
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদীদের পৃষ্ঠপোষণের অভিযোগ তুলেছে বিএনপিপন্থী শিক্ষক সাদা দল। তাদের অভিযোগ, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতা ও তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলছেন তিনি। তবে অধ্যাপক ড. মামুন বলছেন, এসব অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ দিতে পারেনি সাদা দল। তার ভাষ্য, বর্তমান প্রশাসনের অধীনে শিক্ষক নিয়োগে মেধাবীরাই পাবে অগ্রাধিকার। তাতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
আজ রবিবার (২২ জুন) দুপুরে এসব অভিযোগ নিয়ে প্রো-ভিসি কার্যালয়ে যান সংগঠনটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম এবং অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকারের নেতৃত্বে সাদা দলের শিক্ষকরা। এসময় ড. মামুন আহমেদের কাছে এসব অভিযোগের তারা জবাবদিহি চান। পরে তিনি তাদের ব্যাখ্যা দেন।
পরে প্রো-ভিসি কার্যালয় থেকে বের হয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাদা দলের শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ ছাত্রলীগপন্থী বিতর্কিত নেতাকর্মীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাদিয়া আফরিন এনিকে পপুলেশন সায়েন্স বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়া, ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজে নকল করে ধরা পড়া ছাত্রলীগ কর্মী আনিকাকেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেন।
অভিযোগ করে আরও বলেন, আওয়ামী লীগপন্থী নীল দলের এক শিক্ষককে সফরসঙ্গী করে বিদেশ ভ্রমণ, সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক, বিতর্কিত শিক্ষকদের রিসার্চ এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডও প্রদান করেছেন অধ্যাপক মামুন। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে নীল দলের শিক্ষক অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগও তুলেছে সাদা দল।
এ বিষয়ে সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার বলেন, বৈঠকে প্রো-ভিসি ড. মামুন আমাদের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তবে অনেক কিছুর জবাব এড়িয়ে গেছেন। সাদা দলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সত্যতা প্রমাণ হওয়ায় নকল করা ছাত্রীর নিয়োগ আটকানো হয়েছে। আমরা ওনাকে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছি বিষয়গুলো সংশোধনের জন্য। আগামী দিনে আমরা অবরুদ্ধ করব নাকি গেটে দাঁড়াবো সেটা নির্ভর ওনার আচরণের ওপর নির্ভর করবে।
তিনি আরও বলেন, ওনার অনেক ব্যাখ্যা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। মেধা ও স্বচ্ছতার নামে যদি ফ্যাসিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। আমরা প্রত্যাশা করি, আমাদের সহকর্মীদের হিসেবে বিষয়গুলো সংশোধন করে নেবেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি বিএনপি, আওয়ামী লীগ কিংবা জামায়েত দেখে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করছি না। স্বচ্ছ ও মেধার ভিত্তিতেই সুপারিশ করেছি। এতে নিষিদ্ধ সংগঠন ও স্বৈরাচারের দোসর থাকলে তা প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে। আমার জানা মতে নিষিদ্ধ সংগঠন ও স্বৈরাচারের দোসর কাউকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়নি। কিন্তু অজান্তে যদি হয়ে তাহলে কেউ কোনো নোটিশ করেনি কেন? এর আগেও এরকম অভিযোগের প্রেক্ষিতে একাধিক নিয়োগের সুপারিশ করিনি। তাছাড়া নিয়োগ চূড়ান্ত হয় সিন্ডিকেটের সভায়। এখানে আমাকে কেন একা দোষারোপ কেনা করা হচ্ছে। সিন্ডিকেটে তো অনেকেই রয়েছেন।
সাদা দলের প্রতি তিনি বলেন, উনাদের প্রতি আমার বার্তা থাকবে, আমি স্বচ্ছ ও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের পক্ষপাতি। আমি তাদের সঙ্গে একমত যে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন ও স্বৈরাচারের দোসর কেউ যাতে কোনোভাবেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে না পারেন। যদি কোনো কিছু হয়ে থাকে তাহলে আমার অজান্তে হয়েছে। তাছাড়া কেউ আমাকে আগে জানাননি। তাছাড়া আমার তো এখানে বসে কে আওয়ামী লীগ করছেন সেটা জানা সম্ভব নয়। তবে এরকম যদি কেউ হয়ে থাকে, তাহলে সিন্ডিকেটের আগে জানাতেন। তারপর সিন্ডিকেটে ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। তবে এখনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, তাবে সেটা প্রমাণ সাপেক্ষে।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়োগের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, পপুলেশন সায়েন্স বিভাগে নিয়োগের বিষয়ে অভিযোগ থাকলে তো বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিভাগ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ভালো বলতে পারতেন। এরকম তো তারা জানাননি। আর ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজে অভিযোগের বিষয়ে সেখানকার সিএনডি ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেখানে তারা তদন্ত করে কিছু পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া নীল দলের এক শিক্ষককে সফরসঙ্গী করে বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালেয়ে প্রায় দুই হাজার শিক্ষক রয়েছেন। এরমধ্যে ১৮০০ শিক্ষক গত ১৭ বছরে নীল দল করেছেন। এরমধ্যে কেউ যদি আমার সঙ্গে হাঁটলে তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় তাহলে কী করার আছে?
প্রসঙ্গত, অধ্যাপক মামুন একসময় ঢাবির সাদা দলের একজন সক্রিয় নেতা ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টাও।