকে। আমরা শতভাগ আবাসিকীকরণ চাই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুজিয়া হাসিন রাশা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য হল নির্মাণের পাশাপাশি অস্থায়ীভাবে আবাসনের জন্য ভবন ভাড়া করতে হবে।’

নারী শিক্ষার্থীদের প্রতীকী অনশনে সংহতি জানিয়ে তাঁদের সহপাঠীরাও এসেছেন। তাঁদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ঈদুল ফয়সাল। নারী শিক্ষার্থীদের প্রতীকী অনশনে সংহতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নারী শিক্ষার্থীদের আবাসন–সংকট নারীদের পড়াশোনাসহ সামগ্রিক উন্নয়নের পথে অন্তরায়। তাঁদের জন্য আবাসন–সংকট দূর করা প্রশাসনের দায়িত্ব।’

সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু মুজাহিদ আকাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও ছাত্রীর অনুপাত প্রায় সমান হলেও প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে আমরা দেখেছি, ১৩টি হলে ছাত্রদের জন্য সিট সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৯৪টি এবং মাত্র ৫টি হলে ছাত্রীদের জন্য সিট সংখ্যা ৪ হাজার ৮৪৩টি; যা অত্যন্ত বড় ধরনের বৈষম্য। ৫৭ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের বৈষম্য অগ্রহণযোগ্য ও অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ বৈষম্য নিরসনে শিক্ষার্থীদের সাত দফা বাস্তবায়নে কাজ করার আহ্বান জানাই।’

নারীদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘নারী শিক্ষার্থীদের হলে থাকার ব্যবস্থা নেই, অথচ উপাচার্য এত বড় ভবন নিয়ে থাকছেন।’

দুপুরের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সাইমা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম ও প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচিতে আসেন। আবাসন–সংকট সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। আন্দোলনরত মেয়েদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন বলেও জানান।

ছাত্রীদের সাত দাবি

১. প্রথম বর্ষেই শতভাগ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ২. অবিলম্বে গণরুম বিলুপ্ত করা। অমানবিক ও অস্বাস্থ্যকর গণরুম–প্রথা তুলে নিয়ে পর্যাপ্ত আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ৩. নতুন ছাত্রী হল চালু না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রীদের অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন ভবনে বা ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে ছাত্রীদের অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ বিষয়ে দ্রুত প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তি প্রদান ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার ঘোষণা দিতে হবে। ৪. ছাত্রীদের নতুন হল বাধ্যতামূলকভাবে মূল ক্যাম্পাসের ভেতরেই নির্মাণ করা এবং দ্রুত নির্মাণকাজ দৃশ্যমান করতে হবে। ৫. অনতিবিলম্বে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক ছাত্রীদের হল কার্ড জমাদানপূর্বক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যেকোনো হলে প্রবেশ এবং ডাইনিংসহ অন্যান্য সুবিধা গ্রহণের অনুমতি দিতে হবে। ৬. ক্রমান্বয়ে প্রতিটি হলে ডাবলিং ব্যবস্থা তুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসনের সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ৭. নতুন ভবনে স্থানান্তরের মাধ্যমে মৈত্রী এবং বঙ্গমাতা হলকে ধারাবাহিকভাবে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করতে হবে।