
বেসরকারি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এআইইউবি) ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অধ্যাপক ড. ফারহীন হাসানকে নিয়োগ দেয় সরকার। তবে নিয়োগ দেয়ার ২০ দিন পরেও এখনো বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যোগদান করতে পারেননি এই অধ্যাপক। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
`ভিসি যোগাযোগ না করলে আমরা কীভাবে জানব তার পরিচয় কী? আমাদের কাছে তার নম্বরও নাই। ব্যক্তিগতভাবে আমার সঙ্গেও তার কোনো যোগাযোগ নেই— মো. নজরুল ইসলাম, বিওটি চেয়ারম্যান, প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. শুভময় দত্তের পদত্যাগের পরে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত ভিসির দায়িত্ব দেয়া হয় আরেক অধ্যাপক ড. রায়হানা বেগমকে। এদিকে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের পক্ষ থেকে তিনজন অধ্যাপকের নাম প্রস্তাব করা হলেও সরকার সেটিকে নাকচ করে শিক্ষার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী এআইইউবির অধ্যাপক ড. ফারহীন হাসানকে নিয়োগ দেয়।
জানা গেছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এই অধ্যাপককে নিয়োগ দেয়ার পর প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অসহযোগিতা করা হয়। শিক্ষার্থীদের দাবি, একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা হলেও তারা আমলে নেয়নি। উলটো নতুন নিয়োগ পাওয়া ভিসিকে নিজ দায়িত্বে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়।
আন্দোলনকারী একজন শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান লিনা বলেন, নতুন ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করুক সেটাই চায় না বিওটি। একজন নতুন ভিসি নিয়োগ করা হয়েছে, অথচ রেজিস্ট্রার অফিস থেকে তার সাথে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। রেজিস্ট্রার অফিস থেকে যোগাযোগ করার প্রয়োজন ছিল। এটা প্রটোকলের মধ্যে পড়ে। আমরা রেজিস্ট্রারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, নতুন ভিসির সাথে কেন যোগাযোগ করা হয়নি? উত্তরে তিনি আমাদের বলেছিলেন বিভিন্ন বাধার কথা।
তিনি আরো বলেন, আমরা জানতে চাই, কী এমন বাধা? যার জন্য তিনি নতুন ভিসিকে একটা শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতে পারেন নি? আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, যেকোনো মূল্যে নতুন ভিসিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসার কাজ করে যাব। কারণ ভিসি আসলে বিওটির দুর্নীতি নিয়ে যে অডিট হচ্ছে, সেটাকে প্রভাবিত করা যাবে না। শিক্ষার্থীরাও বিষয়গুলো নিয়ে ক্ষুব্ধ। প্রয়োজনে সবাইকে নিয়ে আবারো মাঠে নামব।
এসব প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. ফারহীন হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি এখনো যোগদান করনি। তবে কী কারণে যোগদান করেনি সে বিষয়ে জানতে চাইলে এই অধ্যাপক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এর আগে বিওটির অপসারণ, স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ, নিরপেক্ষ প্রশাসক দিয়ে দ্রুত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সচল ও বিওটি নিয়োগ এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করেন প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে বিষয়গুলো নিয়ে উচ্চশিক্ষার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন সময়ে দেখা করেন শিক্ষার্থীরা।শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরিয়ে নিতে নতুন প্রশাসক নিয়োগের আশ্বাস দেয় সরকার।
বেসরকারি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
এদিকে সরকার কর্তৃক নতুন ভিসি নিয়োগের ২০ দিন পরেও যোগদান না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) মো. আনিসুর রহমান বলেন, আমার মনে হয় বিওটি আশা করছিলেন যে নতুন ভিসি তাদের সাথে যোগাযোগ করলে সমঝোতার ভিত্তিতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। কিন্তু ভিসির পক্ষ থেকে সেরকম কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে বিওটির পক্ষ থেকে সেরকম কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নতুন ভিসির সাথে কোনো যোগাযোগ করা কিংবা শুভেচ্ছা বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসব বিষয়ে বলতে পারব না। তবে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে এ ধরনের কোনো কাজ করা হয়নি। আমাদের এমন কোনো কাজ করতে হলে বিওটির অনুমোদন লাগে। নির্দেশনা না পাওয়ায় আমরা সেরকম কোনো কাজ করি নি।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, আমরা নতুন ভিসির বিষয়ে নাম উত্থাপন করেছি। সরকার আমাদের দাবি মেনে নিয়ে অধ্যাপক ফারহীনকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু বিওটি কোনোভাবেই চায় না, নতুন এই অধ্যাপক ভিসি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসুক। কারণ এই অধ্যাপক আসলে বিওটির বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আছে সেটা প্রমাণিত হবে। কাজেই তারা এমন কাউকে চায়, যাকে বিওটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কিন্তু নতুন ভিসি সেরকম না হওয়ায় তারা অসহযোগিতা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ভিসি যোগাযোগ না করলে আমরা কীভাবে জানব তার পরিচয় কী? আমাদের কাছে তার নম্বরও নাই। ব্যক্তিগতভাবে আমার সঙ্গেও তার কোনো যোগাযোগ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি অধ্যাপক ফারহীন আমাদের জানিয়েছেন। যোগদানের বিষয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থেকে থেকে তাকে অসহযোগিতা করা হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আমরা কাজ করছি। শীঘ্রই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে বলে আশা করছি।