জনমনে ধারণা ও প্রেসিডেন্ট প্রসঙ্গ
03 November 2024, Sunday
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টকে ‘৩৬ জুলাই’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। ওই দিন জনগণ গণভবন দখল করে নেয়। এর মধ্যে কিছু লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। অবশ্য সরকার এর প্রতিকারের ব্যবস্থা করে। তখন জনমনে এমন একটি ধারণা ছিল যে, তিন বাহিনীর প্রধান হবেন ক্ষমতার মূল অধিকারী এবং সেনাবাহিনীর প্রধান হবেন মূল ব্যক্তি। ইউনূস সাহেব নামেমাত্র প্রধান হবেন। যদিও তাকে ছাত্র-জনতাই বরণ করে নেয়। তখন জনগণের মধ্যে আওয়ামী লীগের আতঙ্ক ছিল। এতবড় একটি দল, তাও সশস্ত্র কর্মিবাহিনী। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। জনগণের কাছে স্বস্তির কারণ ছিল প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং সরকারের পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া। কিন্তু জনমনে আবার এই আশঙ্কা ছিল যে, ক্ষমতার কেন্দ্র তিনটি : ১. সেনাবাহিনীর প্রধান; ২. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন; ৩. বিএনপি। কিন্তু জনগণ দেখল আওয়ামী লীগের ধারণা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব সর্বেসর্বা হয়ে গেলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই সব ক্ষমতার অধিকারী হয়ে গেল। জনগণ ধারণা করছিল, ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের মতো শেখ রেহানা দেশে ফিরবেন এবং জনগণ শেখ রেহানাকে বিপুলভাবে বরণ করে নেবে; কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব তার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে বাজিমাত করে দিলেন। সেনাপ্রধানসহ তিন বাহিনীর প্রধান নেপথ্যে চলে গেলেন। ইউনূস সাহেব তার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে দেশ চালাতে লাগলেন।
সেনাবাহিনী সম্পর্কে ধারণা হলো, তারা আওয়ামী লীগকে আশ্রয় দিচ্ছেন। তবে এ ধারণা তাদের অনুক‚লে যায় না। সেনাপ্রধান প্রেসিডেন্টের সাথে সুসম্পর্ক রাখলেন। এখন সেই প্রেসিডেন্ট নিয়ে সমস্যা দেখা দিলো। একজন উপদেষ্টা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বলেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি’। এ নিয়ে সরকারের ভেতরে ভীষণ বিতর্ক দেখা দিলো।
বিএনপি ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। বিএনপির ঘনিষ্ঠ দলগুলো ধৈর্যের পরিচয় দিলো। প্রেসিডেন্টের ব্যাপারে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, ‘এটি রাজনৈতিক সমস্যা, সাংবিধানিক নয়। প্রেসিডেন্টকে নিয়ে তাড়াহুড়োর কিছু নেই।’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। তারা বলেন, প্রেসিডেন্টকে নিয়ে তাড়াহুড়োর কিছু নেই। এমনিতেই সরকার নানা ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্টকে নিয়ে তারা সমস্যা বাড়াতে চান না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাদের দু’জন উপদেষ্টা আছেন। তাদের কেউ কেউ প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট মনে হচ্ছে, টিকে যাচ্ছেন। সেনাপ্রধান তার রুটিনমাফিক সাক্ষাৎ করেছেন প্রেসিডেন্টের সাথে। সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, ‘তারা আওয়ামী লীগের অনেককে আশ্রয় দিয়েছে; কিন্তু কর্মক্ষেত্রে তারা নিরপেক্ষ।’ সেনাপ্রধান এ নিয়ে বেশি কথা বলেননি। প্রেসিডেন্ট আওয়ামী লীগের মনোনীত ছিলেন। এ দিক দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ব্যক্তি। সংখ্যালঘুদের তিনি নানাভাবে আশ্বস্ত করছেন, যা অত্যন্ত স্বাভাবিক।
প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনার মনোনীত ব্যক্তি ছিলেন দুদকে। পরে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হন আওয়ামী লীগ থেকেই। তিনি এখন চুপ করে আছেন। যথাসময়ে তিনি সক্রিয় হবেন বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা মনে করেছে। বিএনপি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ওরা কোটা সংস্কারের পক্ষপাতী হলেও এখন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে পরিচিত। তারাই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সক্রিয় ছিল এবং বঙ্গভবনের গেটে বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু বিএনপির কারণে তারা বেশি কিছু করতে পারেনি। বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকরা বিএনপির বক্তব্য মেনে নিয়েছে। বিএনপির মিত্র জামায়াতে ইসলামী ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ নীতি অবলম্বন করছে। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্টকে নিয়ে বিএনপিও বেশি মাথা ঘামাতে চায় না। সরকারের কথাকে বিএনপি মেনে নিয়েছে বলে মনে হয়।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন