চুপ করে থাকার আবশ্যকতার কথা ইংরেজ কবি জন ডান বলে গেছেন খুব নাটকীয়ভাবে, সেই পঙ্ক্তিতে যেটি রবীন্দ্রনাথ স্মরণ করেছেন তার ‘শেষের কবিতা’য় প্রেমিক বলছে প্রেমিকাকে, দোহাই তোর চুপ কর, ভালোবাসিবার দে অবসর। মেয়েরা সারাক্ষণ বক্বক্ করেÑ এই অতিকথন খুবই প্রচলিত। পুরুষেরই প্রচারণা হবে। পুরুষ প্রচারিত গল্প আছে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে গাইড বলছিল একদল মহিলা দর্শককে, ‘এটাই সেই বিশ্ববিখ্যাত জলপ্রপাত, ভদ্রমহিলারা যদি চুপ করেন তা হলে এর গগনবিদারী নিনাদ শুনতে পাবেন।’ সব দেশেই এ ধরনের কাহিনি শুনতে পাওয়ার আশঙ্কা, সব দেশেই তো পুরুষের আধিপত্যÑ মোটামুটি।
কিন্তু জাপানের ঘটনা কী? সেখানে তো শুনি সবাই চুপচাপ এবং মেয়েরাই বেশি চুপচাপ ছেলেদের তুলনায়। হবেও-বা। নিয়মের ব্যতিক্রম থাকে যাতে নিয়ম যে আছে তা প্রমাণিত হয়। বিদেশি টেলিভিশনে সেদিন দেখলাম জাপানিদের ওই চুপ করে থাকা সম্বন্ধে এক ইংরেজ সতর্ক করে দিচ্ছেন অন্য ইংরেজদের। জাপানে আসুন, বলছেন তিনি, জাপানে এখন বিনিয়োগের ভালো সুযোগ রয়েছে। তবে দরকষাকষির সময় একটা বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। আলাপ-আলোচনা চলছে, এই সময়ে হঠাৎ দেখবেন আপনার জাপানি প্রতিপক্ষ চুপ হয়ে গেছে। তখন আপনি হয়তো ভাববেন তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে কিংবা আলোচনা ভেঙে যাচ্ছে। এ রকম ভেবে আপনি হয়তো এমন কিছু বলে ফেলবেন, যা আপনি বলতে চাননি কিংবা বলবেন বলে আদৌ ভাবেননি। তা হলে বিপদে পড়বেন, ভদ্রলোক বলছেন। কেননা জাপানিদের ওই চুপ করে থাকা অসম্মতি, বিরক্তি বা ক্রোধ বোঝায় না। বোঝায় যে তারা চিন্তা করছে, ভেবে দেখছে, কী বলবে ঠিক করছে। বুঝুন তা হলে, যে ইংরেজ ব্যবসায়ী জাত বলে জগদ্বিখ্যাত, ব্যবসা করতে বেরিয়ে যে সাম্রাজ্য গড়ে তুলল, যার এক সওদাগর কোম্পানির সামান্য কেরানি রবার্ট ক্লাইভ ঘুষ, জাল দলিল, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি এসবের সাহায্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত গড়ে তুলেছিল তাদেরও আজ পরামর্শের প্রয়োজন হচ্ছে রহস্যময় জাপানি নিশ্চুপতার মুখোমুখি হয়ে। এত সব রহস্য পরিষ্কার হয়ে গেছে, কিন্তু জাপানিদের চুপ করে থাকার রহস্য এখনো অপরিষ্কারই রয়ে গেল?
আগ বাড়িয়ে কথা বলার জন্য ইংরেজরা নিজেরা বিখ্যাত নয়। তাদের সম্পর্কে বরং উল্টো অভিযোগ, তারা কথা বলে কম, পরিচয় না থাকলে যে হাত বাড়িয়ে দেবে তা দেয় না। এ নিয়েও তো গল্পের অভাব নেই। এমন যদি হয়, দুর্ঘটনায় বিমান ভেঙে পড়েছে নির্জন এক দ্বীপে। বেঁচেছে শুধু তিনজন; দুজন পুরুষ, একজন মহিলা। তখন ব্যাপার কেমন হবে? নির্ভর করবে তারা কোন জাতির লোক তার ওপর। তারা তিনজনই যদি ইংরেজ হয়, তবে দেখা যাবে অত বড় দুর্ঘটনার পরও বেঁচে যাওয়ার আনন্দ সত্ত্বেও তিনজনই চুপচাপ বসে আছে। কারণ কী? কারণ হলো কেউ তাদের একজনের সঙ্গে অন্যজনের পরিচয় করিয়ে দেয়নি। সেই ইংরেজও কি তা হলে জাপানের কাছে আজ মার খাচ্ছে?
চুপ করে আছে বলেই যে চুপ করে আছে, জাপানিদের সম্পর্কে এটা মনে না করার প্রবণতা বেশ ব্যাপ্ত। মনে করা হয়, তারা ভাবছে। চুপ করে ফন্দিফিকিরে আছে। এ নিয়েও গল্প রয়েছে। ধরা যাক একটা হাতি এসেছে। সেটিকে দেখে কোন জাতির লোক কী ভাববে? সেখানে যদি একজন ইংরেজ থাকে তা হলে সে ভাববে, হাতিটি তো বেশ, নিশ্চয়ই আমাদের উপনিবেশগুলোর কোনো একটি থেকে এসেছে। একজন জার্মান ভাববে, আমাদের দেশে হাতি নেই, কিন্তু থাকলে সেই হাতিই হতো পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আমেরিকান ভাববে, বেশ সুশ্রী তো দেখতে, এটি আমি কিনে নেব। ফরাসির চিন্তা হবে কত সুস্বাদু খাবার না জানি এর মাংস দিয়ে তৈরি করা যায়। আর জাপানি কী করবে? সে ভাববে হাতিটি কী ভাবছে। ধরতে চাইবে ওই বিশেষ হস্তীটির চিন্তাধারা কোন দিকে প্রবহমান। চুপচাপ থেকে জাপানিরা কেবল মতলব ঠিক করে যে তা নয়, অন্যে কী মতলব ফাঁদছে সেটাও উদ্ধার করতে চায়। জাপানিরা এ জন্যই এত রহস্যময়। তাদের নিশ্চুপতা এত ভারী।
এসব গল্পে বাঙালির উল্লেখ নেই, বাঙালিকে নিয়ে কেই বা ভাবে। সে নিজেই ভাবে না। কিন্তু ধরা যাক না কেন ওই হাতিটিকে একজন বাঙালিও দেখল; দেখে তো, দেখে না যে তা তো নয়। হাতিটিকে দেখে বাঙালি কী ভাববে? তার প্রথম ভাবনা হবে, চাপা দেবে না তো। সেই ভয় কাটিয়ে উঠলে ভাবতে পারে হাতিটির যে মালিক না জানি তার কত টাকা। আচ্ছা, সে কি আমাকে একটা চাকরি দিতে পারে না? ওই হাতিটির যতœ-আত্তি নেওয়ার জন্যও তো অনেক লোক দরকার হবে, অনেক রকমের। নিক না কেন আমাকে, তাদেরই একজন করে।
হাতির সামনে বাঙালিও চুপ করে থাকবে ঠিকই, কিন্তু জাপানির মতো ভাববে না সে হাতি কী ভাবছে। তাকে ভয়ে পাবে। তবে আশায় থাকবে। ওই যে ভয় বললাম, হাতির পায়ের তলে পিষ্ট হওয়ার। এবং আশা ওই একটাই, হাতির কর্মচারী নিযুক্ত হওয়ার। ভাববে। প্রকাশ করবে না ভাবনা। অন্যকে বলবে না। পাশে যদি বাঙালি থাকে আরেকজন, তাকেও নয়। পার্শ্ববর্তী বাঙালিকে তো নয়ই। পাছে সে সম্ভাব্য চাকরিটা হাতিয়ে নেয়। বাঙালিমাত্রই বাঙালির প্রতিদ্বন্দ্বী। আর ভয়ের কথা? ভয়ের কথাটা তো অন্য মানুষকেও বলা যায় না। শোক মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে পরস্পর থেকে এটা খুবই সত্য, কিন্তু তাই বলে ভয় যে ঐক্যবদ্ধ করে একের সঙ্গে অন্যকে তা নয়। যার যার ভয় তার তার কাছে।
সব বৈশিষ্ট্যের পেছনেই বাস্তবিক কারণ থাকে, জাতিগত বৈশিষ্ট্যের পেছনেও বটে। থাকতেই হবে। ওই যে আমাদের ভয় ও আশা এরও কারণ রয়েছে বৈকি। ঐতিহাসিক সব কারণ। কত যুগ আমরা বিদেশি শাসনের অধীনে ছিলাম। তারা ছিল ওই হাতির মতোই। যত দূরে থাকে ততই মঙ্গল, কাছে এলে ভয়ঙ্কর বিপদ। পায়ের তলে পিষে ফেলবে। পিষে ফেলেছেও। আর্য বলি, মোগল-পাঠান-ইংরেজ পাঞ্জাবি বলি সবারই ওই এক কাজ। রাষ্ট্রের প্রতিনিধি পুলিশ এখনো যদি গ্রামে আসে, তবে গ্রামবাসী উৎফুল্ল হয় না, পালানোর কথাই ভাবে। গরিবের ঘরে হাতির পাÑ এই প্রবচন এমনি এমনি তৈরি হয়নি। অভিজ্ঞতার সারাৎসার লুণ্ঠন করে বের হয়ে এসেছে। হাতি মানেই গরিব মারার কারখানা, এই ঐতিহাসিক বোধ আজ হঠাৎ উবে যাবে কী করে? হাতি দেখলে আমরা ভয় পাব না কেন?
আর চাকরি? সেটাই তো প্রধান জীবিকা আমাদের। কৃষকের কথা আলাদা। সে পড়ে থাকে মাটি আঁকড়ে, যতক্ষণ পারে। মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হলে তার সর্বনাশ হয়ে যায়, কোথায় যে ভেসে যায় চলে, কোনো হদিস থাকে না। কৃষক হাতি দেখে না, কোনো কিছু আশাও করে না। কিন্তু যারা কৃষক নয়, উঠে এসেছে ভূমি ছেড়ে, তারা আর কী করবে চাকরি-বাকরি ছাড়া? ব্যবসা-বাণিজ্যে বাঙালির উৎসাহ নেই, এ কথা বৈজ্ঞানিক প্রফুল্লচন্দ্র রায় অবিরাম বলেছেন। কথাটা সত্য বটে, তবে আংশিক। বাকি অংশ হলো এই যে, বাঙালির সামনে ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ খোলা ছিল না। তার হাতে পুঁজি ছিল না। ব্যবসা-বাণিজ্য যা করার তা জগৎশেঠরা, ইংরেজরা, মাড়োয়ারিরা, দিল্লিওয়ালারা আরামসে করেছে। বাঙালি পারেনি। বাঙালির জন্য মোক্ষ লাভের পথ ছিল ওই একটিইÑ চাকরি। পথটা মোটেই প্রশস্ত ছিল না, বিস্তর ঠেলাধাক্কা ছিল সেখানে। এখনো আছে। এখন বরং আরও বেশি। লাখ লাখ বাঙালি আজ পরিপূর্ণ কিংবা অর্ধবেকার। হাতির লেজ থেকে মাছি তাড়াতে হবেÑ এ পদের জন্য বিজ্ঞাপন দিক না কোনো হাতিওয়ালা, দেখা যাবে কত হাজার দরখাস্ত পড়ছে। হাতির মাহুত হব, এই কল্পনা অনেক বেকার মানুষই করবে, না পারলে হাতির লেজ পাহারা দেব, এ রকম সুখ-কল্পনা করার মতো মানুষেরও অভাব হবে না এই সোনার বাংলায়।
ওই ভয়, এই আশা, এটা বড় মর্মান্তিক সত্য বাঙালির জন্য। পরাধীনতা এ দেশে পুঁজির বিকাশে সাহায্য করেনি, কৃষি থেকে যে উদ্বৃত্ত এসেছে তা পাচার হয়ে গেছে কিছুটা, বাকিটা চলে গেছে ভোগবিলাসে; পুনরুৎপাদনে কিংবা শিল্পায়নে নিয়োজিত হয়নি। ফলে পরমুখাপেক্ষিতা বড়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনো আমরা ভাবি পুঁজি আসবে বিদেশ থেকে। সাহায্য, ঋণÑ এসব বিদেশিরাই দেবে। আত্মনির্ভরশীল জাতি আমরা কবে হব কে জানে। বারবার স্বাধীন হলাম, কিন্তু আত্মনির্ভরশীল হওয়া হলো না। বরং পরনির্ভরতা বাড়ছে তো বাড়ছেই, যেন অন্তহীন। বিদেশিরা চাকরি দিলে আত্মহারা হয়ে পড়ি, পিঠ চাপড়ে দিলে তো কথাই নেই। অত্যন্ত গভীরে চলে গেছে পরগাছাবৃত্তি। সব স্তরেই। পরগাছারা কখনই স্বাধীন নয়, আশ্রয় চলে গেলে তাদের আর কিছুই থাকে না; সে জন্য প্রাণপণে জড়িয়ে ধরে রাখে সে আশ্রয়টিকে। আমরা বলি আমরা গভীরভাবে ধর্মপ্রাণ। আসলে আমরা আশ্রয়প্রার্থী। আমাদের ধর্মচর্চার মধ্যে আধ্যাত্মিকতা খুবই সামান্য, প্রায় সবটা জুড়েই রয়েছে আশ্রয়ের জন্য প্রার্থনা। পরকাল পরের কথা, ইহকালেই তো বাঁচি না। ঈশ্বর, তুমি না বাঁচালে, কে বাঁচাবে বলো, কে আছে আমার? হাতিকে দেখে চাকরির কথা ভাবব না তো অন্য কিছু ভাবব? হ্যাঁ, খাদ্য আমরা ভালোবাসি। খুবই। কিন্তু হাতিকে ধরে আহার করা, তাকে রন্ধন করা পাকের ঘরে নিয়ে গিয়ে তেল-মসলা মেখে, এটা ফরাসিরা ভাবতে পারে, আমরা কে। ইংরেজদের উপনিবেশ ছিল, ভাবুকগে তারা যে হাতি এসেছে তাদের অধীনস্থ দেশ থেকে; আমেরিকানদের টাকা আছে, কিনুকগে তারা হাতি-ঘোড়া। জার্মানরা ভাবে তারাই শ্রেষ্ঠ, ভাবুকগে; জাপানিরা দেখতে ছোটখাটো, হাতির মনস্তত্ত্ব নিয়ে তারা বড় বড় চিন্তা যদি করে আমাদের কী বলার আছে; আমাদের জন্য হস্তীর পুচ্ছমর্দনের চাকরি পাওয়াই যথেষ্ট পাওয়া। আত্মসমর্পণ বেশি বলেই জীবনযাত্রার মান ওঠে না, আমাদের সম্পর্কে এটা যারা বলেন তারা মিথ্যা বলেন না। মুখ দিয়েছেন যিনি আহারও দেবেন তিনিÑ এই যে আত্মসমর্পণ তথা পরনির্ভরতা সেটাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটা প্রধান কারণ বললে অত্যুক্তি হবে কি? কিলবিল করছে মানুষের সংখ্যা, আহার নেই, আশ্রয় নেইÑ এই যে দৃশ্যপট এ তো মিথ্যা নয়। উন্নত জীবনের আশা কিংবা আকাক্সক্ষা কোনোটাই এ মাটিতে আগুন জ্বালায় না; চোখের দৃশ্য-অদৃশ্য জল মাটিকে কাদাতে পরিণত করে। তাল তাল কাদা দেখা যায় চতুর্দিকে। আমরা রীতিমতো কর্দমাক্ত।
বাঙালি চুপ করে থাকে। ভয়ে। পাছে চাকরি চলে যায়, পাছে কর্তারা বিরূপ হয় এই ভয় তো আছেই; আরও ঘটনা রয়েছে, সেটা হলো উদ্বেগ। কত কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন সে, তার কি হিসাব আছে? না, নেই। অধিকাংশ বাঙালি কৃষক সে ঘুমিয়ে পড়ে সন্ধ্যা না হতেই। তার হাতে আলো জ্বালবার সামর্থ্য নেই। শুয়ে শুয়ে যে ঘুমায় তা নয়; মশার ও দুশ্চিন্তার দংশনে বড়ই অস্থির থাকতে হয় তাকে, ঘুম আসে না। চুপ করে আছি বলেই যে নানা বিষয়ে ভাবছি এটা জাপানিদের সম্বন্ধে সত্য হতে পারে, আমাদের সম্বন্ধে সত্য নয়। আমরা ভাবনা কিংবা উদ্ভাবনার জন্য প্রসিদ্ধ নই। আর কথা বলে সময় নষ্ট না করে যে সময় বাঁচাচ্ছি তাও নয়, যা করছি তা হচ্ছে সময় থেকে ছিটকে পড়া, বিচ্যুত হওয়া। তবে সময়ের তো কোনো অভাব নেই, আমাদের জন্য। মানি ইজ নো প্রবলেম, আমাদের একজন সেনাপতি কাম রাষ্ট্রপতি বলে গেছেন। আরও সত্য হলো, টাইম ইজ নো প্রবলেম। আমরা অনন্তকাল নিয়ে আছি, তুচ্ছ আমাদের জন্য আজ, কাল কিংবা পরশুর হিসাব।
তাই বলে কি বাঙালি সবাক নয়? বলে কী! যে বাঙালি সুযোগ পেয়েছে তার মতো সবাক আর কে আছে? কত অজস্র তার বলবান কথা। কেউ শোনে না, শুনলেও মন দেয় না, কিন্তু অন্ত থাকে না কথকতার।
হাতির কথা উঠেছিল। হাতির চোখ দুটো ছোট ছোট, কিন্তু সে চোখ খুবই সতর্ক। জাপানিদের মতো। হাতি চুপচাপ থাকে, সেটাও জাপানিদের মতোই। এই দুই ব্যাপারে হস্তী এবং জাপানিদের কাছে আমাদের শিক্ষণীয় রয়েছে, নিঃসন্দেহে। জাপানিদের কাছ থেকে শ্রম ও ব্যক্তিগত জীবনে পরিচ্ছন্নতার (অবশ্যই রাষ্ট্রীয় জীবনে নয়) শিক্ষাও নিতে পারি। কিন্তু নিশ্চুপ হাতির একটা বিশেষ গুণ রয়েছে, যেটা নিশ্চুপ জাপানিদের মনে হচ্ছে নেই। হাতি ভোলে না। অন্তত গল্পে আমরা তাই শুনেছি। মনে রাখে এবং শোধ নেয়। জাপানিরা এ বিষয়ে ভিন্ন রকম। পত্রিকায় কদিন আগে একটি চিঠি ছাপা হয়েছে। দুজন জাপানি নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল, জাপানি ভাষা বোঝেন এমন একজন বাঙালি তাদের কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেছেন। তারা বলছিল, হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে রুশরা বোমা ফেলেছিল। এ থেকে মনে হয়, জাপানিদের পাঠ্যপুস্তকে ইদানীং এ রকমই লেখা হচ্ছে। নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তারা কোরিয়ার কাছে মাফ চেয়েছে ইতোমধ্যে, ওদিকে আমেরিকানদের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে অ্যাটম বোমা ফেলার অপরাধ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বসে আছে। (দোষ এখন ওই নন্দ ঘোষ সোভিয়েত ইউনিয়নের।) ইতিহাস বিকৃতির এ শিক্ষাটা আমরা যেন কারো কাছ থেকে না নিই, জাপানিদের কাছ থেকেও নয়।
কিন্তু মূল প্রশ্নটা রয়েই যায়। সেটা হলো, আমরা কতকাল এমন চুপচাপ বসে থাকব? মাঝেমধ্যেই ক্ষেপেটেপে উঠে মুক্তিযুদ্ধ করব, তারপর আবার সব চুপচাপ? বোবার শত্রু নেই শুনেছি, কিন্তু আমাদের শত্রু তো চতুর্দিকে। আমরা আপস করতে চাইলেও তারা আপস করবে না। আমাদের একেবারে শেষ করে দেবে।
য় সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উৎসঃ আমাদের সময়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন