Image description

আমাদের প্রতিদিনের জীবন এক বিশাল দৌড়ের মতো—চাকরি, সংসার, দায়িত্ব, পরিবার সবকিছু একসঙ্গে সামলে চলতে হয়। আমরা প্রায় সবাই এমন একটা জায়গায় পৌঁছাই, যেখানে শরীর আর মন দুটোই হাঁপিয়ে ওঠে। ক্লান্ত হয়ে পড়া তখন স্বাভাবিক মনে হয়। একটু বিশ্রাম, একটা ভালো ঘুম, তারপর আবার নতুন উদ্যমে কাজে ফেরা—এটাই আমাদের রুটিন।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—ভালোভাবে ঘুমানোর পরও যদি শরীর ক্লান্ত থাকে, দিনভর অলস লাগে, কাজ করতে মন চায় না, তাহলে সেটা কি শুধু কাজের চাপ, নাকি ভেতরে লুকিয়ে থাকা অন্য কোনো সমস্যা?

আয়রনের ঘাটতি—একটি নীরব সমস্যার নাম

 

অনেক সময় ঘুম ঠিকমতো হওয়ার পরেও যদি আপনি ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে সেটাকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ধরনের ক্লান্তি শরীরে আয়রনের ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। আয়রন হলো এমন এক খনিজ, যা শরীরের রক্ত তৈরি এবং অক্সিজেন পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হিমোগ্লোবিন, রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তৈরি হয় আয়রনের সাহায্যে। এই হিমোগ্লোবিনই আমাদের রক্তের মাধ্যমে ফুসফুস থেকে শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন না থাকলে হিমোগ্লোবিন কমে যায়, আর সেই সঙ্গে কমে যায় শরীরের শক্তি, কর্মক্ষমতা ও সতেজতা।

 

ঘুম, বিশ্রাম—সব থাকার পরও ক্লান্তি? সমস্যা কোথায়?

অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাচ্ছেন, পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছেন, এমনকি মানসিক চাপও কম, তবুও সারা দিন যেন শরীরটা জড়োসড়ো হয়ে থাকে। মনে হয়, যেন কিছুই করতে ইচ্ছা করছে না। আবার কারও মাথা ঘোরে, বুক ধড়ফড় করে, একটু হাঁটলেই দম বন্ধ হয়ে আসে। কেউ কেউ বলেন, একদম শক্তি পাচ্ছি না, মাথা ভার লাগছে বা কোনো কিছুতে মন বসছে না।

এসব লক্ষণ অনেক সময়ই রক্তে আয়রনের ঘাটতির কারণে হয়, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া বলা হয়।

শরীর ও মস্তিষ্ক দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়

আয়রনের ঘাটতি শুধু শারীরিক ক্লান্তি এনে দেয় না, মানসিক চাপ, মনোযোগে ঘাটতি, ঘন ঘন মুড সুইংয়ের কারণও হতে পারে। কারণ মস্তিষ্কে যখন ঠিকমতো অক্সিজেন পৌঁছায় না, তখন মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, এমনকি হতাশাও তৈরি হতে পারে।

নারীদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও জটিল হতে পারে। ঋতুস্রাবের সময় অনেকেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ভোগেন, যেখান থেকে আয়রনের ঘাটতি আরও বেড়ে যেতে পারে। অনেক নারী এই সময় মাইগ্রেনের মতো মাথাব্যথা অনুভব করেন—যার পেছনেও থাকতে পারে আয়রনের অভাব।

আয়রনের ঘাটতির কিছু সাধারণ লক্ষণ:

- পর্যাপ্ত ঘুমিয়েও ক্লান্ত লাগা

- ত্বক ফ্যাকাসে ও নিস্তেজ হয়ে যাওয়া

- বুক ধড়ফড় করা বা ব্যথা অনুভব

- মাথা ঘোরা বা ভার লাগা

- মনোযোগে সমস্যা

- শরীরে শক্তির অভাব

- বারবার শ্বাসকষ্ট বা হাঁপ ধরা

সমাধান কী

সবচেয়ে আগে দরকার সচেতনতা। ঘন ঘন ক্লান্তি, নিঃশ্বাসে কষ্ট বা ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি করা ঠিক নয়। রক্ত পরীক্ষা করে আয়রনের মাত্রা জানা যায়। আয়রন কম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রনযুক্ত খাবার বা সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়।

 

ঘুম থেকে উঠেও ক্লান্ত, বড় কোনো সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে কি শরীর?

 

আয়রনসমৃদ্ধ কিছু খাবার:

- লাল মাংস (বিফ, লিভার)

- পালং শাক ও অন্যান্য শাকসবজি

- ডাল, ছোলা, মসুর

- ডিমের কুসুম

- শুকনো ফল (খেজুর, কিশমিশ)

- চিড়া, কলা, আখের রস

- আয়রন যুক্ত সিরিয়াল ও দুধ

- ভিটামিন C-যুক্ত খাবার (লেবু, কমলা, আমলকি) আয়রনের শোষণে সাহায্য করে। তাই আয়রন খাওয়ার সময় এ ধরনের খাবারও রাখা উচিত।

ঘুম, বিশ্রাম, ভালো খাওয়া—সবকিছু ঠিক থাকার পরও যদি আপনি বারবার ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে সেটাকে অবহেলা করবেন না। ক্লান্তি অনেক সময় আমাদের শরীরের ভেতরের নীরব সংকেত। সেই সংকেতকে গুরুত্ব না দিলে পরবর্তীতে বড় রোগে রূপ নিতে পারে।

সতর্ক থাকুন, সচেতন থাকুন, নিজের শরীরকে ভালোবাসুন।