Image description

‘ভাইরে ভাই, কী বলব! নোয়াখালী থেকে ফ্রান্সে এসে অটোগ্রাফ দিলাম। জীবনে এভাবে অটোগ্রাফ দেব, কোনো দিন কল্পনা করিনি। তাদের আন্তরিকতায় আমি অবাক,’ বললেন তরুণ আল আমিন। উৎসবে অংশ নিতে গত শনিবার তিনি ফ্রান্সে পৌঁছান। প্রথমবার কান–যাত্রায় পথ চিনতে অন্যদের সহায়তা নিয়েছেন। এ সময় কানে তাঁর অভিনীত সিনেমা মনোনীত হওয়ায় অনেকেই তাঁকে অভিবাদন জানান।

এই তরুণ অভিনেতা বলেন, ‘বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আমাকে অনেকেই এশিয়ান বলছিলেন। নিজেই আগ্রহ নিয়ে তাঁদের কাছে পরিচয় দিয়ে কানে যাওয়ার পথের সহযোগিতা চাইলাম। কয়েকজন অটোগ্রাফ নিলেন। একজন বললেন, তুমি তো তারকা। তুমি যখন অনেক বড় তারকা হবে, তখন অনেক টাকায় এটি বিক্রি করব (হাসি)। আমাকে সবাই যে অভিনেতা হিসেবে সম্মান দিয়েছেন, এটাই আমার সার্থকতা।’

যেভাবে ‘আলী’তে
নোয়াখালীতে থাকেন আল আমিন। সেখানেই গান দিয়ে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু। একই সঙ্গে নারী ও পুরুষের কণ্ঠে গান গাইতে পারেন। এই দ্বৈত কণ্ঠের গাওয়া গানের ভিডিও দেখেই ফোন দিয়ে তাঁকে অভিনয়ের কথা বলেন কাস্টিং ডিরেক্টর। শুরুতে এফডিসি ঘরানার কোনো সিনেমা ভেবে তেমন একটা আগ্রহ দেখাননি। ‘ভাবছিলাম অভিনয় করব না। পরে পরিচালকের ফেসবুক প্রোফাইল দিতে বললাম। তখন দেখলাম আদনান আল রাজীব। তাঁর নাটক দেখা ছিল। সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যাই। এটাই ছিল আমার প্রথম অভিনয়,’ বলেন আল আমিন।

পরিচালক রাজীবের সঙ্গে আল আমিন। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
পরিচালক রাজীবের সঙ্গে আল আমিন। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

জীবনের সেরা দিন
মাসখানেকের প্রস্তুতিতে সাত দিন শুটিংয়ে অংশ নেন ‘আলী’ চরিত্রের অভিনেতা। গত নভেম্বরে সিলেট ও সুনামগঞ্জে হয় শুটিং। সেই সময় শুনেছিলেন সিনেমাটি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে পাঠানো হবে। তখনো কান উৎসব সম্পর্কে তেমন জানতেন না। সব জানার পরে আগ্রহ বাড়ে। শুটিংয়ের পরে একাধিকবার খবর নেন কী অবস্থা, কোনো উৎসবে সিনেমাটি জায়গা পেল কি না। শুরুতে সবাই একটা আশ্বাস দিয়েছিল যে জায়গা পাবে। মার্চেও খবর নেন। তখন টিম থেকে বলা হয়, এটা কোনো উৎসবে জায়গা পায়নি। শুনে ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল, হতাশও হয়েছিলেন। তবে আল আমিনের বিশ্বাস ছিল, ভালো কিছু হবে।

‘আদনান ভাইয়ের ওপর আমার আস্থা ছিল। কোনো উৎসবে যাচ্ছে কি না জানার জন্য এপ্রিলে একদিন ভাইকে ফোন দিলাম। তখন ভাই জানালেন, কোনো উৎসব মানে? বিশ্বের সেরা উৎসবে নির্বাচিত হয়েছে। কয়েক হাজার সিনেমার মধ্যে আলী জায়গা পেয়েছে শুনে শরীর কাঁপছিল। এটাই জীবনের সেরা দিন হয়ে আছে,’ বললেন এই তরুণ অভিনেতা।

আল আমিন। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
আল আমিন। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

বুলিং থেকে স্বপ্নের পথে
করোনার সময় বন্ধুদের উৎসাহে গান গেয়ে ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করতে থাকেন আল আমিন। শুরুতে নেতিবাচক মন্তব্য আসত। সরু কণ্ঠস্বরের কারণে অনেকে অনেক কথা বলতেন। বন্ধুদের উৎসাহে পরে মেয়েদের কণ্ঠে গান গাইতে থাকেন। এই গান শুনেও অনেকে বুলিং করেন। কেউ কেউ বলতে থাকেন, তাঁর গান ছেড়ে দেওয়া উচিত। মন খারাপ হলেও এগুলো তাঁকে স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। এই অভিনেতা বলেন, ‘শাকিব খান থেকে জয়া আহসান—সবার ফেসবুকেই নেতিবাচক মন্তব্য থাকে। সেখানে আমি তো কেউ না, নগণ্য একজন। আমাকে কে কী বলল, সেগুলো গুরুত্ব না দিয়ে এখান থেকে ভালো কিছু করার শক্তি সংগ্রহ করতাম। এভাবে মন্দ কথাগুলো পাশ কাটিয়ে সফলতার পথে নিজেকে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়েছি।’

কান থেকে অভিনয়ে
একসময় অভিনয় করতে না চাইলেও এখন অভিনয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এই তরুণ মনে করেন, এই জীবনে ‘অভিনেতা’ শব্দটাই তাঁর সেরা প্রাপ্তি। এমনিতে অনেক দিন মনের মতো কিছু করতে পারছিলেন না। এ জন্য অনেকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তাঁকে অনেক কথাও শুনিয়েছেন। অভিনয় তাঁর এসব আফসোস ঘোচাল।

‘আলী’ স্বল্পদৈর্ঘ্যের পোস্টার
‘আলী’ স্বল্পদৈর্ঘ্যের পোস্টার

তিনি জানান, অভিনয় তাঁকে সম্মানের একটা জায়গা করে দিয়েছে। কান থেকে ফিরে অভিনয় করতে চান। ‘চঞ্চল চৌধুরী আমার পছন্দের অভিনেতা। তাঁর মতো অভিনেতা হতে চাই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, চঞ্চল ভাই যেমন পোশাক পরেন, আলী সিনেমায় আমার কস্টিউম অনেকটাই তেমন। অভিনয় ও গান নিয়েই আমার নতুন জীবনের পথচলা শুরু হবে। তার আগে কান উৎসবে আলী যেন পুরস্কার পায়, সে প্রত্যাশায় দিন গুনছি,’ বলেন আল আমিন।

ফ্রান্সে যাওয়ার পথে আল আমিন। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
ফ্রান্সে যাওয়ার পথে আল আমিন। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে