Image description
 

নব্বই দশক থেকেই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘‘ইত্যাদি’’ চার দেয়ালের বাইরে গিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আয়োজন করে আসছে এর পর্ব। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রকৃতি, পর্যটনকেন্দ্রসহ জনজীবনের নানা দিক দর্শকের সামনে তুলে ধরাই এর লক্ষ্য। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে দ্বীপ জেলা ভোলার ঐতিহ্যবাহী পরিকল্পিত জনপদ চরফ্যাশনে। মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে নির্মিত প্রায় শতবর্ষ প্রাচীন ঐতিহাসিক ট্যাফনাল ব্যারেট স্কুলের সামনের প্রাঙ্গণে।

‘‘ইত্যাদি’’ ধারণ উপলক্ষে পুরো ভোলাজুড়েই তৈরি হয় উৎসবের আমেজ। দুপুর থেকেই অনুষ্ঠানস্থলে ভিড় করতে শুরু করেন হাজারো দর্শক। কেউ এসেছেন ব্যানার–ফেস্টুন হাতে নিয়ে ‘‘ইত্যাদি’’ এবং এর কর্ণধার হানিফ সংকেতকে স্বাগত জানাতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয় স্থানটি। কেবল আমন্ত্রিত দর্শকই নন, অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ জড়ো হয় তাদের প্রিয় অনুষ্ঠানটি দেখার জন্য।

‘ইত্যাদি’র দৃশ্য‘ইত্যাদি’র দৃশ্য‘ইত্যাদি’র দৃশ্য/ফাগুন অডিও ভিশনের সৌজন্যে

স্থানীয়দের মতে, ভোলায় এর আগে কোনো অনুষ্ঠানে এত দর্শকের সমাগম ঘটেনি। আশপাশের বাড়িঘরের ছাদ থেকে শুরু করে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে হাজারো মানুষ উপভোগ করেছেন অনুষ্ঠান। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেও দর্শকের উচ্ছ্বাসে বারবার মুখরিত হয় পরিবেশ।

এবারের ইত্যাদিতে গান রয়েছে দুটি। শুরুতেই ভোলা জেলাকে কেন্দ্র করে মনিরুজ্জামান পলাশের কথায় একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে রয়েছে নৃত্য। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন রাজিব ও তানজিনা রুমা। সুর করেছেন হানিফ সংকেত, সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদী। স্থানীয় শতাধিক নৃত্যশিল্পী এতে অংশ নেন। নাচের কোরিওগ্রাফি করেছেন এস কে জাহিদ। অন্যদিকে, কণ্ঠশিল্পী রবি চৌধুরী ও আঁখি আলমগীর গেয়েছেন ‘‘আমাকে না বলে’’ শিরোনামের একটি গান। গানটির সুর ও সংগীত করেছেন ইমরান মাহমুদুল, কথা লিখেছেন রবিউল ইসলাম জীবন।

দর্শকপর্বে ভোলাকে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় তিনজন দর্শক। দ্বিতীয় পর্বে তারা অভিনয় করেন ভোলারই সন্তান জনপ্রিয় অভিনেতা তৌসিফ মাহবুবের সঙ্গে। উপস্থিত দর্শকদের কাছে এ অংশটিও বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে।

‘ইত্যাদি’র দৃশ্য‘ইত্যাদি’র দৃশ্য

এবারের ইত্যাদিতে রয়েছে ভোলার গর্ব এম এ মুহিতকে নিয়ে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার। তিনি একমাত্র বাঙালি, যিনি পরপর দুবার জয় করেছেন পৃথিবীর সর্বোচ্চশৃঙ্গ এভারেস্ট। দ্বিতীয়বার জয়লাভের সময় মুহিত ও নিশাত মজুমদারের হাতে শোভা পাচ্ছিল ইত্যাদি লেখা। কেন, কীভাবে- তারও উত্তর দিয়েছেন এই বিশেষ পর্বে।

শিকড় সন্ধানী ‘‘ইত্যাদি’’ সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিবেদিত মানুষদের তুলে ধরার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বেও রয়েছে কয়েকটি অনবদ্য প্রতিবেদন।

ভোলার বিভিন্ন উপজেলা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন করা হয়েছে। ‘‘ভোলা গ্রাম ও গুলশান’’ নিয়ে থাকছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ভোলা জেলায় সংঘটিত ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসযজ্ঞও উঠে এসেছে একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায়। পাশাপাশি পরিবেশ ও আবহাওয়ার অনুকূলে গড়ে ওঠা মহিষকেন্দ্রিক ব্যবসা ও মহিষের বাথান নিয়েও থাকছে তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন। মৎস্য খাত ভোলার মানুষের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস। তবে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে অনেক জেলে দুর্ঘটনার শিকার হন। তাদেরই এক পরিবারের করুণ কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে এবারের প্রতিবেদনে। বিদেশি প্রতিবেদন হিসেবে দেখানো হবে চীনের বেইজিংয়ের বিখ্যাত সামার প্যালেস- যেটি প্রাসাদ, বাগান ও হ্রদের অনন্য সমন্বয়।

‘ইত্যাদি’র দৃশ্য‘ইত্যাদি’র দৃশ্য

থাকছে কুশলী সাংবাদিকের প্রশ্নে নাতির কৌশলী উত্তর, যা দর্শককে যেমন হাসাবে, তেমনি ভাবনাতেও ফেলবে। এছাড়াও ইত্যাদির নিয়মিত আয়োজন চিঠিপত্র পর্ব ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু সামাজিক অসংগতি ও সমসাময়িক প্রসঙ্গনির্ভর নাট্যাংশ।

‘‘ইত্যাদি’’ রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। ২৯ আগস্ট, শুক্রবার রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর প্রচারিত হবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে। অনুষ্ঠানটি নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।