Image description

মাসুম খলিলী

 

ইসরাইল, জায়নবাদ ও ইহুদি ধর্মকে আমরা অনেক সময় এক করে ফেলি। সব ইহুদিই ইসরাইল ও জায়নবাদকে সমর্থন করে না। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স, বিখ্যাত দার্শনিক নোয়াম চমস্কিসহ অনেক খ্যাতনামা ইহুদি ব্যক্তিত্ব জায়নবাদ সমর্থন করেন না। এবার ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্বব্যাপী যে সংহতি আন্দোলন তাতে বহু সংখ্যক ইহুদি অংশগ্রহণ এমনকি নেতৃত্ব দিয়েছেন।

কেন এত ইহুদি ইসরাইলকে উপহাস করে? ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালের সেই ‘ভয়াবহ দিন’ থেকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে তারা সমর্থন করছে, আর কেন ১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের ‘চমকপ্রদ আক্রমণের’ পর ইসরাইলের পাশে দাঁড়াচ্ছে না তা নিয়ে ডানপন্থী ইসরাইলি পত্রিকা জেরুসালেম পোস্ট সম্প্রতি একটি কলাম ছেপেছে।

এতে কলামিস্ট মিকাহ হ্যালপার্ন জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছেন, কেন এত ইহুদি হামাসের পক্ষে? এটি তরুণ এবং পেনশনভোগীদের একটি আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে যারা ইহুদিবাদ এবং ইসরাইলের অবস্থানকে ঘৃণা করে বলে মনে হয়। ইহুদি ধর্মের প্রতি, তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যের প্রতি তাদের ঘৃণা এবং অবিশ্বাস দ্বারা পরিচালিত এমন একটি আন্দোলনে জড়িয়ে যাচ্ছেন যে আন্দোলন তাদের মা-বাবা এবং ইহুদিদের প্রজন্মের লালিত মূল্যবোধের সম্পূর্ণ বিপরীত।

লেখক বলছেন, জায়নবাদের প্রতি ঘৃণা করে এমন ইহুদিরা সংখ্যায় বেশি এবং তাদের তীব্র নিন্দা প্রকাশে আরো জোরালো দেখে ইহুদি ধর্ম ও ইসরাইলের প্রেমিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হতবাক। তাদের প্রশ্ন হলো : তারা ইহুদিদের ওপর আক্রমণকে কিভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা দিতে পারে এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে আক্রমণে উল্লাস করতে পারে? কী লাভের আশা করছে তারা?

যারা হামাসপন্থী কার্যকলাপে যোগ দেয় এবং অন্যান্য ইহুদিদের ওপর আক্রমণ করে সেই ইহুদিদের অনেকে আত্ম-হিসাবে বর্ণনা করে না। এই শব্দটি ইহুদি রাষ্ট্রের শত্রুদের ওপর আক্রমণ করার জন্য এবং ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোতে আঘাত করার জন্য ইসরাইলকে আক্রমণকারী ইহুদিদের প্রভাবকে তুচ্ছ করে।

মূলধারার ইহুদি স্বার্থ থেকে নিজেদের আলাদা করে ইহুদিদের আক্রমণকারীদের পক্ষ নেয়া ইহুদির তালিকা দীর্ঘ এবং বিখ্যাত। হেনরি কিসিঞ্জার এর একটি ক্লাসিক উদাহরণ। ওয়াল্টার আইজ্যাকসন তার অসাধারণ জীবনী, কিসিঞ্জার : আ বায়োগ্রাফি-তে কিসিঞ্জারকে উদ্ধৃত করেছেন যে, তিনি বলেছেন : ‘যদি আমার জন্মের (ইহুদি পরিবারে) দুর্ঘটনা না হতো, তাহলে আমি একজন ইহুদিবিরোধী হতাম।’

কিসিঞ্জার বলেছেন : ‘যেসব মানুষ ২০০০ বছর ধরে নির্যাতিত হচ্ছে তারা অবশ্যই কিছু ভুল করছে।’ এটি এমন এক কূটনীতিকের কাছ থেকে এসেছে যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যনীতি প্রণয়ন করেছিলেন এবং ইসরাইলের প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন ও জেরাল্ড ফোর্ড উভয়েরই মনোভাবকে প্রভাবিত করেছিলেন।

‘আত্মবিদ্বেষী ইহুদি’ শব্দটি নতুন নয়। এই অভিব্যক্তিটি ১৯৩০ সালে জার্মান-ইহুদি লেখক থিওডর লেসিং তার বই ‘দের জুডিশে সেলবস্টাসার’ (ইহুদি আত্মবিদ্বেষী)-এ লিখেছিলেন। এর আগেও, আধুনিক রাজনৈতিক জায়োনিজমের প্রতিষ্ঠাতা থিওডর হার্জলকে কেউ কেউ একজন ‘আত্মবিদ্বেষী’ ইহুদি হিসেবে অভিহিত করেন। হার্জল বড়দিন উদযাপন করতেন এবং এমনকি বাড়িতে ক্রিসমাস ট্রিও রাখতেন। এমনকি অনেকে তাকে নাস্তিক হিসেবে বর্ণনা করেছেন যিনি জায়নবাদের প্রতিষ্ঠাতা।

অনেকেই ভাবেন, সব ইহুদি ইসরাইল বা জায়োনিজমকে সমর্থন করে, কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি তেমন নয়। ইসরাইল রাষ্ট্র গঠিত হয় ১৯৪৮ সালে, জায়োনিস্ট আন্দোলনের মাধ্যমে। যদিও এটি বহু ইহুদির স্বপ্নপূরণ, কিন্তু একটি বিরাট অংশ ইহুদি জনগোষ্ঠী তখনো এবং এখনো এই রাষ্ট্রের নৈতিকতা, ধর্মীয় বৈধতা, রাজনৈতিক চরিত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই নীতিগত বিরোধিতার পেছনে রয়েছে ইতিহাস, ধর্মীয় বিশ্বাস, মানবাধিকার দর্শন ও জিও-পলিটিক্স।

কিছু ইহুদি ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কেন জায়োনিজম ও ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরোধিতা করে, তার পেছনে রয়েছে ধর্মীয়, নৈতিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক কারণ। নিচে প্রধান কয়েকটি কারণ দেয়া হলো :

১. ধর্মীয় বিরোধিতা : নাতুরেই কার্তার মতো অর্থোডক্স ও অতি-ধর্মীয় ইহুদি গোষ্ঠী বিশ্বাস করে যে, মসিহ আসার আগে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা ঈশ্বরের ইচ্ছাবিরুদ্ধ। তারা মনে করে, ইহুদিদের ‘বিচ্ছিন্নতা’ ও ‘অপমান’ ঈশ্বরের ইচ্ছা, যা শেষ হবে মসিহর আগমনের পর। তাই, মানবিক উদ্যোগে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা পাপ। এই সংগঠন ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরোধী এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারের সমর্থনে সক্রিয়। তারা হোলোকাস্ট স্মরণ দিবসেও ইসরাইলবিরোধী ব্যানার নিয়ে উপস্থিত হয়। অন্যদিকে সাটমার হাসিডিম নিউ ইয়র্কভিত্তিক এক বিশাল হ্যাসিডিক গোষ্ঠী যারা জায়োনিজমকে ‘মূলত ধর্মদ্রোহী আন্দোলন’ বলে মনে করে।

 

২. নৈতিক ও মানবাধিকার সংশয় : অনেক উদারপন্থী বা প্রগতিশীল ইহুদি মনে করেন : ফিলিস্তিনিদের ওপর দমন-পীড়ন ও জমি দখল ইহুদিবাদের নৈতিক শিক্ষার পরিপন্থী। তারা বলেন, ‘হলোকাস্ট আর কখনো নয়’ মানে শুধু ইহুদিদের জন্য নয়, সেটি সব মানুষের জন্যই। দমননীতি, বসতি সম্প্রসারণ বা গাজা অবরোধ অনেক ইহুদি বিবেকবান মানুষকে ইসরাইলের বিরোধিতায় উদ্বুদ্ধ করেছে। জুডিথ বাটলার ও ইলান পাপের মতো অনেক ইহুদি বুদ্ধিজীবী মনে করেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলের আচরণ এই মূল্যবোধের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।

 

৩. রাজনৈতিক মতপার্থক্য : অনেকে মনে করেন, ইসরাইলের নীতিতে এক ধরনের উগ্র জাতিগত জাতীয়তাবাদ কাজ করে, যা গণতন্ত্র বা সহাবস্থানের পরিপন্থী। নোয়াম চমস্কি, জুডিথ বাটলার নরম্যান ফিকেলস্টেইনের মতো আমেরিকা, ইউরোপ ও ইসরাইলের অনেক ইহুদি বুদ্ধিজীবী ইসরাইলি নীতির কড়া সমালোচক।

 

৪. অ্যাসিমিলেটেড বা সেকুলার ইহুদিদের দৃষ্টিভঙ্গি : অনেক সেকুলার বা নন-প্র্যাকটিসিং ইহুদি মনে করেন, ইসরাইল বা জায়োনিজমের প্রভাব বিশ্বজুড়ে ইহুদি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তারা চায় না, ‘ইহুদিত্ব’ কোনো একক রাষ্ট্রীয় জাতীয়তাবাদে বন্দী হোক।

 

৫. ঐতিহাসিক রূপরেখা : ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের সময় অনেক ইহুদি নেতা ও ধর্মীয় পণ্ডিতই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন এই প্রকল্পের সফলতা নিয়ে। ব্রিটিশ ম্যান্ডেট ও আরব ভূখণ্ডে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক পদ্ধতিকে অনেকেই অনৈতিক মনে করেছিলেন।

 

অনেকে মনে করেন, ইসরাইলি আগ্রাসন আন্তর্জাতিক সমাজে ইহুদিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়িয়ে তুলছে।

অনেক আধুনিক ও প্রগতিশীল ইহুদি মনে করেন, ইসরাইল জাতিগত পরিচয়কে ধর্মীয় পরিচয়ের সাথে মিশিয়ে ফেলেছে, যা ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক।

 

জায়োনিজম ও ইসরাইল রাষ্ট্রের সমালোচনা ইহুদি সমাজের মধ্যেই ব্যাপক ও গভীর। এই মতপার্থক্যকে ধর্মীয় বিশ্বাস, নৈতিকতা, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির চশমায় বিশ্লেষণ করতে হবে। এই বিষয়গুলো বোঝা নীতিনির্ধারক, সাংবাদিক, একাডেমিক ও রাজনৈতিক নেতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যাতে তারা একটি পরিপূর্ণ বাস্তবতা ও দায়বদ্ধ পটভূমিতে কাজ করতে পারেন।

 

অষ্টম দশকের অভিশাপ?

 

কেন এহুদ বারাক এবং এহুদ ওলমার্ট মনে করেন যে ইসরাইল বহির্মুখী হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। এহুদ বারাক এবং এহুদ ওলমার্ট উভয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, আঞ্চলিক অস্থিরতা, শত্রু পক্ষের উদীয়মান হুমকি এবং ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন কারণে ইসরাইল অস্তিত্বগত হুমকির মুখে পড়তে পারে।

 

তারা যে মূল কারণগুলো উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে, আঞ্চলিক অস্থিরতা। সিরিয়া ও ইরাকের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলমান সঙ্ঘাত এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ইসরাইলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলেছে।

দ্বিতীয়ত, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি। ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রের সম্ভাব্য উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্তিত্বগত হুমকি তৈরি করেছে। ইরানের পরমাণু প্রকল্পে হামলা করে দেশটিকে নিশ্চিতভাবে এই শক্তি অর্জনের পথে ঠেলে দেয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

 

তৃতীয়ত রয়েছে, ফিলিস্তিনি-ইসরাইলি উত্তেজনা যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে তাতে সহিংসতা বা ভবিষ্যতের সঙ্ঘাতের উত্থান দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

 

চতুর্থত, বিশ্বরাজনৈতিক গতিশীলতা। আন্তর্জাতিক জোটের পরিবর্তন বা নির্দিষ্ট কিছু দেশের কাছ থেকে বর্ধিত শত্রুতা ইসরাইলের নিরাপত্তা সুরক্ষাকে দুর্বল করতে পারে।

 

শুধু এই দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন অন্য অনেক ইসরাইলি ও আঞ্চলিক নেতা ইসরাইলের সম্ভাব্য অস্তিত্বগত হুমকি সম্পর্কে একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

 

ইসরাইলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ধারাবাহিকভাবে ইরান, হিজবুল্লাহ এবং অন্যান্য প্রতিকূল সত্তার হুমকি তুলে ধরেছেন, অস্তিত্বগত বিপদ প্রতিরোধে শক্তিশালী সামরিক সক্ষমতা এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। যদিও তার যুদ্ধোন্মাদনা এই ঝুঁকিকে আরো বাড়িয়েছে বলে অনেকে মত ব্যক্ত করেন।

 

সামগ্রিকভাবে, ইসরাইল সম্ভাব্য অস্তিত্বগত হুমকির মুখোমুখি, এই ধারণাটি ইসরাইল এবং বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের অনেক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে একটি সাধারণ বিষয়, যা এই অঞ্চলের জটিল এবং অস্থির নিরাপত্তা পরিবেশকে প্রতিফলিত করে।

 

অনেকের মতে, ইসরাইল এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে একাধিক সম্ভাব্য পথের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, যা এর মূল কাঠামো, জাতীয় চরিত্র এবং সামষ্টিক পরিচয়কে পুনর্গঠন করতে পারে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ নৃশংসতা চালানোর সময়, ইসরাইল নিজের বিরুদ্ধে, নিজের ভেতরেই যুদ্ধ করছে।

 

ইসরাইলের অষ্টম দশকের অভিশাপ ধারণাটি মূলত ইতিহাস ও রাজনীতির পুনরাবৃত্তি এবং সঙ্কটের এক প্রতীকী ব্যাখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইসরাইল ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, ফলে তাদের অষ্টম দশক শুরু হয় আনুমানিক ২০১৮ সাল থেকে। এই সময়কালটি ঘিরে অনেক গবেষক ও বিশ্লেষক মনে করেন, ইসরাইল তার রাজনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তাগতভাবে এক বিশেষ সঙ্কটময় সময়ে প্রবেশ করেছে, যেটিকে অনেক সময় ‘অভিশাপ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

‘অষ্টম দশকের অভিশাপ’ শব্দটি মূলত ইহুদি ঐতিহ্যে থাকা একটি ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত। এটি বলে যে, ইহুদি জাতি বা ইসরাইল রাষ্ট্র সাধারণত অষ্টম দশকে প্রবেশের পর একটি বড় ধরনের বিভাজন, যুদ্ধ বা ধ্বংসের শিকার হয়। উদাহরণস্বরূপ প্রথম টেম্পল ধ্বংস হয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ৮০ বছর পর। দ্বিতীয় টেম্পল একইভাবে তার অষ্টম দশকে প্রবেশের পর রোমানদের হাতে ধ্বংস হয়। ইসরাইলের আদিম রাজ্য বিভক্ত হয় এই সময়সীমায়।

 

ইসরাইলের বর্তমান সঙ্কট ও অষ্টম দশকের অভিশাপের কারণ হিসেবে কিছু বিষয়কে সামনে আনা হচ্ছে,

১. গভীর রাজনৈতিক মেরুকরণ : বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে বিচারব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ। বাম-ডান মেরুকরণ বাড়ছে, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা কমছে।

 

২. সামরিক ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ : ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা এবং গাজা যুদ্ধ- ইসরাইলের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ হামলা। উত্তর ফ্রন্টে হিজবুল্লাহ হুমকি বাড়িয়েছে। ইরান ও তার ছায়া-অক্ষের হুমকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

 

৩. আন্তর্জাতিক অবস্থান দুর্বল হওয়া : জাতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে ইসরাইল মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত হচ্ছে। পশ্চিমা মিত্রদের মাঝে দ্বিধা দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে।

 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক হলেন সাম্প্রতিক কর্মকর্তা যিনি নেতানিয়াহুকে ‘ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা’ করার অভিযোগ করেছেন। আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী, এহুদ ওলমার্ট কঠোর সতর্কবার্তা দিয়ে ইঙ্গিত করেছেন যে, দেশটি গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ইসরাইলি রাষ্ট্রপতি আইজ্যাক হার্জগ, সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী মোশে ইয়ালন এবং প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্টের সভাপতি আহরন বারাকও একই রকম সতর্কতা জারি করেছেন। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডার এবং নেসেটের সদস্য ইয়ার গোলান বলেন, ইসরাইল ‘গাজায় শখের বশে শিশুদের হত্যা করছে’।

 

৪. সমাজে অভ্যন্তরীণ বিভাজন : ধর্মীয় বনাম সেকুলার ইসরাইলিদের মাঝে মতবিরোধ বাড়ছে। সংখ্যালঘু আরব জনগোষ্ঠী ও ইহুদি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈষম্য ও অনাস্থা আরো স্পষ্ট।

 

ইসরাইলের অষ্টম দশক যেন এক প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে রাষ্ট্রটি তার ইতিহাসের সবচেয়ে গভীর ও জটিল প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি। এটি বাস্তব ‘অভিশাপ’ নয়, তবে ইতিহাসের অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জাতীয় বিভাজনের মিলিত প্রতিচ্ছবি। এখন একটি বিষয় স্পষ্ট যে, অভ্যন্তরীণ ভাঙন বাস্তব এবং ‘ইহুদিদের ওপর ইহুদি’ বিদ্বেষ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তবে বেশির ভাগ পক্ষই একমত যে ইসরাইল এমন একটি মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে যা বেশ কয়েকটি পরিস্থিতির দিকে নিতে পারে যা এর কাঠামো, চরিত্র এবং সামষ্টিক পরিচয়ের অনুভূতিকে প্রভাবিত করবে।