বাংলা চলচ্চিত্রের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম খলিল উল্লাহ খান। যিনি নায়ক হিসেবে তার যাত্রা শুরু করেছিলেন, কিন্তু খলনায়ক চরিত্রে এসে হয়ে উঠেছিলেন কিংবদন্তি। সময় বদলেছে, প্রজন্ম বদলেছে—তবু তার সংলাপের দৃঢ়তা, চোখের অভিব্যক্তি আর উপস্থিতির শক্তি আজও রোমাঞ্চ জাগায়। আজ (৭ ডিসেম্বর) তার প্রয়াণের ১১ বছর, তবু তিনি বাংলা সিনেমার ইতিহাসে অনন্ত স্বাক্ষর হয়ে আছেন।
১৯৫০-এর দশকে তরুণ খলিলের হাত ধরে বাংলা সিনেমায় জন্ম নেয় এক নতুন রোমান্টিক হিরো। তার সহজ-স্বচ্ছ অভিনয়, চওড়া হাসি আর ভরাট কণ্ঠ দর্শকের মন জয় করে নেয় দ্রুতই। ১৯৫৯ সালে জহির রায়হানের ‘সোনার কাজল’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন খলিল। চলচ্চিত্রে আসার আগে বেশ কয়েকটি নাটকেও অভিনয় করেন।
১৯৭৪ সালে ‘উৎসর্গ’ এবং ‘এখানে আকাশ নীল’ ছবি দুটির মাধ্যমে খলিল চরিত্রাভিনেতা রূপে আত্মপ্রকাশ করেন। নায়ক থেকে খলনায়ক—খলিল উল্লাহ খানের এই রূপান্তরই তাকে অনন্য করেছে।
বাংলা চলচ্চিত্রে এমন খলনায়ক কমই দেখা যায় যাকে দর্শক—ঘৃণা করেও ভালোবেসেছে। সিনেমার পর্দায় তিনি যতটা কঠোর, বাস্তবে ছিলেন ঠিক তার উল্টো—ভদ্র, শান্ত স্বভাবের, স্নেহশীল।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘খলনায়ক চরিত্র আমার কাজ, মানুষ হিসেবে আমি নরম।
২০১৪ সালের আজকের এই দিনে (৭ ডিসেম্বর) খলিল উল্লাহ খানের প্রয়াণ বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য এক গভীর শূন্যতা তৈরি করেছিল। তার চলে যাওয়া শিল্পীদের মনে রেখেছে এক বেদনার দাগ, আর রেখে গেছে অপ্রতিরোধ্য শ্রদ্ধার ঢেউ। ১১ বছর পরেও শিল্পী-সহকর্মী-দর্শকরা তাকে স্মরণ করেন ভালোবাসা ও গর্বের সঙ্গে।
পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে ৮ শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন খলিল উল্লাহ খান। চলচ্চিত্র শিল্পে তিনি ছিলেন ‘শিল্পী’ শব্দটির এক শক্তিশালী প্রতীক। অসামান্য অভিনয়ের জন্য তিনি পেয়েছেন—জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, এবং আরও বহু সম্মাননা।
১৯৩৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সিলেটের কুমারপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন খলিল। তার বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার। তিনি ১৯৪৮ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৫১ সালে মদনমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরে সিলেট মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৪ সালে মানিকগঞ্জের রাবেয়া খানমকে বিয়ে করেন খলিল। এ দম্পতির পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ে।
খলিলের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে—পুনম কি রাত, ভাওয়াল সন্ন্যাসী, উলঝান, সমাপ্তি, তানসেন, নদের চাঁদ, পাগলা রাজা, বেঈমান, অলঙ্কার, মিন্টু আমার নাম, ফকির মজনু শাহ, কন্যাবদল, মেঘের পরে মেঘ, আলোর মিছিল, এত টুকু আশা, আয়না, মধুমতি, ওয়াদা, ভাই ভাই, বিনি সুতার মালা, মাটির পুতুল, সুখে থাকো, অভিযান, কার বউ, কথা কও, দিদার, আওয়াজ, নবাব, নবাব সিরাজউদদৌলা (রঙিন), ভণ্ড অন্যতম।