
সুন্দরী নারীদের ব্যবহার করে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ের অভিযোগে করা মামলায় জব্দ থাকা পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ ফেরত পেতে ফের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন মডেল মেঘনা আলম। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসে এই আবেদন করেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে এসে মেঘনা বলেন, আমার সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের প্রফেশনাল সম্পর্ক রয়েছে। সৌদি রাষ্ট্রদূত ইশা আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিল। তার যথেষ্ট প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। আমি যথেষ্ট প্রমাণ দিতে পারব যে, আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা হয়েছিল।
এদিন সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি থানার প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলার শুনানি শেষে মেঘনা আলমের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো উপাদান আছে কি না তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
নিজেই প্রেমের ফাঁদে পড়ার বিষয়ে মেঘনা আলমের বক্তব্যের পর বিচারক তার উদ্দেশে বলেন, এখন এটা আলোচনার বিষয় নয়। এরপর মেঘনা আলম বলেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আমার ওপর নির্ভর করে। ছয়টি মহাদেশের ১০ টি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেছি। এছাড়াও নারীদের অধিকার বিষয়ে অনেক কাজ করেছি। আমার ব্যবহৃত ম্যাকবুক, ল্যাপটপ, মোবাইল ও পাসপোর্ট ফেরত চাই।
তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, তিনি নারীদের নিয়ে কী কাজ করেন তা মামলার এজাহারে স্পষ্ট। তিনি মূলত নারীদের দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করাতেন।
তখন মেঘনা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আপনি রাষ্ট্রদূতকে অসম্মান করছেন। এরপর উভয়পক্ষ তর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমি নিরপরাধ।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মডেল মেঘনা আলমের জব্দকৃত ম্যাকবুক, ল্যাপটপ, মোবাইলে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো উপাদান আছে কি না তা তদন্তের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এসব ডিভাইসের মালিকানা যাচাই-বাছাই করে আগামী ৩১ আগস্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
এদিন বেলা ১১ টার দিকে নিজের পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ফেরত পেতে আদালতে হাজির হন মডেল মেঘনা আলম। এ সময়, মেঘনা হাতে খেজুরের কার্টন ও জায়নামাজ হাতে নিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় ওঠেন। এর মিনিট দশেক পর এই মামলার শুনানি হয়।
মেঘনা আলমের পক্ষে আইনজীবী মহিমা বাঁধন ও মহসিন রেজা আসামির জিনিসপত্র ফেরত চেয়ে শুনানি করেন। শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, মেঘনা আলম একজন লিডারশিপ ট্রেইনার। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য প্রায়ই তাকে দেশের বাইরে যেতে হয়। এজন্য মেঘনা আলমের আইফোন-১৬ প্রো, ম্যাকবুক, অপো মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ খুব প্রয়োজন। এসব জিনিসপত্র ফেরতের জন্য প্রয়োজনীয়ও সব কাগজপত্র দেওয়া যাবে।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. হারুন অর রশিদ এর বিরোধিতা করে শুনানিতে বলেন, আসামি বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিক/প্রতিনিধি ও দেশীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। এই মামলাটি চাঞ্চল্যকর। আসামির মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ দিয়ে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তা জানা দরকার। আরও কার কার সঙ্গে ব্ল্যাকমেইল করেছেন, কাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছেন তা তদন্ত হয়ে আসা জরুরি। আসামির জিনিসপত্র ফেরতের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ ঘোর আপত্তি জানাচ্ছে।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়, মেঘনা আলম, দেওয়ার সমিরসহ অজ্ঞাতনামা ২ থেকে ৩ জন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিক/প্রতিনিধি ও দেশীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করিয়ে কৌশলে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধপন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে তাদের সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে আসছিলেন। দেওয়ান সমির কাওয়াই গ্রুপ নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং সানজানা ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠানের ফার্মের মালিক মর্মে জানা যায়।
এছাড়া, এর আগে মিরআই ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। বিভিন্ন আকর্ষনীয়, স্মার্ট মেয়েদের তার প্রতিষ্ঠানে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছে সহজে যাতায়াত নিশ্চিত করা এবং দেওয়ান সমির তার ম্যানপাওয়ার ও অন্যান্য ব্যবসাকে অধিকতর লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে চক্রান্তের অংশ হিসেবে অসৎ উদ্দেশে তার সহযোগী আসামিদের সহায়তায় বিভিন্ন কূটনীতিককে টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইল করে বড় অংকের টাকা চাঁদা হিসেবে দাবি করেন।
এর আগে, গত ১০ এপ্রিল বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে মডেল মেঘনাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তার ৩০ দিনের আটকাদেশ বাতিল হয়েছিল। গত ১৭ এপ্রিল ধানমন্ডি থানার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরবর্তীতে ২৮ এপ্রিল আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
আরটিভি