নি জ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় খালেদা জিয়াঘোষিত টানা অবরোধ কর্মসূচির দুই মাস পূরণ হতে চলেছে। মানুষের কষ্টের সীমা নেই। সরকারের ভাবান্তর নেই। ক্ষমতাসীন কর্তৃপক্ষ মনে করছে ডা-া দিয়েই তারা সব ঠা-া করবে। ২০-দলীয় বিরোধী জোটকে বিভক্ত করে প্রধানত তার মধ্যে বিএনপি-জামায়াত-ইসলামী ঐক্যজোট ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বিরোধী অসাংবিধানিক সন্ত্রাসী শক্তিনির্ভর জনবিরোধী সাব্যস্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছিল ক্ষমতাসীন দলের নীতিকৌশলবিদরা। ক্ষমতার চাবিকাঠি শক্ত মুঠোয় আগলে রেখে রাষ্ট্রব্যবস্থার বিভিন্ন ধাপে পৃষ্ঠপোষকতা ও ফায়দা ভাগাভাগির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত বহুদলীয় ব্যবস্থার কার্যত একক কর্তৃত্ববাদী ‘ঐকমত্যের সরকার’ পরিচালনার ফন্দিফিকির, কায়দা-কানুনও ইতোমধ্যে বহাল করতে তারা দক্ষতা দেখিয়েছে। কিন্তু তাদের বাধাধরা সেলামি আর তাদের চেলাচামু-াদের খুশিমতো চাঁদাবাজির জবরদস্তি, দখল-বাণিজ্য, অপহরণ-বাণিজ্য আর তাদের পুলিশের গ্রেপ্তার-বাণিজ্য, গুম-খুনের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ মানুষ একটা নীরব সমর্থন যেন দিয়েই যাচ্ছে বিরোধী জোটকে। পত্রপত্রিকায় কোথাও কোথাও বোমাবাজিতে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতা ও হাতেনাতে ধরা পড়ার খবরও বেরিয়েছে। জঙ্গি আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে ‘শেষ’ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা বুমেরাং হচ্ছে, এমন মনে করছেন সরকারপক্ষেরই অনেক ব্যক্তি।
দোসরা মার্চ আওয়ামী লীগচালিত ১৪-দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, খালেদা জিয়া জনগণের নেত্রী ননÑ তিনি এখন জঙ্গি নেত্রী। জঙ্গি তৎপরতা চালিয়ে তিনি প্রায় ১শ মানুষ হত্যা করেছেন। জঙ্গি দমনই এখন আমাদের লক্ষ্য। খুনি খালেদার সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়। সংলাপ হবে ২০১৯ সালে নির্বাচনের আগে সিইসির সঙ্গে। ৩ মার্চ তিনি আবারও বলেছেন : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আইন-আদালত কিছুই মানেন না। বিশ্ব ইজতেমা, শিশুদের পরীক্ষা তার কাছে গুরুত্ব পায় না। এ নেত্রীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এখন জনগণের দাবি। বুধবার (৪ মার্চ) খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির না হলে তাকে গ্রেপ্তার করা আদালত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিষয়, তারা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার কার্যালয় তল্লাশি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। বিতর্কিত দশম সংসদ নির্বাচনের বছর পূর্তিতে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে ৩ জানুয়ারি পুলিশের বাধায় গেটে তালাবদ্ধ ও রাস্তাভর্তি পুলিশ কর্ডনে অবরুদ্ধ অবস্থায় কার্যালয় থেকে বের হতে না পেরে সেখানে অবস্থান নেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এরপর খালেদা জিয়া প্রায় ২ মাস ধরে গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৮৬ নম্বর সড়কের ওই বাড়িতে অবস্থান করছেন।
১৬ ফেব্রুয়ারি নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে বোমা হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হন। ওইদিনই ঢাকা জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাচ্চু গুলশান থানায় মামলা করেন। ঘটনার মূল আসামিরা কেউ গ্রেপ্তার হয়নি কিংবা কারও জবানবন্দি মেলেনি। বেগম জিয়ার আইন উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ইত্যাদি তথাকথিত হুমুকের আসামিদের জড়িয়ে নিছক অনুমাননির্ভর এই মামলা।
বারো দিন পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানা পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১ মার্চ সিএমএম কোর্ট এ সংক্রান্ত সার্চ ওয়ারেন্ট (তল্লাশি পরোয়ানা) জারি করেন। এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। টানা অবরোধ কর্মসূচি হাতে নিয়ে খালেদা জিয়াসহ কিছু নেতাকর্মী ওই কার্যালয়ে অবস্থান করছেন।
পুলিশের আবেদনে বলা হয়, ওই কার্যালয়ে বিস্ফোরক থাকতে পারে, সেখানে পলাতক আসামিরাও লুকিয়ে থাকতে পারে। সার্চ ওয়ারেন্টের বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার সন্ধ্যায় গুলশান থানার ওসি বলেন, সার্চ ওয়ারেন্ট হাতে পেয়েছি; এটা মামলা হওয়ার পর একটি রুটিন কার্যক্রম। তবে কবে তল্লাশি করা হবে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সিনিয়র আইনজীবী এবং এই মামলার হুকুমের আসামি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টির জন্যই সরকার আদালত থেকে এ আদেশ নিয়ে এসেছে। আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে যারা তল্লাশি চালাতে যাবেন তারা সেখানে অবৈধ জিনিস নিয়ে ঢুকতে পারেন। পরে বেরিয়ে আসার সময় ওইসব অবৈধ জিনিস উদ্ধার হয়েছে বলে প্রচার চালাতে পারেন। তাই আমরা দাবি করছি, তল্লাশি যদি করতেই হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৩ ধারা অনুযায়ী তল্লাশির যে বিধান আছে সেটা অনুসরণ করতে হবে। এ বিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ লোক যারা সাক্ষী থাকবেন, তারা প্রথমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যদের দেহ তল্লাশি করবেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সামনেই এ তল্লাশি চালাতে হবে। পুলিশের গোয়েন্দারা সঙ্গে কোনো বেআইনি জিনিসপত্র নিয়ে ঢুকছেন কি না এটা দেখবেন আইনজীবীরা। অন্যথায় ধরে নেওয়া হবে খালেদা জিয়াকে জনসমক্ষে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য ওই তল্লাশির নাটক সাজানো হয়েছে। আর এই নাটকে অস্ত্র উদ্ধার, অবৈধ মালপত্র উদ্ধার ইত্যাদি সাজানো মামলা হতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।’
তল্লাশি-পরোয়ানা জারির আগে খালেদা জিয়ার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছেন আরেকটি আদালত। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পরপর তিনটি নির্ধারিত কার্যদিবসে হাজির না থাকার অজুহাতে ২৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ওই আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার। হরতালের মধ্যে নিরাপত্তার অভাবে হাজির হতে না পারায় সময় চেয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীর আবেদন খারিজ করে হাকিম গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ওই হুকুম দেন। পাঁচ দিন পর ৩ মার্চ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনো পুলিশের হাতে আসেনি। কোর্টের আদেশ মানতে আমরা বাধ্য। আদেশে যা বলা থাকবে সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা নেব।’ পরদিনও শুনানিতে আদালতে না গেলে খালেদাকে গ্রেপ্তার করা হবে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগে ৪ তারিখ পার হোক, তারপর দেখা যাবে।’ খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে এ দিন খালেদা জিয়া আদালতে যাচ্ছেন না। খালেদা জিয়ার পক্ষে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে অংশ নেবেন তারা।
সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাংশের সূত্রেই প্রকাশ, খালেদা জিয়ার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে সরকার অস্বস্তির মধ্যে আছে। পুরনো মামলার অছিলায় হাজির না হওয়ায় আদালত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। কিন্তু জনগণের কাছে বার্তা যাচ্ছে সরকার আন্দোলন দমনের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। সরকার বিএনপিকে চাপে ফেলতে, খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয় থেকে বের করার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে সবার সন্দেহ। খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হচ্ছে, যা সরকারের ওপর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করছে।
আদালতে আত্মসমর্পণের প্রশ্নের জন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদিও এখনো আমরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কপি হাতে পাইনি, তারপরও যদি আদালতে যেতে এবং আত্মসমর্পণ করতে হয়, তাহলে তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে যেতে পারেন। তবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও কার্যালয়ে ফিরে আসতে দেওয়ার কথা দিতে হবে। বিচারিক আদালতের প্রতি আমরা অনাস্থার আবেদন জানিয়েছি। ব্যাপারটি উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় আছে। ওই আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালত আইনগতভাবে ও নৈতিকতার দিক থেকে এ মামলার শুনানি করতে পারেন না। কারণ তার বিপক্ষে আমরা অনাস্থা দিয়েছি। তদুপরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনো খালেদা জিয়া হাতে পাননি। কিন্তু তারপরও যদি আদালতে হাজির হতে হয়, আত্মসমর্পণ করতে হয়, তাহলে খালেদা জিয়া অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে ইচ্ছুক।
ওদিকে খালেদা জিয়ার হেনস্তা প্রসঙ্গে ব্রাসেলসভিত্তিক বেসরকারি সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ডাকে সারা দেশে অবরোধ চলছে জানুয়ারির প্রথম দিক থেকে। এতে নিহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। ৬ ফেব্রুয়ারি বিএনপি ও তার মিত্র জামায়াতে ইসলামীর কর্মকা-কে মধ্যপ্রাচ্যের জিহাদি গ্রুপ ইসলামিক স্টেটের (আইএস, আগের নাম আইসিআইএল) সঙ্গে তুলনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তাকে গ্রেপ্তার করা হলে সহিংসতা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইসিজি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংকট পর্যালোচনা করে বাংলাদেশকে ‘কনফিক্ট রিস্ক অ্যালার্ট’-এ রেখেছে।
এদিকে ৩ মার্চ সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বাংলাদেশে নিযুক্ত নয় দেশের কূটনীতিকরা। বৈঠক শেষে কূটনীতিকদের পক্ষে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গ্রেগ কক সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপির এ মুহূর্তের অবস্থান জানতেই তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী চলে ওই বৈঠক। হাইকমিশনার গ্রেগ কক আরও বলেন, ‘আমরা ১ মার্চ চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। সেই ধারাবাহিকতায়ই আমরা বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আমরা আলোচনা করেছি, দেশের স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি, মানবাধিকার রক্ষা ও গণতন্ত্র বিকাশে করণীয় নিয়ে। আমরা মনে করি, এসবের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা তৈরি করা।’ প্রকাশ, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংলাপে বসতে তাগিদ দেন কূটনীতিকরা। জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, সংকট নিরসনে সংলাপে বসতে তার দল সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এ ব্যাপারে বারবার সরকারকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু সরকার কোনো ভ্রƒক্ষেপ করছে না। সরকার সংলাপে বসার উদ্যোগ নিলে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন বলে কূটনীতিকদের অবহিত করেন তিনি।
এছাড়া বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে চলমান সহিংসতা সম্পর্কে দল ও জোটের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি। সহিংসতার সঙ্গে তার জোট জড়িত নয়। সহিংসতা বন্ধ করতে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে ইতোমধ্যেই দলের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, কার্যালয় বন্ধ করে রাখা, বিনা বিচারে হত্যা, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। রাতে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এই ১৬টি মিশনের পক্ষে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার সংবাদপত্রে বৈঠক সংক্রান্ত একটি বিবৃতি পাঠিয়েছেন। এদের মধ্যে নয়টি দেশের প্রতিনিধি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে আমাদের অতীতের বিবৃতিগুলো স্মরণ করে এবং জাতিসংঘের বিবৃতি স্মরণ করে আমরা বাংলাদেশে অব্যাহত সহিংসতার পরিসমাপ্তি ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছি। বাংলাদেশের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধি, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাত নিরসনসহ আস্থা বৃদ্ধির পদক্ষেপকে উৎসাহিত করি। বাংলাদেশের বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগকে স্বাগত জানাই। আমরা ভবিষ্যতেও সব পক্ষের প্রতি আমাদের অভিন্ন আশা প্রকাশ করা অব্যাহত রাখব।’ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মতো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস বুম বার্নিকাট। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও তার গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশি, পরোয়ানা জারির মধ্যে তাদের এই সাক্ষাৎ বিশেষ কূটনৈতিক অর্থবহ বৈকি। স্পষ্টত সরকারের প্রতি একটা প্রচ্ছন্ন বার্তা রয়েছে ওই বিবৃতিতে। সরকার এখনো তা আমলে নিচ্ছে না।
খালেদা জিয়াও ৪ মার্চ হরতাল-অবরোধের মধ্যে রাজধানীর বকশিবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালত-৩ এ হাজিরা দেননি। খালেদার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার, আদেশ সংশোধন, জামিন বহাল ও সাক্ষ্য পেছানো এবং তারেক জিয়ার জামিন আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। শুনানিতে সেসব আমলে না নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রেখেছেন আদালত। তবে এ মামলার আরেক আসামি খালেদা জিয়ার ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
দমনপীড়নের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় প্রচারযুদ্ধও এখন পর্যন্ত জোরেশোরে চালিয়ে যাচ্ছিন সরকার বাহাদুর। তবে প্রচ্ছন্ন কূটনৈতিক বার্তার কড়া প্রকাশ্য জবাব এতদিন সরকারপ্রধান যেভাবে দিয়ে এসেছেন, তেমন বাকবিস্ফোরণের কোনো লক্ষণ নেই।
লেখক : কলামনিস্ট
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন