Image description

কেয়া নামের ১৬ বছরের মেয়েটির কোনো খোঁজ ১৫ দিন ধরে নেই। বাড়ির কেউ জানে না কোথায় আছে, কেমন আছে। যখন মা-বাবা খোঁজ পেলেন, তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে এ চিকিৎসক দম্পতির। মেয়ে এক বখাটে ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে! মোবাইল ফোনে পরিচয়, আলাপ এবং প্রেম। মা-বাবা জানতে পেরে ফোন কেড়ে নিয়ে রেখেছিলেন কঠোর নজরদারিতে। নজরদারি দিয়ে তো প্যারেন্টিং হয় না।

১৯ বছরের টগবগে তরুণ আকাশের মরদেহ দু’দিন ধরে ঝুলেছে ঘরের ভেতর। মা-বাবা গেছেন গ্রামের বাড়ির জায়গাজমির কাজে। তাদের সঙ্গে দু’দিন আগে কথা হয়েছিল আকাশের। তখন এ দম্পতির মনেও হয়নি তাদের সন্তান এমন কিছু করতে পারে কিংবা সন্তানের ফ্যানে বাঁধা মৃতদেহ দেখবেন। তারা ভেবেছেন ছেলে তো ঠিকঠাকই আছে। আসলেই কি ঠিকঠাক? টিনএজ সন্তানের মনের কতটুকু খোঁজ আমরা রাখছি? অভিভাবকত্বের চাপে সন্তানের দমটা বন্ধ করে দিচ্ছেন না তো?

টিনএজ একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়, যেখানে একজন শিশু বা কিশোর তাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশের পর্যায়ে থাকে। এ সময় তাদের জীবনে বন্ধু এবং অভিভাবকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্ন হলো– কোনটি বেশি জরুরি বন্ধুত্ব নাকি অভিভাবকের সান্নিধ্য। টিনএজ বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধুদের সাহায্যে তারা নিজেদের অনুভূতি, চিন্তা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় হতে পারে। এটি তাদের সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং একে-অপরের মধ্যে মনের এক ধরনের সমঝোতা তৈরি হয়।

বন্ধুরা একে-অপরকে উৎসাহিত করতে পারে, ভুল শিক্ষা ও খারাপ অভ্যাসে জড়িয়ে পড়া থেকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। বন্ধুরা যখন একে-অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেয়, তখন টিনএজরা নিজেদের মূল্যবান ও সম্মানিত বোধ করে। ভয়ের কথা হলো, বন্ধুদের মধ্যে নেতিবাচক আচরণও থাকতে পারে, যা কিশোরের মানসিকতার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বন্ধুরা যেমন সহায়ক, তেমনি তাদের প্রভাবও হতে পারে ধ্বংসাত্মক।

একজন অভিভাবক সন্তানের জন্য মানসিক সাপোর্ট, বিশ্বাস এবং সম্পর্কের শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলতে পারেন; যা বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকেও কখনও কখনও বেশি প্রয়োজনীয়। তবে টিনএজ বয়সে বন্ধুত্বের সম্পর্কটাই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করে ছেলেমেয়েরা। কেননা তখন অভিভাবকের শাসন বা দিকনির্দেশনা তাদের চঞ্চল মনে বাধা বলে মনে হয়, বন্ধুকে যতটা খোলাখুলি সব কথা বলতে পারে, তেমন করে নিজের আবেগ বা মনের কথা তারা মা-বাবাকে বলে না। অথচ এই সময়ে মা-বাবার উচিত নিজেদের অবস্থানকে সন্তানের জন্য বন্ধুত্বের জায়গায় নামিয়ে আনা। হয়তো সন্তান একটা প্রেমে পড়েছে, সম্পর্ক ভেঙেছে বা বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে নেশায় জড়িয়েছে; ঠিক এ সময় আপনার নিজেকে সংযত করতে হবে। শাসনের পরিবর্তে সহমর্মী হয়ে সন্তানের জায়গায় নিজেকে প্রতিস্থাপন করে তার আবেগ বোঝার চেষ্টা করতে হবে, তার জীবনের চ্যালেঞ্জ বুঝতে হবে একদম বন্ধুর মতো।

সন্তান যদি অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলতে এবং তার অনুভূতি শেয়ার করতে পারে, তখন সে বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কেও সঠিক দিকনির্দেশনা খুঁজে পাবে। টিনএজদের মধ্যে অনেক সময় অভিভাবকের প্রতি অনাস্থা বা দূরত্ব দেখা যায়। অভিভাবকরা যদি তাদের সন্তানের বন্ধু হতে পারেন এবং তাদের জীবনের অংশ হয়ে ওঠেন; তাহলে টিনএজরা তাদের অভিভাবকের পরামর্শ নিতে এবং সহায়তা চাওয়ার জন্য খোলামেলা হতে পারে। অভিভাবকের বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব সন্তানের মাঝে আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তার অনুভূতি গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। যখন অভিভাবকত্বের কঠোরতা ছাপিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ এক মনোভাবের মাধ্যমে সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন, তখন সন্তানও আপনাকে পরম নির্ভরতার জায়গা ভাবতে শুরু করবে; আবেগীয় চ্যালেঞ্জ বা অন্য যে কোনো বাস্তবতার সঙ্গে নিজেকে লড়াই করার জন্য তৈরি করতে পারবে।