Image description

ছোটবেলায় মাকে হারায় মেয়েটি। তার সঙ্গে ছিল আরও পাঁচ ভাই-বোন। তাদের একাই লালন-পালনের ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন যুদ্ধ থেকে ফেরা সৈনিক বাবা। এই ভালোবাসার গল্প থেকেই বিশ্বজুড়ে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার পালিত হয়ে আসছে বাবা দিবস। দিবসটির পেছনে রয়েছে এক মেয়ের আবেগভরা অনুরোধ, আর এক সিঙ্গেল বাবার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার গল্প।

মেয়েটির কন্যার নাম সোনোরা স্মার্ট ডড। ১৮৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাসে জন্ম নেওয়া মেয়েটি ছোটবেলায় মা হারান। এরপর থেকে তার ও পাঁচ ভাইবোনের অভিভাবকত্ব একাই কাঁধে তুলে নেন বাবা উইলিয়াম স্মার্ট, যিনি ছিলেন গৃহযুদ্ধ ফেরত এক প্রাক্তন সৈনিক। নিজের সব দায়িত্ব ত্যাগ করে তিনি সন্তানদের মানুষ করেন অকুণ্ঠ ভালোবাসায়। বাবার প্রতি ভালোবাসা থেকেই জন্ম নেয় ‘বাবা দিবস’র ধারণা।

মায়ের জন্য দিন আছে, বাবার জন্য কেন নয়?
১৯০৯ সালের এক রবিবার, সোনোরা তার বাবার সঙ্গে গিয়েছিলেন ওয়াশিংটনের স্পোকেন শহরের এক গির্জায়। সেখানে মা দিবস উপলক্ষে বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নিয়ে তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে— ‘মায়ের জন্য যদি বিশেষ দিন থাকতে পারে, তবে বাবার জন্য নয় কেন?’

বাবা উইলিয়াম স্মার্ট শুধু একজন বাবা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একাধারে অভিভাবক, পথপ্রদর্শক এবং একজন নিঃস্বার্থ মমতাময় মানুষ। সেই অনুভব থেকেই সোনোরা প্রস্তাব দেন, বাবাদের সম্মান জানিয়ে একটি দিবস পালনের। তার এ আহবানে সাড়া দেয় স্থানীয় YMCA ও Ministers’ Alliance। 

তাদের সহযোগিতায় ১৯১০ সালের ১৯ জুন স্পোকেন শহরেই পালিত হয় ইতিহাসের প্রথম ‘ফাদারস ডে’। যদিও সোনোরা চেয়েছিলেন, দিনটি হোক ৫ জুন—তার বাবার জন্মদিনে। প্রস্তুতির ঘাটতির কারণে তা জুনের তৃতীয় রবিবারে পালিত হয়।

ধীরে ধীরে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি
প্রথমদিকে শুধু ছোট পরিসরে পালিত হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাবা দিবসের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে।

•১৯১৩ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এই ধারণাকে সমর্থন জানান।

•১৯১৬ সালে তিনি স্পোকেন শহরের উদযাপনে যোগ দেন।

•১৯২৪ সালে প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বাবাদের সম্মান জানানোকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

•১৯৫৭ সালে মার্কিন সিনেটর মার্গারেট চেজ স্মিথ বলেন, ‘আমরা যদি একজন অভিভাবককে সম্মান জানাই, আরেকজনকে না জানাই—তা হবে অন্যায়ের শামিল।’

অবশেষে ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন এক নির্বাহী আদেশে জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে ‘ফাদারস ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

বাবার জন্য কৃতজ্ঞতা থেকেই ইতিহাস
সোনোরা স্মার্ট ডডের এই অনন্য অবদানকে স্মরণ করে ১৯৪৮ সালে স্পোকেন শহরের ওয়াইএমসিএ ভবনে তার সম্মানে স্থাপন করা হয় একটি ব্রোঞ্জফলক। আর ২০১০ সালে তার পারিবারিক বাড়িটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘National Register of Historic Places’-এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

বর্তমানে এটি ব্যক্তিগত আবাসন হলেও স্পোকেনের ‘ইস্ট সেন্ট্রাল হেরিটেজ’ ট্যুরের অংশ হিসেবে অনেকেই এটি দেখেন—যেন শ্রদ্ধা জানাতে আসেন এক মেয়ের হৃদয়ের গভীর ভালোবাসাকে।
শুধু একটি দিবস নয়

‘বাবা দিবস’ আজ আর শুধু একটি ক্যালেন্ডারের তারিখ নয়। এটি হয়ে উঠেছে সেসব বাবার প্রতি সম্মানের প্রতীক—যারা সন্তানদের জন্য ছায়ার মতো আগলে রাখেন, নিঃশব্দে গড়ে তোলেন ভবিষ্যৎ। আর এই দিবসটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কখনও কখনও ইতিহাস বদলে দেয় একজন মানুষের আন্তরিক অনুভব, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।