Image description

প্রাথমিক পর্যায়েই স্তন ক্যানসার শনাক্ত করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে হাবার্ড, এমআইটিসহ বিশ্বসেরা ২০০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪০টি প্রতিযোগী দলকে পেছনে ফেলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় ‘ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক’ বিভাগে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে বুয়েটের উদ্ভাবক দল ‘নিওস্ক্রিনিক্স’। পুরস্কার হিসেবে তারা পেয়েছেন ৫ হাজার ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ লাখ টাকা।   

গত ১২ এপ্রিল অনলাইনে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয় এবং বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। পাঁচ সদস্যের উদ্ভাবক দলে রয়েছেন ফাহমিদা সুলতানা, এইচ এম শাদমান, সাদাতুল ইসলাম, মো. হাসনাইন আদিল ও পৃথু আনান। তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মাধ্যমে একজন নারী নিজেই স্তন ক্যানসারের লক্ষণ বা সম্ভাব্যতা যাচাই করতে পারবেন।  

জানা গেছে, হাসনাইন অ্যাপটির ইউআই (ইউজার ইন্টারফেস) বা ফ্রন্টএন্ড,সাদি অ্যাপটির প্রোগ্রামিং বা ব্যাক এন্ডের কাজ শাদমান এই প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত করা ও পৃথু সামলেছেন স্তনের স্ক্রিনিং বা ছবি তোলার যন্ত্র তৈরির দায়িত্ব। পরিকল্পনা ও উপস্থাপনা দিয়ে পুরো কর্মযজ্ঞকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ফাহমিদা।         

তাদের গবেষণা ও উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বুয়েট কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সোহেল রহমান। 
এছাড়া, ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম ও রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রিবাতুল ইসলাম তথ্য সংগ্রহে বিশেষ অবদান রেখেছেন।

এ বিষয়ে ফাহমিদা বলেন, ‘জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রতিযোগিতায় প্রতিবছরই বুয়েটের বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। তাঁদের কাছ থেকেই এই প্রতিযোগিতার খবরটা প্রথম পাই। প্রতিযোগিতাটি যেহেতু গণস্বাস্থ্যবিষয়ক এবং আমাদের কয়েকজনের গণস্বাস্থ্য গবেষণার আগ্রহ আছে, তাই আবেদন করি। যেদিন চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হলো, সেদিন আমরা কেউ ভাবতেই পারিনি যে আমরা প্রথম হব।’ 

সাদাতুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগেও একটি দেশীয় প্রতিযোগিতায় আমাদের এই প্রযুক্তির প্রস্তাবনা জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে কোনো স্বীকৃতি সেভাবে আসেনি। তবে যথেষ্ট পর্যালোচনা পেয়েছিলাম। ফলে নিজেদের ত্রুটিগুলো দূর করে পরের প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হয়েছে। জানুয়ারিতে প্রস্তাবনা জমা দেওয়ার পর ১০ মার্চ প্রতিযোগিতার ফাইনালিস্ট নির্ধারিত হয়। ‘ডিজিটাল হেলথ ট্র্যাক’ বিভাগের ছয় ফাইনালিস্টের মধ্যে নিওস্ক্রিনিক্সের সঙ্গে বুয়েটের অন্য একটি দলও ছিল। ১২ এপ্রিল অনলাইনে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই জানানো হয় বিজয়ীদের নাম।’ 

হাসনাইন বলেন, ‘আমি এত কিছু আশা করিনি। ওয়েবিনার থেকে বের হয়ে গেমস খেলা শুরু করে দিয়েছি। সাদাতুল ইসলাম তো ঘুমিয়েও পড়েছিলেন। বিজয়ীদের নাম ঘোষণা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন শুধু শাদমান। তার কাছেও এই অর্জন অপ্রত্যাশিত, অবিশ্বাস্য।’ 

পৃথু বলেন, ‘কখনো ভাবিনি আমরা প্রথম হব। শাদমান বাদে আমরা সবাই অনলাইন ওয়েবিনার থেকে বেরও হয়ে গিয়েছিলাম।’

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের স্বাস্থ্যের গুরুত্বকে সামনে রেখেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন নিওস্ক্রিনিক্স দলের সদস্যরা । আপাতত তারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে চায়। পাশাপাশি উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি যেন সহজলভ্য হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে দলটি।