শাখা ছাত্রদলের শীর্ষ পাঁচ নেতা ও কেন্দ্রের সমন্বয়ে ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদের (জকসু) জন্য ২১ পদে প্যানেল গোছানো শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইনক্লুসিভ প্যানেল করতে শাখা ছাত্রদল ও ছাত্র অধিকার পরিষদ একত্রে একটি যৌথ প্যানেল করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া প্যানেলে রাজনৈতিক দলের নেতারা ছাড়াও বেশ কিছু অরাজনৈতিক ও পরিচিত মুখ থাকছেন।
সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের চেয়ে জকসুর ইনক্লুসিভ এই প্যানেল ঘিরে হচ্ছে আলোচনা ও সমালোচনা। আগামীকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ রফিক ভবন সামনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। আগামী ২২ ডিসেম্বর জকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।
জানা গেছে, ছাত্রদলের প্যানেলে র্শীষ তিন পদের মধ্যে ভিপি (সহ-সভাপতি) পদে মনোনয়ন পেতে পারে শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব, জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে সদ্য ঘোষিত শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও কারাবরণকারী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কোবরা এবং এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য তানজিল আহমেদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মাসে শাখা ছাত্রদল নেতা হাসিবুর রহমান হাসিবের আকস্মিক মৃত্যুর পর বিপাকে পড়েছে শাখা ছাত্রদল। সংগঠনটি তাদের প্যানেলের জন্য যোগ্য ভিপি প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না পাওয়াতে নির্বাচনে জিততে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিবকে প্যানেলে এনে শক্তিশালী করার চেষ্টায় ছাত্রদল।
এছাড়া ছাত্রদলের প্যানেলে ভিপি পদে নির্বাচন করার গুঞ্জনে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে জবিতে বেগম খালেদা জিয়ার মুর্যাল নির্মাণে বিরোধিতা করা স্কিনশর্ট সমূহ। স্কিনশর্ট গুলোতে দেখা যায়, গত বছর ৮ অক্টোবর তিনি জকসু চাই গ্রুপে লিখেছেন, নামফলক হোক কিন্তু ম্যুরাল চাই না। বেগম খালেদা জিয়ার ম্যুরাল স্থাপনার বিরোধিতা করে তিনি দফায় দফায় মশাল মিছিলও করেন তিনি। মিছিলের ছবিতে দেখা যায়, শিবির-বামসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে তিনি মিছিল করছেন। এই নিয়ে ছাত্রদলের হচ্ছে আলোচনা সমালোচনা।
এদিকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ দলে যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও বাইরে থেকে দলে ভেড়ানো হচ্ছে, এতে বঞ্চিত হচ্ছে নিজ দলের যোগ্যতাসম্পন্ন নেতাকর্মীরা। এই প্যানেলের গুঞ্জনে চলছে ফেসবুকে আলোচনা-সমালোচনা। জুনিয়র নেতাকর্মীরা প্রকাশ করেছে তীব্র ক্ষোভ।
ফেসবুকে শাখা ছাত্রদলের শীর্ষ ৫ নেতাকে ট্যাগ করে আহ্বায়ক সদস্য সাব্বির হোসেন লিখেছেন, যখন রাজপথে ক্যাম্পাসের ৫০ জন ও ছিল না তখন ১৮তম ব্যাচের আমরা নিয়মিত ১৫/২০ জন প্রোগ্রাম করেছি। আর দুঃসময়ে কর্মীদের এভাবে পুরস্কৃত করবেন। বাহ্। এখনো সময় আছে ভাই, বিদ্যমান শিক্ষার্থীরের ভোট গ্রহণ করতে চাইলে ১৮ ব্যাচের কয়েকজন যোগ্য শিক্ষার্থীকে বিবেচনায় নিয়ে আসেন।
আরেক আহ্বায়ক সদস্য সৌরভ আহমেদ নামে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ছাত্রদলের প্যানেল হবে ছাত্রদল থেকে। বাহির থেকে নেতা আইনা নির্বাচন করাইলে নেতাদের বলবো ছাত্রদলের কমিটি বাতিল করেন। যেই পোলাপান পিছনে নিয়ে ঘুরাবেন তাদের নির্বাচন না করাই সমালোচকদের নির্বাচন করানো অবশ্যই অন্যায়। এই কমিটি এখনো একটা ভালো কাজ ও করে নাই। এহন গুঞ্জন সত্যি করে নতুন কলঙ্ক বানাইয়েন না, নিজেদের কপাল নিজেরা পোড়াবেন না। উল্টাপাল্টা প্যানেল দিলে আমরাও দেখে নিবো।
ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য শের আলী লিখেছেন, ক্যাম্পাসে আসার পর থেকেই জানতাম জবি ছাত্রদল অনেক শক্তিশালী এবং আশাবাদী ছিলাম আসন্ন জকসু নির্বাচনে অন্য ক্যাম্পাসের তুলনায় জবি ছাত্রদল এখানে অনেক ভালো করবে কিন্তু আপনারা যে দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিলেন সেটা মানতে কষ্ট হচ্ছে। জকসুতে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী নেতারা বাইরে থেকে লোক এনে প্যানেল দিবেন ভালো কথা। আগামীকাল কি আপনার পিছনে হাঁটার মতো লোক খুঁজে পাবেন তো? আপনারা কি চান না জবি থেকে ছাত্রদলের নেতৃত্ব তৈরি হোক? জবি ছাত্রদলকে পঙ্গু করে রাখার পাঁয়তারা না তো?
এদিকে ছাত্রদলের সিনিয়র নেতারা জুনিয়রদের দলের স্বার্থে পরামর্শ দিচ্ছেন যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান হোসেন অপু। তিনি লিখেছেন, জকসুতে মাত্র ২১টি পদ। সেখানে হাজারের উপরে আমাদের যে সব নেতাকর্মী আছেন/আছো তাদের অবশ্যই চাওয়া পাওয়া আছে এবং থাকবে। কিন্তু বাস্তবতাও বুঝতে হবে। আমি নিজে আশা করেছিলাম জকসু নির্বাচন করবো। প্রতিবন্ধকতার জন্য আমি 'সহ আমাদের অসংখ্য সিনিয়রদের ব্যক্তিগত চাওয়াটাকে বিসর্জন দিতে হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র সংগঠনের স্বার্থে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাবো বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আরিফ লিখেছেন, রাজনীতিতে সব সময় নিজের মন মতো সব হবে এটা চিন্তা করা ভুল, আর নিজেই এক মাত্র যোগ্য এটাও মনে করা চরম বোকামি। আগামীতে যারাই জকসুতে ছাত্রদলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন তাদের জন্য সর্বোচ্চ শ্রম ও সহযোগিতায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
এদিকে আজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভিপি পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তৌহিদ চৌধুরী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। মনোনয়ন গ্রহণের পর তৌহিদ চৌধুরী বলেন, আমি স্বতন্ত্র থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করছি। তবে আশা রাখি, ছাত্রদল আমাকে দলীয় প্যানেলে স্থান দেবে। যদি না দেয়, তাহলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচনে অংশ নেব। আমার একমাত্র লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করা এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব করা।
এদিকে প্যানেল এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফীন। তিনি বলেন, আমাদের প্যানেল এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমরা মিটিংয়ে আছি। আরো দুইটা মিটিং আছে। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পৃথকভাবে ছাত্রদল নেতাদের মনোনয়নপত্র নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, তারা ব্যক্তিগত ভাবে নিয়েছে। যে কেউ ব্যক্তিগত ভাবে তুলতে পারে। তবে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল মিটিংয়ে আছি বলে জানিয়ে মুঠোফোন কেটে দেন।
এর আগে গত ৫ নভেম্বর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, গত ১২ নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করার হয়। ১৩ নভেম্বর ৪ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে। ১৬ নভেম্বর চলেছে মনোনয়নপত্র বিতরণ যা ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। ১৭ ও ১৮ নভেম্বর মনোনয়ন পত্র দাখিল, ১৯ ও ২০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই, ২৩ নভেম্বর প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং ২৪, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর প্রার্থীদের আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ২৭ ও ৩০ নভেম্বর প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করা হবে ও ৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর ৪ ডিসেম্বর, ৭ ডিসেম্বর ও ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। এদিকে প্রত্যাহারকৃত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে ৯ ডিসেম্বর। এরপর ৯ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনি প্রচারণা করবেন আর ২২ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হবে। এছাড়া তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনের দিনেই ভোট গণনা ও ২২ থেকে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা হবে।