
পাকিস্তানে ভারতের হামলাকে ঘিরে পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। হামলার সমুচিত জবাব দেওয়ার বার্তা এসেছে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। এ কারণে যে কোনো সময় পাল্টা হামলার শঙ্কা তীব্রতর হচ্ছে। চলমান উত্তেজনা দীর্ঘ মেয়াদে চলবে কিনা কিংবা যুদ্ধে রূপ নেবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করেন ‘জটিল’ ও ‘চিরবৈরী’ এ দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে এমন উত্তেজনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাদের মতে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের এমন মনোভাব ‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ দিকে নাও যেতে পারে।
তবে শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যুদ্ধ বড় আকারে ছড়িয়ে পড়লে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিসহ সার্বিকভাবে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এ ক্ষেত্রে কোনো পক্ষ অবলম্বন না করে গুরুত্বের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাদের মতে, দুই দেশ (ভারত-পাকিস্তান) যেন বড় আকারে যুদ্ধে না জড়ায় সেই কূটনীতির দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে বাংলাদেশকে।
এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বা সার্বিকভাবে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে, সে সব বিষয়ে আগে থেকেই হোমওয়ার্ক করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া এ যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলার কৌশল কী হবে, তাও নির্ধারণ করে রাখার কথা বলছেন বিশ্লেষকরা।
জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী স্থাপনায় ভারত হামলা করেছে বলে দাবি করেছে; কোনো সামরিক স্থাপনায় নয়। এ থেকে বোঝা যায়, এটি বড় ধরনের কোনো যুদ্ধের কারণ হবে না। কিন্তু বিষয়টি হচ্ছে, পাকিস্তানও প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। এটাই স্বাভাবিক ছিল। এখানে দেখা দরকার, এটা বড় যুদ্ধে গড়ায় কিনা। যদি এটি পাল্টাপাল্টি সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মধ্যেই সীমিত থাকে, তাহলে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না। তবে ছোটখাটো প্রভাব তো ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। বড় আকারে যুদ্ধ হলে তখন বড় প্রভাব তো পড়বেই। আমাদের সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হলে কোনো সন্দেহ নেই দেশের অর্থনীতির ওপর বড় প্রভাব পড়বে। তবে আমাদের আশা থাকবে যে, বড় আকারে যুদ্ধে তারা যেন না যায়।
আন্তর্জাতিক এই বিশ্লেষক বলেন, পাকিস্তানে ভারতের আক্রমণের পর দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও। যোগাযোগের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ছে। ইতোমধ্যে বিমানযাত্রার রুট পরিবর্তন করতে হয়েছে। এতে খরচ বাড়ছে। পুঁজিবাজারের মতো ব্যবসা-বাণিজ্য আর অর্থনীতির সব খাতেই তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান মনে করেনÑ একটি অঞ্চলে যখন এমন পরিস্থিতি হয়, তখন অস্থিতিশীলতার শঙ্কা থাকে। আঞ্চলিক অশান্তি হলে অন্যদেরও চিন্তার বিষয়। তিনি বলেন, দুই দেশের জনগণকে তুষ্ট করতে এবং জাতীয়তাবাদী চেতনাকে উসকে দিতে রাজনৈতিক নেতারা এ যুদ্ধের আবহ তৈরি করেন।
এই বিশ্লেষক বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ এ দুই দেশের বৈরী সম্পর্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং, এটি আরও বেশি দীর্ঘায়িত হলে গোটা অঞ্চলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার মতে, এখানে বাংলাদেশের আলাদা ভূমিকা রাখার কিছু নেই। বাংলাদেশ কেবল পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে বলতে পারে।