মিথ্যে, ডাহা মিথ্যে এবং পরিসংখ্যান
15 April 2016, Friday
ব্যবসা বা করপোরেট জীবনে যারা ব্যস্ত তাদের জন্য মার্ক টোয়েনের অবিনশ্বর বক্তব্য, যার অনুবাদ দিয়ে এই লেখার শিরোনাম, বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। জনমত যাচাই, পণ্য বাজারজাতকরণ, এমনকি পণ্যের মূল্যনির্ধারনে আজকাল জরিপের ওপর নির্ভরশীলতা বিচ্ছিরি পর্যায়ে চলে এসেছে। জরিপ নিয়ে ফাঁকিবাজি, স্বার্থ সিদ্ধেফল পরিবর্তন এবং ফল বিশ্লেষণে যত্নহীন আচরণের কারণে জরিপের কার্যকারিতা এবং তার প্রতি বিশ্বাসের ধস নেমেছে। শংকার বিষয় এই, প্রচার মাধ্যমে জনমত জরিপের প্রকাশিত ফল ভুল ধারণার জন্ম দেয়। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এরকম জরিপ ভুল সিদ্ধান্তের জন্য দায়ী। যার কারণে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও লোকসান দুটোই হয়।
প্রতিষ্ঠান যতই প্রসিদ্ধ হোক, ভুল তাদের হবেই। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বড় ভুলের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবস্থাপকরা রোষানলে পড়লেও বিদেশিরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পার পেয়ে যান। একটি উদাহরণের বেলায় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের সমর্থনে জরিপের ফল এমন স্বকার্যে পরিবর্তন হলো যে, প্রাক্কলিত বিক্রির ধস কম দেখানো হয়। ক্রেতা জরিপ যেখানে দেখিয়েছিল ৪০% কম বিক্রি, প্রস্তাবে তাকে দেখানো হয় ১৮%। প্রস্তাবিত কমতি লাভ দিয়ে পোষানো যেত, কিন্তু ৪০% কম বিক্রি মানেই লোকসান। যিনি এই কাজটা করেছিলেন তার শ্বশুর মহাশয় প্রতিষ্ঠানের বৈশ্বিক চেয়ারম্যানের গলফ সঙ্গী ছিলেন। এবং একজন ধুরন্ধর মার্কেটিং ব্যবস্থাপক বলেই প্রস্তাবিত ধসের বেশি হওয়ার জন্য তিনি সহজ ওজর হাতে রেখেছিলেন। তা হলো সময়মত বিজ্ঞাপনের কাজ সম্পন্ন না হওয়া। সে বছর বোনাসের অবস্থা কি ছিল তা অনুমেয়, তবে আন্তর্জাতিক কর্মচারী বলে তার বোনাস নিশ্চিত ছিল। স্থানীয় মূলধনকারীদের কাছে জবাবদিহিতা করতে হয়েছে স্থানীয়দের।
ভারতে বিজেপি’র পুনঃনির্বাচন প্রচেষ্টার পূর্বে সকল জনমত জরিপ, এমনকি এক্সিট পোলে বলা হয়েছিল- দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলেও জিতবে। হলো একদম উল্টো। এবারে দোষ গিয়ে পড়ল সে সব ভোটারের ওপর, যারা জরিপে বলে থাকেন তারা সিদ্ধান্তহীন। প্রতি দেশেই এমন ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩০%, এবং সহজেই অনুমেয় যে তারা সব অংক বিফল করতে পারেন।
আন্তর্জাতিক রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট এর জরিপ অনুযায়ী, জরিপকৃতদের মতামতে বাংলাদেশ সঠিক দিকে এগুচ্ছে। কিন্তু আইন শৃংখলার অবস্থা ভালো-তাদের এই মতামত কেমন যেন শোনায়। তাহলে এত শিশু অপহরণ এবং মৃত্যু, এত ধর্ষণ, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, এগুলো কি জনগণের কাছে গুরুত্ব বহন করে না?
সমস্যাটির আরেকটি দিক হচ্ছে জরিপের পদ্ধতিগত দুর্বলতা । একথা অজানা নয় যে, তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে যাদের নিয়োগ করা হয় তাদের অনেকেই ডাটা পূরণ করে থাকেন। আর পয়েন্ট অব সেল জরিপে কি হয় তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। আর রূঢ় সত্যকেই বা কিভাবে এড়ানো যায়? জরিপে সময় দিতে অনেকেই চান না। যে কারণে ইনপুট কতটুকু গুনগত মানটাও ভাবার মতো। এর অর্থ এই নয় যে জরিপের প্রয়োজন নেই। জনমত যাচাইয়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, তবে একমাত্র উপায় নয়। এর উপর নির্ভরশীলতায় ভারসাম্যের প্রয়োজন।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন