
আমাদের শরীর ক্ষুধার সংকেত দেয় নানা উপায়ে। এর মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা। শুনতে অবাক লাগলেও বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। একটি সাধারণ এবং অনেক সময় অবহেলিত লক্ষণ ক্ষুধার কারণে মাথাব্যথা।
দীর্ঘ সময় না খাওয়া, খাবারে অনিয়ম বা পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়া, এসবই ‘হাঙ্গার হেডেক’ বা ক্ষুধাজনিত মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। যদিও এটি সাধারণত গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে না, তবে দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তি ও অক্ষমতা আনতে
হাঙ্গার হেডেক কী : হাঙ্গার হেডেক এমন এক ধরনের মাথাব্যথা, যা ক্ষুধার কারণে তৈরি হয়। যখন খাবারের মধ্যে দীর্ঘ বিরতি থাকে বা পর্যাপ্ত ক্যালরি পাওয়া যায় না, তখন রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়। মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত শক্তি না পেলে স্নায়ু ও পেশিতে চাপ সৃষ্টি হয়, যা মাথাব্যথায় রূপ নেয়।
কেন এ মাথাব্যথা হয় : ক্ষুধাজনিত মাথাব্যথার পেছনে রয়েছে কয়েকটি কারণ, সেগুলো হলো—
পারে। তাই এ সমস্যাটি বোঝা এবং সমাধান খুবই জরুরি। সম্প্রতি ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক এর প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।
লো ব্লাড সুগার : খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ না পাওয়া মস্তিষ্কের জন্য শক্তির ঘাটতি তৈরি করে
ব্লাড সুগার : খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ না পাওয়া মস্তিষ্কের জন্য শক্তির ঘাটতি তৈরি করে।
পেশির টান : শরীরে হিস্টামিন নিঃসৃত হয়ে পেশিতে টান সৃষ্টি করে।
স্ট্রেস হরমোন বৃদ্ধি : রক্তে শর্করা কমে গেলে শরীর কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের মতো স্ট্রেস হরমোন ছাড়ে, যা মাথাব্যথা বাড়াতে পারে। ডিহাইড্রেশন, অতিরিক্ত বা কম ক্যাফেইন গ্রহণ, অনিয়মিত খাবার সময়সূচি, নিদ্রাহীনতা ও ডায়েটিংও এ সমস্যার কারণ হতে পারে।
লক্ষণ : হাঙ্গার হেডেক কপাল বা মাথার সামনের অংশে ব্যথা সৃষ্টি করে, যা দুই দিকে ছড়িয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া আরও থাকতে পারে—হালকা বমি ভাব, ঘাড় ও কাঁধে পেশির টান, মাথা ঘোরা
ক্লান্তি, পেট ব্যথা, অতিরিক্ত ঘাম।
চিকিৎসা : সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হলো খাওয়া। সুষম খাবার যেমন শাকসবজি, ফল, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ আহার নেওয়া উচিত। সময় কম থাকলে বাদাম, ফল, দই বা হোল-গ্রেইন বিস্কুটের মতো স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসও কাজে দেবে। পর্যাপ্ত পানি পান করাও জরুরি। সাধারণত খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে এই মাথাব্যথা কমে যায়। তবে না কমলে সাধারণ পেইন রিলিভার ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রতিরোধ : দিনভর পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত বিরতিতে ছোট ছোট খাবার খাওয়া, যথেষ্ট ঘুম, ডায়েট প্ল্যান করলে হঠাৎ ক্যালরি কমিয়ে না আনা, রোজা থাকলে সেহরিতে পর্যাপ্ত পানি ও জটিল শর্করা যেমন আলু, ডাল, হোল-গ্রেইন খাওয়া।
চিকিৎসকের কাছে কখন যাবেন : ক্ষুধার কারণে মাথাব্যথা হলে সেটা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। অনেক সময় এটা বড় কোনো রোগের ইঙ্গিত দেয়। তাই কিছু লক্ষণ দেখা দিলেই সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। যদি ক্ষুধাজনিত মাথাব্যথা—নিয়মিত মাথাব্যথা, ওষুধেও না কমলে, দৈনন্দিন কাজে বাধা।
এসব লক্ষণ দেখে দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তা ছাড়া হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি, কথা জড়ানো, মাথা ঘোরা বা দৃষ্টি ঝাপসা হলে তা স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত জরুরি চিকিৎসা নিন।
হাঙ্গার হেডেক আপনার শরীরের একপ্রকার সতর্ক সংকেত যা সময়মতো খাবার খাওয়ার বিষয়ে সংকেত দেয়। এটি নিজে থেকে সেরে যায় না; বরং সুষম খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত খাবারের অভ্যাসই হলো সেরা প্রতিকার। সুস্থ থাকতে হলে শরীরের এই সংকেতকে অবহেলা না করে, সময়মতো পানি পান ও খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।