
অজয় দাশগুপ্ত
জনতা-জনার্দন আরও একটি দলের আত্মপ্রকাশ নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারে। দল গঠন ও বিলীন হওয়ার অনেক ঘটনাও তাদের মনে আসতে পারে। কেউ কেউ জানতে চাইতে পারে গণতন্ত্রে উত্তরণের গল্পটা কতদূর এগিয়েছে?
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। ফলে ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে আরও একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশে খুব একটা বিস্মিত হননি কেউ। তবে জনতা-জনার্দন আরও একটি দলের আত্মপ্রকাশ নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারে। দল গঠন ও বিলীন হওয়ার অনেক ঘটনাও তাদের মনে আসতে পারে। কেউ কেউ জানতে চাইতে পারে গণতন্ত্রে উত্তরণের গল্পটা কতদূর এগিয়েছে?
নতুন এই দলটির চেয়ারম্যান হয়েছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ প্রধান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। মহাসচিব হিসেবে তার সঙ্গী হয়েছেন সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, যিনি দুই বছর আগে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন।
শুক্রবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নতুন দলটি তাদের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেন।
শওকত মাহমুদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নবাগত কেউ নন। রাজনীতিতে নতুন হলেও ইলিয়াস কাঞ্চনও দেশজুড়ে পরিচিত এক মুখ।
শওকত মাহমুদ সাংবাদিকতা করেছেন দীর্ঘদিন। বিএনপিপন্থী এই সাংবাদিক সক্রিয় ছিলেন দলীয় রাজনীতিতেও। কিন্তু ২০২৩ সালের ২১ মার্চ তাকে দলটির সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত হওয়ার সময় তিনি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।
এর আগে ২০২২ সালের এপ্রিলে শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল বিএনপি। তখন দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তোলা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। তিনি পেশাজীবী সমাজের ব্যানারে একটি সমাবেশ ডেকে সরকার পতনের ডাক দিয়েছিলেন। সেই পটভূমিতে তখন ওই সমাবেশের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক ছিল না বলে দলটির নেতারা বলেছিলেন।
২০১৯–২০ সালের ডিসেম্বরেও ঢাকায় এ ধরনের দুটি বড় জমায়েত করে রাস্তায় নেমেছিল জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও পেশাজীবী পরিষদ। এরও নেতৃত্বে ছিলেন শওকত মাহমুদ। তখনও তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠনের দাবি করার পর বিএনপি শওকত মাহমুদকে দলে রাখা আর নিরাপদ বোধ করেনি।
ইনসাফ কায়েম কমিটির ওই অনুষ্ঠান থেকে জাতীয় সরকার গঠনের পর সেই সরকারকে বাংলাদেশের নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং তার অধীন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়েছিল। এই সংগঠনের আহ্বায়ক ছিলেন কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার। সদস্যসচিব হয়েছিলেন সাংবাদিক শওকত মাহমুদ।
মজার ব্যাপার হলো নতুন দলটির স্লোগান ‘গড়বো মোরা ইনসাফের দেশ’ রাখা হলেও আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের অতিথি তালিকায় ফরহাদ মজহার ছিলেন না। অন্তত সংবাদমাধ্যম তাই বলছে।
অবশ্য এ নিয়ে শওকত মাহমুদের আক্ষেপ থাকার কথা নয়। দলের কাণ্ডারি হিসেবে তো পেয়েছেন চলচ্চিত্রাভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনকে। ‘বসুন্ধরা’ নামে একটি চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে সত্তরের দশকের শেষদিকে ইলিয়াস কাঞ্চনের চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু হয়, যেটি আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রথম চলচ্চিত্রটিই বেশ কয়েকটি শাখায় জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। পরে অবশ্য তিনি আপামর জনসাধারণের ‘নায়ক’ হয়ে ওঠেন, বিশেষ করে ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ চলচ্চিত্র দিয়ে। ১৯৯৩ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চনকে হারানোর যন্ত্রণা বুকে চেপে তারকা খ্যাতির মোহ ছেড়ে পর্দা থেকে বেরিয়ে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে রাজপথে নেমেছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি গড়ে তোলেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামের সংগঠন।
তিন দশকের সেই আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে নতুন দলের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, “৩২ বছর নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনে যেভাবে আমি সততার সঙ্গে এদেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি, আমি নতুন এই দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এদেশের জন্য সততার সঙ্গে কাজ করতে চাই।”
তিনি সবার সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা চেয়েছেন। তার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য আগেভাগেই সবার কাছে অনুরোধ করে রেখেছেন।
নতুন দল গঠনের উদ্দেশ্য মূলত শওকত মাহমুদ তুলে ধরেছেন– “বাংলাদেশের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রতিটি গণঅভ্যুত্থান, বিপ্লব ও আন্দোলনের পর ওইসব সংগ্রামী চেতনায় নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের অভ্যুদয় ঘটে। যেহেতু রাষ্ট্র সাজবে একাত্তর ও চব্বিশের গণজাগরণের চেতনায়, সেই আঙ্গিকে নতুন দলের আবির্ভাব অনিবার্য।
“জাতির এই মাহেন্দ্রক্ষণে জাতীয় প্রত্যাশায় সকল প্রকার বৈষম্য, ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে- জনকল্যাণ, ইনসাফ ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে এবং গর্বিত জাতীয়তাবোধ দৃঢ়করণ করতে আমরা আজ নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করছি।”
আমরা যখন তারুণ্যের দোরগোড়ায় তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবার-পরিজনসহ নিহত হন। তার মৃত্যুর এক দশক পর বেশ হাঁকডাক করে মাঠে নেমেছিল ফ্রিডম পার্টি। ঢাকার হোটেল শেরাটনে ১৯৮৭ সালের ৩ অগাস্ট খন্দকার আবদুর রশিদ ও কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমানের নেতৃত্বে দলটি আত্মপ্রকাশ করেছিল। রশিদ-ফারুকের ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে কোনো অর্থেই কাঞ্চন-শওকতের ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’, যে দলটি নিজেদের পিবি নামে পরিচিত করাতে চায়, তার তুলনা চলে না।
ফ্রিডম পার্টি এসেছিল ত্রাস তৈরির জন্য। জন্ম হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের হাতে। ফ্রিডম পার্টি ভোটেও অংশ নিয়েছিল। তাদের মার্কা ছিল কুড়াল, যেন কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে সব কিছু বিনাশ করে দেবে। কার্যত দলটির বিনাশ ঘটেছে। ত্রাস সৃষ্টিকারী সেই পার্টি আজ অতীতের গহ্বরে হারিয়ে গেছে।
খন্দকার মোশতাকের ও অলি আহাদের দল। ডেমোক্রেটিক লীগ বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছিল খন্দকার মোশতাক আহমদের হাতে। ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ সালে এটি নিবন্ধন লাভ করেছিল। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে গড়া দলটিতে অলি আহাদ যোগ দেন। কিন্তু মতবিরোধের কারণে মোশতাককে বাদ দিয়ে আলাদাভাবে ডেমোক্রেটিক লীগ পুনঃগঠন করেন এবং দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে দলটি বিএনপি নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় জোটের শরিক হয়। অলি আহাদের মৃত্যুর পর সাইফুদ্দিন মনি দলটির নেতৃত্ব দেন। সাইফুদ্দিন মনির মৃত্যুর পর খোকন চন্দ্র দাস দলের নেতা হন। আদৌ দলটির অস্তিত্ব আছে কিনা খুঁজে দেখতে হবে। তবে অলি আহাদের কন্যা রুমিন ফারহানা বিএনপির উজ্জ্বল নেতাদের একজন।
মিজানুর রহমান চৌধুরী আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা ছিলেন। পরে সেই দল বিলুপ্ত করে যোগ দেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে। রাষ্ট্রপতি এরশাদের আমলে ৯ জুলাই ১৯৮৬ থেকে ২৭ মার্চ ১৯৮৮ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পুরো দল বিলুপ্ত করার ঘটনা অবশ্য এটিই প্রথম নয়, এর আগে ভাসানীর মৃত্যুর ভাসানীপন্থী পুরো ন্যাপ বিলীন হয়ে গিয়েছিল বিএনপিতে। মুসলিম লীগের ইতিহাস তো আমাদের সবার জানা আছে।
এরশাদ করুণায় আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাসদ ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত সংসদের প্রধান বিরোধী দলে পরিণত হয়েছিল।
খুব বেশি দিনের কথা নয়। এক-এগারোর সময়কাল। ফেরদৌস আহমদ কোরেশী প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) নামে দল গঠন করেছিলেন সেই সরকারের আনুকূল্য নিয়ে। ২০০৭ সালের ২১ জুন সংবাদ সম্মেলন করে পিডিপি আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সেবার বইমেলার সময় আমি দেশে গিয়েছিলাম। তখনও মেলা জমত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। হঠাৎ বাঁশির শব্দ আর মোটর সাইকেলের ধূলায় আচ্ছাদিত মাঠে দেখলাম দলে দলে তরুণরা ঢুকছে। শক্তিপ্রদর্শন করতে এসেছিল তারা। মাথায় পট্টি বাঁধা এসব তরুণদের সবাই ছিল নবগঠিত কিংস পার্টি পিডিপির নেতা কর্মী। এক সময়ের ছাত্রলীগ নেতা, ডাকসুর ভিপি কোরেশী পরে বিএনপিও করেছিলেন। এককালের তুখোড় ছাত্রনেতা একজন ব্যর্থ রাজনীতিবিদের তকমা নিয়ে প্রায় ৮০ বছর বয়সে যখন ধরাধাম ছেড়ে যান, তখন পৃথিবীজুড়ে আতঙ্ক হয়ে বিরাজ করছিল করোনা মহামারি। তার গড়া পিডিপির নিবন্ধন বাতিল হয়েছিল, বোধ করি এখন আর কেউ নেই এই দলের ধ্বজাধারী। সেই দল মাথা তুলে দাঁড়াবার আগেই অক্কা পেয়েছিল। এক-এগারোর সরকার যাই হোক, সে আমলে ছিঁচকে চুরি-বাটপাড়ি, অশান্তি চাঁদাবাজি ছিল শূন্যের কোঠায়। কিন্তু তাতে কী?
বাংলাদেশের মানুষ তখন নতুন রাজনৈতিক দল চায়নি। কেন চায়নি তার উত্তর আমাদের অননুমেয় নয়। বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত দুই ধারায় বিভক্ত, একদিকে আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে বিএনপি। অবশ্যই এর বাইরে জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং সিপিবি-বাসদসহ বামপন্থীরাও রয়েছে। এদের ঘিরেই আবর্তিত হয় দেশের রাজনীতি। মনে রাখতে হবে একেক সময় একেক ধরণের বাস্তবতা। এখন যে বাস্তবতা তার পেছনে আছে নতুন ইতিহাস। বিগত সরকারের আমলকে অচলায়তন বলা চলে। টানা ষোল বছর জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া দেশ শাসন করতে করতে ধরে দলটি ধরে নিয়েছিল দেশটা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। দেশ তাদের একার। কথা বলতে পারেনি মানুষ। পারেনি রাজনীতি করতে। করতে পারলে বা করতে দিলে কাউকে দেশ ছেড়ে পালাতে হতো না। সে যাই হোক, একমুখি দল আর সং সাজা নেতাদের সার্কাসের সং মনে করা জনগণ ভেতরে ভেতরে ফুঁসছিল। যে কারণে আজ দেশের সবচেয়ে পুরানো দলগুলোর একটি আওয়ামী লীগ খাতায় থাকলেও বাস্তবে নেই।
প্রকৃতি কোন কিছু অপূর্ণ রাখে না। শূন্য রাখা প্রকৃতির স্বভাববিরুদ্ধ কাজ। ফলে নতুন দল হবে, পুরোনো দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের ভয় এসব দল কি সেই সব দলগুলোর মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যাবার জন্য আসছে না তো? উত্তরটা এখনই দেয়া যাবে না। তবে অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। রাজনীতি করতে হলে নেতা হতে হলে জনগণের কাছে যেতে হয়। জনগণের নাড়ি বুঝতে হয়। বিশেষত আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ কি চায় কেন চায় সেটা জানতে হয়। যে দলগুলো বিলাসবহুল হোটেল বা ভেন্যু ভাড়া করে আত্মপ্রকাশ করছে, তারা কি সে হোমওয়ার্ক করে মাঠে নেমেছে? আমরা যদি উপমহাদেশের রাজনীতির দিকে তাকাই দেখব স্বয়ং গান্ধী, জিন্নাহ বা সুভাষ বোস ও মাঠে নামার আগে দেশ চষে বেড়াতেন। আম জনতার সঙ্গে মিশে তারপর নিজের মত দিতেন। দলকে সেভাবে সাজাতেন।
গণতন্ত্রের বড় সুবিধা হচ্ছে বহু মত আর পথের মিলন। আবার গণতন্ত্রের সমস্যা হচ্ছে বহুত্ববাদকে নিজের মত করে ভাবা। এটা আমার একান্তই নিজের ধারণা এখন যে দলগুলো তৈরি হচ্ছে, নতুন নতুন নাম মাঠে আসছে, তারা বহুত্ববাদের আড়ালে নিজেদের ইচ্ছা চরিতার্থ করতে চাইছে। সেটা বড় দোষের কিছু বলছি না। কিন্তু তাদের জনসম্পৃক্ততা কোথায়? আবারও বলছি আন্দোলনের মাঠে মানুষের নামবার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার। সংস্কার প্রয়োজন, কিন্তু সংস্কারের নামে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা, সাধারণ মানুষ মেনে নেবে বলে মনে হয় না। মানুষের চাওয়ার সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জন্য যে বিশাল কর্মপ্রবাহ দরকার, গ্রামগ্রামান্তরে পদচারণা দরকার তা কিন্তু নেই। শহুরে মানুষ হুঁশিয়ার। তারা ঘরপোড়া আগুনে আলু পোড়া খেতে চাইবেন না।
গণতন্ত্র বলতে যদি আমরা জনগণের শাসন বুঝি তাহলেও সাবধানতার দরকার আছে। কারণ গণতন্ত্র বহু দেশে বহু সমাজে হিংসা হানাহানি বন্ধ করতে পারেনি। গণতান্ত্রিক ভারত বা আমেরিকাতে এমন হানাহানি হররোজ ঘটে। এত বছর পরও তারা কেন তা দমন করতে পারল না?
একটা গল্প বলি: একবার এক রাজা রাজ্যজুড়ে ঘোষণা দিলেন “সাত সাগর তের নদী পাড়ি দিয়ে প্রথম যে বিশাল পাহাড় আছে, তার গুহায় থাকে এক দৈত্য, যার মুখ থেকে আগুনের গোলা বের হয়; এর মাথা থেকে মুকুটটা নিয়ে এসে আমার মেয়েকে যে দিতে পারবে আমি তার সঙ্গেই মেয়ের বিয়ে দেব।” তিনি এও বলে দিলেন, “দৈত্যটা ছয় মাস ঘুমায়, ছয় মাস জেগে থাকে।” এ ঘোষণা শুনে রাজ্যের বুড়ো-জোয়ান অনেকেই রাজসুখের আশায় সেই মুকুট উদ্ধারে রওয়ানা দিল, কেউ আর ফিরে আসল না। এক রাজকুমার আবার সেই রাজকন্যাকে পছন্দ করত, সে ভাবল, আমি তো রাজকুমার, আমি পারবই। এই বলে সেও রওয়ানা দিলো, গুহা পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেখে দৈত্যটা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। সে তো হাসিমুখে মুকুটটা নিয়ে উল্টো দিকে ফিরে হাঁটা শুরু করলো। সব ঠিকই ছিল, শুধু সেই রাজা কিন্তু একটা জিনিস বলেনি, সেটা হলো, ‘দৈত্যটা দুমুখো’, এক মুখ সামনে আরেক মুখ পেছনে। যখন এক মুখ ঘুমায় তখন আরেক মুখ জেগে থাকে। আর কি! সেই দ্বিতীয় মুখের আগুনে বাকিদের মতো সেই রাজকুমার পুড়ে ছারখার হয়ে গেল।
ফলে সাধু সাবধান। গণতন্ত্রের জন্য রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল জরুরি। তবে দৈত্য থেকে সাবধান থাকাটা আরও জরুরি।