
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) তাপসী রাবেয়া হলে র্যাগিংয়ের অভিযোগে পাঁচ নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অভিযোগ অনুযায়ী, কৃষি অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাসনোভা হক আইরিনকে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় ১৯ মে দিবাগত রাতে। এ ঘটনায় তিনজন শিক্ষার্থীকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার এবং আরও দুইজনকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আজ শুক্রবার (২৭ জুন) বাকৃবির তাপসী রাবেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইসরাত জাহান শেলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড মো হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অর্ডিন্যান্স ফর স্টুডেন্ট ডিসিপ্লিন’ এর ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে কৃষি অনুষদের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মারিয়া সুলতানা মীমকে ১২ মাসের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া একই অনুষদের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়দা জান্নাত সোহা এবং আশিকা রুশদাকে ৬ মাসের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এ ছাড়াও প্রভোস্টের আওতাধীন শাস্তি অনুসারে কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষ ও প্রথম বর্ষের অন্য ২ জনকে ১ হাজার টাকা করে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রশাসন দুই পক্ষকে একসাথে বসায়নি। ওই মেয়ে (ভিক্টিম) অনেক অভিযোগ আমাদের নামে দিয়েছে, যার কোনো প্রমাণ নেই। আমরা মানছি যে, রাতে বসাটা আমাদের ভুল ছিল, তবে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন ও ফোন কেড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।’
অভিযুক্ত দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঘটনার শুরু ১৯ মে দিবাগত রাত ২ টার দিকে। আমি আমার রুমে পড়তে ছিলাম, তখন তার (ভিক্টিম) একজন সহপাঠী আমাকে এসে জানায় যে, সে (ভিক্টিম) আমার নামে খারাপ কথা বলে বেড়িয়েছে। এরপর আমি ও আমার একজন সহপাঠী এবং ভিকটিম ও তার আরও তিনজন সহপাঠী মিলে আমরা গেস্ট রুমের পাশে, একটা জায়গায় বসেছিলাম।
আমরা তখন ছাদে ছিলাম, তাই তিনজন জুনিয়রের একজন তাকে ছাদে আসতে বলে বিষয়টি সমাধানের জন্য। পরে সে ছাদে আসতে চাইনি, তাই আমরা গেস্ট রুমের পাশে একটা জায়গায় বসেছিলাম যেখানে সিসিটিভিতে সব দেখা যায়। আমরা তার প্রতি কোনো শারীরিক নির্যাতন করিনি, তার ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়নি। তবে সেদিন ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিটের মতো আমাদের আলোচনা চলে। পুরো ঘটনা সিসিটিভিতে রেকর্ড আছে। ওই মেয়ে সেদিন দোষ স্বীকারও করেছে এবং পরেরদিন বাসায় চলে যায় এখানো আসেনি।’
এ বিষয়ে বাকৃবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘র্যাগিংয়ের অভিযোগ পাওয়ার পর, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। হল প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করেছে এবং আমরা প্রক্টরিয়াল বডি থেকেও একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। উভয় পক্ষ থেকেই লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছিল। এরপর সংশ্লিষ্টদের পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে আমাদের কাছে দাখিল করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ঘটনার পরদিন সকালেই পরীক্ষা না দিয়ে, বাড়ি চলে যায় এবং বাসা থেকেই অভিযোগ পাঠায়। পরে হল প্রশাসন তাকে ডেকে এনে সরাসরি বক্তব্য নেয় এবং বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।’
ঘটনার বিষয়ে তাপসী রাবেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইসরাত জাহান শেলী বলেন, ‘এটি হলের অভ্যন্তরীণ একটি বিষয় ছিল এবং তদন্তে আমরা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছি। তদন্ত কমিটিতে আমি নিজে ছাড়াও হলের তিনজন হাউজ টিউটর সদস্য হিসেবে ছিলেন। আমরা লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে উভয় পক্ষের বক্তব্য নিয়েছি এবং তদন্ত করে প্রতিবেদন উপাচার্য স্যারের কাছে উপস্থাপন করেছি। পরে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘অভিযোগ ছিল, রাত ১টা ৪৫ মিনিট থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত পাঁচজন মিলে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। মেয়েটি সে সময় অসুস্থ অনুভব করছিল এবং বারবার জানাচ্ছিল সে শারীরিকভাবে ভেঙে পড়ছে, স্ট্রোক করতে পারে। কিন্তু অভিযুক্তরা নাকি তখন বলেছে, মারা যাওয়ার আগে কিছু লক্ষণ তো দেখাও।
বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। আমরা মেয়েটিকে অভিভাবকসহ ডেকে এনে তার বক্তব্য নিয়েছি এবং পৃথকভাবে অভিযুক্ত পাঁচজনের সঙ্গেও বিস্তারিত আলোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছি। অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনকে ১২ মাসের জন্য, দুইজনকে ৬ মাসের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং বাকি দুইজনকে ১ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’