Image description

চলতি বছর উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন ইশরাত জাহান ও নাঈমা সুলতানা (ছদ্মনাম)। ইশরাত জাহান ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। ইশরাত জাহান ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আড্ডা দিচ্ছেন অন্যদের সাথে। নাঈমা সুলতানা সরকারি সাত কলেজে ভর্তি আবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন। তার অলস সময় কাটছে গ্রামের বাড়িতে। কারণ, সাত কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আবেদন শুরুর পর আন্দোলনের মুখে তা বন্ধ হয়ে গেছে। কবে নাগাদ পুনরায় ভর্তি আবেদন শুরু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

সরকারি মেডিকেলে ভর্তি শুরু হয় গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে। ৮ ফেব্রুয়ারি ভর্তির সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা বাড়ানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) এবং কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এখনো সাত কলেজে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু হয়নি।

সাত কলেজ অধিভুক্ত সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ছদরুদ্দীন আহমদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সাত কলেজ একটি পরিবর্তিত অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ভর্তি কার্যক্রম এখন পুরোপুরি স্থগিত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের একটি সেশনই বাতিল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গেছে। সাত কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আলোচনা করে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি থেকে সাত কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি আবেদন শুরু হয়। আবেদন শেষ হওয়ার কথা ছিল গত ১২ ফেব্রুয়ারি। তার আগেই গত ৩০ জানুয়ারি সাত কলেজে ভর্তি আবেদন স্থগিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দেয় ঢাবি কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসব কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি না করার ঘোষণা দেয়। এর পর এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এসব কলেজের ভর্তি পরীক্ষা কাদের অধীন হবে, সেটি স্পষ্ট করা হয়নি। এর ফলে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। সরকারি মেডিকেল কিংবা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দুই শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। একই সঙ্গে এইচএসসি পাস করলেও ভর্তি কার্যক্রম দেরিতে শুরু হওয়ায় সাত কলেজে ভর্তি হওয়া এবং ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যাচ্ছেন। পড়ছেন সেশনজটে।

সাত কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশাসনের গাফিলতির কারণে প্রতিবছর দেরিতে ক্লাস শুরু হয়। এটা একধরনের ‘অপসংস্কৃতিতে’ পরিণত হয়েছে। এতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিছিয়ে পড়ছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তৈরি হচ্ছে সেশনজট।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে সাত কলেজে ভর্তিচ্ছু মুহিবুল আহসান বলেন, ‘উচ্চ শিক্ষালয়গুলোর চেষ্টা থাকে সেশনজট কমানোর, সেখানে সাত কলেজের চিন্তা করতে হয় একটি সেশন যেন বাতিল না হয় সেটি নিয়ে। আমরা যারা ভর্তি হব, তারা শুরুতেই পিছিয়ে পড়ব। ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ও পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশিত হয়নি। ভর্তি পরীক্ষা শেষে ক্লাস কবে শুরু হবে তা নিশ্চিত নয়। প্রশাসনের উচিত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা।’

আরেক ভর্তিচ্ছু ফরহাদ বলেন, নানা কারণে সাত কলেজে সেশনজট লেগেই থাকে। সেশনজটের কারণে বড় ভাইদের অনেক সময় সরকারি চাকরির বয়সও শেষ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ যদি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তবে আমাদের একটা শিক্ষাবর্ষ হারিয়ে যেতে পারে। এমন অবস্থায় সামনের দিনের কথা চিন্তা করলেই হতাশা কাজ করছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সাত কলেজের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। চিঠিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যেহেতু একটি ‘নজরদারি সংস্থা’ গঠন করার কথা বলা হয়েছে, সেটি গঠিত হলে তারাই ভর্তির বিষয়টি দেখবেন। আমরা সেখানে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।’