ভারতের কাঁটাতারের বেড়া ও জঙ্গি ডেরার ঘের
22 October 2014, Wednesday
বাংলাদেশের চারপাশে ভারতের কাঁটাতারের বেড়ার আড়ালে সন্ত্রাসী-জঙ্গি প্রশিণ এবং নাশক দল প্রেরণেরও ঘের তৈরি হয়েছে সীমান্তের ওপারে, ভারতভূমির গোপন আশ্রয়ে। এই ভয়ানক খবর এখন সরসভাবে আলোচিত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের পত্রপত্রিকায়।
৭ অক্টোবর কলকাতার কাগজে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির দেওয়া খবরÑ রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় জঙ্গি তালিমের জন্য প্রায় ৬৫টি শিবির গড়েছে (ভারতের) নিষিদ্ধ সংগঠন সিমি। বাংলাদেশের মৌলবাদীরা এবং (পাকিস্তানের) আইএসআই ওই জঙ্গি শিবিরগুলোকে প্রত্যভাবে মদদ জোগাচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। এ সম্পর্কে গোয়েন্দা রিপোর্ট পাওয়ার পর ভারতের জাতীয় তদন্ত এজেন্সি (এনআইএ) কেন্দ্রের নির্দেশে খোঁজখবর শুরু করেছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ত্রিপুরা ও অসাম সীমান্তেও সিমি এই ধরনের জঙ্গি তালিম শিবির তৈরি করেছে। বর্ধমান বিস্ফোরণ-কা-ের তদন্তে নেমে সিআইডি সিমির যোগসাজশের হদিস পেয়েছে। সিআইডি ও রাজ্য পুলিশের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বর্ধমানের ওই বাড়িতে বসে সিমি যেমন অত্যাধুনিক বিস্ফোরক তৈরি করেছেÑ তেমনই সীমান্তবর্তী নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও দণি দিনাজপুর জেলায় বড় ধরনের জাল বিস্তার করেছে। এই চার জেলার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি জঙ্গিরা ভারতে ঢুকে পড়ছে। রাজ্যের কয়েক লিংকম্যান অস্ত্র ও বিস্ফোরক বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কয়েক বাংলাদেশি আবার ভুয়া তথ্য দিয়ে ওই দেশের ভোটার তালিকায় নাম তুলেছে এবং সচিত্র পরিচয়পত্রও তৈরি করেছে। শুধু নদিয়া জেলায় ওই রকম ২৭টি জঙ্গি ঘাঁটি তৈরি হয়েছে। এছাড়া মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও দণি দিনাজপুর জেলায় এই রকম গোপন ক্যাম্পসহ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় এসব জঙ্গি ঘাঁটির খবর পাওয়া গেছে।
বর্ধমান বিস্ফোরণ-কা-
বর্ধমানে ২ অক্টোবর একটি দালানবাড়িতে বোমা বানানোর সময় সেখানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে মারা যায় দুই বোমা তৈরিকারক ও আহত হয় একজন। পূজার ছুটির পর সেই তদন্ত জোরদার হয়েছে এবং প্রকাশ হচ্ছে এসব খবর। বর্ধমানে বিস্ফোরণ-কা-ের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সংস্রবের প্রমাণ তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় পুলিশ খুন করে জেএমবির দুই নেতাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল যে দলটি, তারাই ঘাঁটি গেড়েছিল বর্ধমানে। এর আগে ওই দলটিই মুর্শিদাবাদের লালবাগে সাময়িক আস্তানা গেড়ে ‘জিহাদি’ নিয়োগের কাজ চালাচ্ছিল। বিস্ফোরক জোগাড় করা, বোমা বানানো এবং সেই ‘কনসাইনমেন্ট’ বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য ক্যারিয়ার নিয়োগের কাজও শুরু করেছে তারা। বর্ধমানে খাগড়াগড়ের ওই বাড়িতে বহিরাগতদের নিয়মিত আনাগোনা ছিল। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনই বাংলাদেশে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের টাস্কফোর্স, অ্যান্টিটেরোরিস্ট স্কোয়াড এবং সিআইডি নিহত শাকিল ও আহত হাসানের দুই স্ত্রীকে অকুস্থল থেকে গ্রেপ্তার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তারা নিকটবর্তী বাদশাহী রোডের একটি পোড়োবাড়িতে ৮ অক্টোবর তল্লাশি চালিয়ে কিছু আলামত পেয়ে বাড়িটি সিলগালা করে। ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সরকারবিরোধী দলগুলোর তরফে আওয়াজ ওঠে জাতীয় গোয়েন্দা এজেন্সির হাতে তদন্তভার দেওয়ার জন্য। সন্দেহ করা হয় তৃণমূল কর্মীদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, রাজ্য পুলিশ আলামত নষ্ট করতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ১০ অক্টোবর কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) হাতে বর্ধমান-কা-ের তদন্তভার তুলে দেয়। এনআইএ সূত্রে ভারতীয় পত্রপত্রিকায় ১১ অক্টোবর প্রকাশÑ বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণে নিহত বাংলাদেশি বোমা কারিগর শামিম শাকিল আহমেদ ও স্বপন ম-লসহ পুরো দলটি বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদী জেএমবি দলের সদস্য। এর বেশি তথ্য দিতে রাজি হয়নি বিস্ফোরণে আহত আবদুল হাকিম। শাকিলের স্ত্রী রুমি বিবি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, দলটি লেদ মেশিনের সাহায্যে অস্ত্র বানানোর চেষ্টা করছিল। বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনের আইএমআই রেকর্ডে রকেট লাঞ্চারের ডিজাইনের ছবি ও পেণাস্ত্রের ডিজাইন পাওয়া গেছে।
সিলগালা বাড়িতে লুকানো বোমা
১৬ অক্টোবর বিশেষ খবরÑ বর্ধমানের বাদশাহী রোডে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিলগালা করা বাড়িটি থেকে পায়খানায় লুকানো ৩০টি গ্রেনেড-জাতীয় হাতে গড়া তাজা বোমা উদ্ধার করেছে এনআইএ এবং এনএসজির যৌথ বিশেষজ্ঞ দল ও তাদের বিস্ফোরক ঘ্রাণ সন্ধানী কুকুর বাহিনী। পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দারা সেসব খুঁজে পাননি বা ভালো করে খুঁজে দেখেনি। নজরদারিতে রাখা আরেকটি মাদ্রাসায় অভিযান চালায়নি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। অথচ জব্দ করা একটি পেনড্রাইভে সেখানে জঙ্গি প্রশিণের ভিডিও চিত্রের তথ্য তাদের হাতে এসেছিল। এরপর ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয় ভারতের, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়ায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে ফাঁস করা তদন্তের তথ্য দিয়ে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধাস্ত্রের বিভিন্ন বোমা-বার্তার প্রস্রবণ। যেমন অনলাইনে খবরÑ বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর একের পর তল্লাশি অভিযান চালিয়ে পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর গ্রেনেড ও বিস্ফোরক। এসব গ্রেনেড এবং বিস্ফোরক বাংলাদেশ ও আসামের জঙ্গিদের কাছে পাঠানোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল বিস্ফোরণে নিহত শাকিলের তত্ত্বাবধানে। এসব গ্রেনেড ও বিস্ফোরক মজুদ করে রাখা হয়েছিল বিভিন্ন জঙ্গি ডেরায়। বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ মিটার দূরে বাদশাহী রোডে একটি পোড়োবাড়ি থেকে এনআইএ গোয়েন্দা এবং এনএসজির কমান্ডোরা উদ্ধার করেছিলেন ৪০টি গ্রেনেড ও ২৫ বস্তা বিস্ফোরক। এ বাড়িটিতে থাকত মন্টু শেখ ও তার ছেলে রেজাউল শেখ। বিস্ফোরকগুলো লুকানো ছিল বাথরুমের একটি গোপন স্থানে। গোয়েন্দাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, এত বিস্ফোরক কী সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য রাখা হয়েছিল, নাকি সেনাদের ওপর আক্রমণের জন্য? যৌথ বাহিনীর সদস্যরা কুকুর ও বোম স্কোয়াডকে সঙ্গে নিয়ে তল্লাশিতে নেমে যেভাবে বিস্ফোরক পাচ্ছেন, এতে তাদের ধারণাÑ বর্ধমান ও এর সংলগ্ন এলাকায় আরও গ্রেনেড এবং বিস্ফোরক মজুদ রাখা রয়েছে। রেজাউল শেখ ও তার পরিবার বিস্ফোরণের দিন থেকেই লাপাত্তা।
জিহাদি নারী বাহিনী
পত্রিকার খবরÑ মাওবাদী নারী বাহিনীর কথা এতদিন জানা ছিল। এবার ধরা পড়ল পশ্চিমবঙ্গে একটি জিহাদি প্রমীলা বাহিনীর অস্তিত্ব। ঘটনায় নিহত শাকিল আহমেদের স্ত্রী রাজিয়া বিবি ও জখম আব্দুল হাকিমের স্ত্রী আলিমা বিবি ওই নারী বাহিনীর সদস্য। বাকিরা এখনো অধরা। এনআইএর দাবি, বাহিনী গঠন ও যাবতীয় প্রশিণের প্রধান দায়িত্বে ছিল আয়েশা বিবি। সে বর্ধমানের মঙ্গলকোটের কৃষ্ণবাটী গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা ইউসুফ শেখের স্ত্রী। খাগড়াগড়-কা- যে আন্তর্জাতিক জঙ্গি-জালকে প্রকাশ্যে এনেছে, সে শিমুলিয়া মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ইউসুফ আপাতত ফেরার। আয়েশাও পালিয়েছে।
বাংলাদেশের জেএমবি ও ভারতের জমিয়তুল মুজাহিদিনকে মেলাতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে ওসামা বিন লাদেনের আল কায়েদার। আল কায়েদার বর্তমান প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির লেখা সাত পাতার যে চিঠিটি ২০০৯ সালে ফাঁস হয়, এতে জিহাদে নারীদের শামিল করার আহ্বান রয়েছে। আফগানিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত হানার জন্য আল কায়েদাই গড়েছিল প্রমীলা জঙ্গি বাহিনী ‘বোরখা ব্রিগেড’। আত্মঘাতী নারী জঙ্গির মারণ হানার দৃষ্টান্তও রয়েছে ভারতে। লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলমের (এলটিটিই) এমন এক হামলায় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধীকে প্রাণ দিতে হয়। গোয়েন্দা মন্তব্যÑ ‘মাওবাদী নেত্রী জাগরী বাস্কে, সুচিত্রা মাহাতো, শোভা মান্ডিরা দু’তিন বছর আগে মূল স্রোতে ফিরেছে ঠিকই কিন্তু এখন ঘুম কেড়েছে আয়েশারা।’
আরও খবর মালদহ থেকেÑ কালিয়াচকের বাঁশ বাগানে মিলল ১৬টি বলবোমা। শক্ত-পোক্ত প্লাস্টিকের বলের কিছুটা কেটে কমলা রঙের বিস্ফোরক ঠাসা। ছোট পেরেক, পাথরকুচি, বল বিয়ারিং, ধারালো লোহার টুকরো পুরে জোড়া দিয়ে হয়েছে বলবোমা। প্রতিটির আনুমানিক ওজন প্রায় ৫০০ গ্রাম। এই বোমা আবিষ্কারের জেরে ফের তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে মালদহ জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে। কারণ যে শিকের বাড়ির বাগানে বড় মাপের প্লাস্টিকের জ্যারিকেনে বোমাগুলো রাখা ছিল, পুলিশ তাকে রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদও করেনি।
এলটিটিই কানেকশন
এরপর ১৮ অক্টোবরের ভারতীয় পত্রপত্রিকায় বিস্তারিত খবরÑ যে ধরনের রাসায়নিক বিস্ফোরক বর্ধমানে উদ্ধার হয়েছে, এর সঙ্গে শ্রীলংকায় মুছে যাওয়া তামিল জঙ্গি সংগঠন এলটিটিইর ব্যবহার করা বিস্ফোরকের মিল খুঁজে পেয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের (এনএসজি) বোমা বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু এখন তো আর এলটিটিইর অস্তিত্বই নেই। কোথা থেকে উঠে এলো তাদের নাম? এনএসজির সাবেক কর্তা ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ভুলে যাবেন না, সম্প্রতি ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের বিস্ফোরণের ঘটনায়ও এলটিটিইর ছাপ পেয়েছে স্বরাষ্ট্র দপ্তর।
সংগঠন হিসেবে এলটিটিইর এখন আর অস্তিত্ব না থাকলেও যে পাকা মাথার যুবকরা এলটিটিইর জন্য বিস্ফোরক বানাত, তারা রয়েই গেছে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, এক সময় এলটিটিইর হয়ে কাজ করা ওই যুবকরাই এখন মোটা টাকার বিনিময়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন, মাওবাদী বা (পাকিস্তানের) লস্করের মতো জঙ্গিদের বিস্ফোরক তৈরির প্রশিণ দিচ্ছে। সম্প্রতি এই সংগঠনও হয়তো মোটা টাকা দিয়ে এলটিটিইর বিস্ফোরক বানানোর কারিগরি আয়ত্ত করেছে। কয়েকদিনের তল্লাশিতে বর্ধমানের খাগড়াগড় ও শিমুলিয়া থেকে পাওয়া গেছে বেশকিছু রাসায়নিক। তা উচ্চ মতাসম্পন্ন বিস্ফোরক বানাতে কাজে লাগে। ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা এজেন্সি এনআইএর বক্তব্যÑ সামান্য নড়াচড়াতেই ফেটে যেতে পারে ওই বিস্ফোরক। এ কারণে গত মঙ্গলবার খাগড়াগড়ের দোতলায় উঠে রাজ্য পুলিশ এবং সিআইডির কাছ থেকে সব জিনিস বুঝে নিলেও ওই বিস্ফোরক সরিয়ে নেওয়ার ঝুঁকি নেননি তারা। এরপরই বর্ধমানে ডেকে আনা হয়েছে এনএসজির বোমা বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, এই ধরনের রাসায়নিক দিয়ে এক সময় বিস্ফোরক তৈরি করত এলটিটিই।
এক সময় সার থেকে হাতে তৈরি তাজা বোমা বা আইইডি তৈরি হতো। ওই আইইডির ব্যবহার শুরু করে আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি। তারা বিস্ফোরক হিসেবে নাইট্রিক এসিড ব্যবহারও শুরু করে। এখন বিস্ফোরক বানানোর জন্য অত্যাধুনিক রাসায়নিক লেড অ্যাজাইড বা পিকরিক এসিড ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতীয় গোয়েন্দারা বলছেন, ভয়ঙ্কর সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। একদিকে বিস্ফোরক বানানোয় এলটিটিইর ওই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, অন্যদিকে এর সঙ্গে আইএসআই-হুজি জঙ্গিদের টাকা ও নেটওয়ার্ক, জামায়াতের আত্মবিসর্জনের সংকল্প এবং সর্বশেষে রাজনৈতিক নেতাদের মদদ।
রাজনৈতিক মদদের অভিযোগ
এখানে ‘রাজনৈতিক নেতাদের মদদ’ বলতে অবশ্য ইঙ্গিত করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে মতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলিম ভোট এবং নকশাল জঙ্গিদের মদদ নিয়ে মতায় এসেছেনÑ এমনই ধুয়া তুলেছে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি ও বামফ্রন্ট। সম্ভাব্য নাশকতার জন্য বোমা তৈরিতে হতাহতের ঘটনা নিয়ে মতার লড়াইয়ের জাল ফাঁদা ও দোষারোপের রাজনীতি শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে।
তবে ওই ফাঁদে বাংলাদেশকেও আটকে ফেলার সুযোগ রেখেছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। দণি এশিয়ায় আল জাওয়াহিরি ঘোষিত আল কায়েদা চক্রান্তের দোহাই দিয়ে ভূরাজনৈতিক ভ্রুকুটি ও কাঁটাতারের বেড়ার যুগপৎ প্রয়োগে সীমান্তবাসী বাংলাদেশিদের অবাধ চলাফেরা যে আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ ভারত নেবে, এমন ইঙ্গিত দিল্লির তরফে আগেই দেওয়া হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মহাপরিচালক পর্যায়ে বিজিবি এবং বিএসএফের মধ্যে পালা করে যে বৈঠক এবার দিল্লিতে বসেছিল, সেটি উপল করে ভারতের বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে নিম-সরকারিভাবে একটি সংবাদ ভাষ্য প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়। ওই সংবাদ ভাষ্যের মোদ্দা কথা ছিল, বাংলাদেশকে কি বিশ্বাস করা যায়? চিনের সঙ্গে তার দহরম-মহরম। সীমান্ত ব্যবস্থাপনার অনেক দ্বিপীয় চুক্তি ও স্মারকপত্র সই হয়েছে। কোনো কাজ হচ্ছে না। বিএসএফ-বিজিবি বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে ভারত অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও গরু চোরাচালানিদের দমনের কথা তুলেছে। বাংলাদেশ অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের কথা মানতেই রাজি নয়। বাংলাদেশকে এ কথা মানাতে হবে।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক রার যে প্রতিশ্রুতি মোদি ঘোষণা করেছিলেন, এর সঙ্গে ভারতীয় আমলাতন্ত্রের অনুসৃত ও মিডিয়ায় বিবৃত এমন কঠোর সীমান্তনীতির কোনো মিল নেই। তাই সাধু সাবধান। কাঁটাতারের বেড়ায় গুলিবিদ্ধ ফেলানি ঝুলে ছিল, এখন গরু ব্যবসায়ী ‘অপরাধী’কে ‘হট পারসুট’ বা সশস্ত্র ধাওয়া করে ভারতের সীমান্ত সেনারা বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়ার দুঃসাহস করলে তাদের ঠেকানোর মুরদ ও নজরদারির ব্যবস্থা প্রদর্শন করতে পারবে কি বর্তমান সরকার?
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামনিস্ট
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন