Image description

অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের চেয়েও বেশি অর্থ ডিসেম্বরের এক মাসেই ছাড় হওয়ার পেছনে বাজেট সাপোর্ট বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নভেম্বর পর্যন্ত তেমন কোনো বিদেশী অর্থ ছাড় হয়নি।দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থসহায়তা খুঁজছে বর্তমান সরকার। তবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বৈদেশিক ঋণের অর্থ ছাড় হয়েছিল কেবল ১ হাজার ৫৪৩ মিলিয়ন ডলার। তবে গত ডিসেম্বরে এক মাসেই ছাড় হয়েছে প্রায় ২ বিলিয়ন বা ২ হাজার মিলিয়ন ডলার। ফলে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৩২ মিলিয়ন ডলারে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) গতকাল প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যে এ চিত্র উঠে এসেছে।

অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের চেয়েও বেশি অর্থ ডিসেম্বরের এক মাসেই ছাড় হওয়ার পেছনে বাজেট সাপোর্ট বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নভেম্বর পর্যন্ত তেমন কোনো বিদেশী অর্থ ছাড় হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক হিসাবেও তেমন কোনো বহুপক্ষীয় সহায়তা যুক্ত হয়নি। এখন যদি বিদেশী অর্থছাড় বাড়ে তবে তা রিজার্ভের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নভেম্বর পর্যন্ত তেমন কোনো অর্থ ছাড় হয়নি। ডিসেম্বর শেষে এটা হয়েছে। বাজেট সহায়তাও এসেছে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে অর্থিক হিসাবে বহুপক্ষীয় কোনো বৈদেশিক অর্থ যুক্ত হয়নি। এখন অর্থছাড় বাড়লে তা রিজার্ভের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

 

ইআরডির তথ্যমতে, এক মাসে ২ বিলিয়ন ডলার ছাড় হলেও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অর্থ ছাড় হয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থ ছাড় হয়েছিল ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আবার হঠাৎ অর্থছাড় বাড়লেও গতবারের তুলনায় এবার ঋণ প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭ দশমিক ১১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।

 

বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকে গত ডিসেম্বরে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা এসেছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে ৫-৭ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ আরো কয়েক বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে।

এদিকে দেশের সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের হারও কমে এসেছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয়ের গতিও কমেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মোট বরাদ্দের কেবল ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ। যেখানে গত বছরের একই সময়ে ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে প্রায় ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার এডিপি বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে জুলাই-নভেম্বরে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমলেও অর্থ পরিশোধ বাড়ছে। এমনকি গত কয়েক মাসে অর্থপ্রাপ্তির চেয়ে অর্থ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ঢের বেশি। আগের নেয়া ঋণের কারণেই বৈদেশিক ঋণ

পরিশোধ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধে বিভিন্ন ঋণের সুদ ও আসল মিলিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের পরিশোধ করেছে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করেছিল ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ।

ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, গত অর্থবছরে সরকারের বিদেশী ঋণ পরিশোধ ৩ বিলিয়নের ঘরে থাকলেও চলতি অর্থবছরে তা ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। কেননা গত অর্থবছরে বিদেশী ঋণের আসল পরিশোধ যে গতিতে বেড়েছে, সুদ বাবদ ব্যয় বেড়েছে তার চেয়েও দ্রুতগতিতে। একই কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা। তাই প্রকল্প বাছাইয়ে আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শ তাদের।

এদিকে মাসের ব্যবধানে অর্থছাড় বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে ইআরডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সংস্থাটির উইং চিফ সম্প্রতি ছুটি থেকে ফিরেছেন। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনিও।