
আসন্ন জুলাই মাস বাংলাদেশে একটি প্রতীকী প্রতিরোধের মাস। এটি সে সময়, যখন রাষ্ট্রব্যবস্থা, শাসন ও জনপ্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে রাজনৈতিক ও নৈতিক অধিকার রক্ষার প্রত্যয়ে মানুষ সরব হয়ে উঠেছিল। জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এ সময়ে যখন আমরা কথা স্মরণ করি, তখন শুধুমাত্র নির্বাচন বা ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠনই আমাদের একমাত্র আলোচনার বিষয় হতে পারে না বরং আরও গভীরভাবে, নির্বাচন-ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, গণতন্ত্রের কাঠামো ভেঙে ফেলা, প্রশাসনিক অপব্যবহার, অর্থ পাচার এবং রাজনৈতিক হেফাজতে দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে একটি সামগ্রিক প্রতিরোধের বহিঃপ্রকাশই হলো জুলাই বিপ্লব। কেবলমাত্র নির্বাচন করা এবং একটি সরকারকে নামিয়ে আরেকটি সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এর মূল উদ্দেশ্য ছিল না কখনোই।
আফসোসের বিষয় হলো বিপ্লবের ১১ মাস পরে এসে নির্বাচনই একমাত্র আলোচনা ও দরকষাকষির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ হলো বাংলাদেশের ট্রেডিশনাল রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই বিপ্লবকে ধারণ ও লালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বিপ্লবের ক্রেডিট নিতে চেয়েছে কিন্তু বিপ্লবের মূল চেতনা ও অন্তর্নিহিত তাৎপর্য উপলব্ধি করতে চায়নি। বারবার জুলাই বিপ্লবকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে। জুলাই বিপ্লবের নায়কদের অবজ্ঞা করা হয়েছে। জুলাই সনদ প্রণয়নকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। আহত ও শহীদদের প্রত্যাশা পূরণে সক্রিয় তৎপরতাও লক্ষ্য করা যায়নি। ট্রেডিশনাল দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী নিরবচ্ছিন্ন ও ধারাবাহিকভাবে জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করেছে বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। বিপ্লবের পরপরই আহত ও শহীদদের বাসভবনে যাতায়াত, তাদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান, আহতদের চিকিৎসা সহায়তা, বিপ্লবের স্মৃতি ধারণে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন এবং পুস্তক প্রকাশে দলটি সক্রিয় ছিল। কিন্তু বেশীরভাগ দলের দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশলে জুলাই বিপ্লবের প্রতি আন্তরিকতা ধরা পড়েনি।
যে দু’হাজার মানুষকে অভ্যুত্থানকালে হত্যা করা হলো এবং এরই সাথে যে ২৫ হাজার মানুষকে আহত করা হলো, অঙ্গহানি করা হলো- এগুলোর নেপথ্যে থাকা ফ্যাসিবাদী শাসনের মূল ক্রীড়নক শক্তিগুলোকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা জুলাই বিপ্লবের অগ্রসেনানীদের মূল একটি দাবি ছিল । দ্বিতীয় দাবি ছিল রাষ্ট্র, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং আইনশৃংখলা কাঠামোতে ফ্যাসিবাদী আমলে যে নজিরবিহীন অবক্ষয় ঘটানো হয়েছিল সেগুলোর সুরাহা করা। এমন একটি কার্যকর সংস্কার করা যাতে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয় এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা ফিরে আসে এবং তারা নির্বাচনে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। এ দুটো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই নির্বাচন আয়োজনের দাবি ছিল তাদের। অর্থাৎ সংক্ষেপে বললে আগে বিচার, সংস্কার এবং তারপর নির্বাচন।
জুলাই বিপ্লবের অগ্রসেনানীদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও একই সুরে কথা বলেছে। আর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া ছাত্রজনতার নতুন দল এনসিপিও এ বিষয়ে সরব রয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য দল ততটা সরব নয়। বিশেষ করে বড়ো দল বিএনপি এতসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতেও রাজি নয়। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায়। বিএনপি স্বীকার করে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে গেছে এবং এর সংস্কার করা অপরিহার্য। কিন্তু তারপরও তারা সংস্কারের বিষয়ে খুববেশি আগ্রহী নয়। টেলিভিশনে বা প্রোগ্রামগুলোতে তারা ন্যূনতম সংস্কারের কথা বলেই নির্বাচন দিয়ে দেয়ার কথা বলেন। অনেকক্ষেত্রে তারা বিপ্লব পরবর্তী এ সরকারের সংস্কারের ম্যান্ডেট নিয়েও কথা তুলেছেন। বিএনপি এমনটা করছে কেননা তাদের আত্মবিশ্বাস, নির্বাচন একটা হলেই তারা ক্ষমতায় আসবেন, তা যে মানের বা যে ধরনের নির্বাচনই হোক না কেন। কারণ আওয়ামী লীগ এখন মাঠে নেই এবং দলটির কার্যক্রম এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর এ ধরনের ভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গি বিস্ময়কর এবং একইসাথে দুঃখজনক। কেননা, জুলাই বিপ্লব না হলে কিংবা আওয়ামী সরকার ডামি নির্বাচনের পর টিকে গেলে আজ দেশের কী অবস্থা হতো কিংবা এ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের পরিণতিই বা কী হতো? হয়তো কতগুলো মামলার হুলিয়া নিয়ে তাদেরকে পালিয়ে বেড়াতে হতো। অথবা নেতানেত্রীরা চিকিৎসা না পেয়ে কত অসহায়ত্ত নিয়ে দিন যাপন করতেন- তা হয়তো তারা ভুলেই গিয়েছেন। এ কারণেই হয়তো জুলাই বিপ্লবে যে বিপুল সংখ্যক মানুষ নিজেদের জীবন উৎস্বর্গ করেছেন- তাদের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতাও তারা অনুভব করছেন না। বিষয়টি অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত।
মাঝখানে বিগত কয়েক মাসে বিএনপি সংস্কার বা বিচারের দাবি উপেক্ষা করে কেবল ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চেয়েছিল। এমনকী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যখন রাজপথে আন্দোলন হলো, তখনও বিএনপি সরাসরি তাতে সম্পৃক্ত হয়নি। তাদের গোড়া থেকে একটাই অবস্থান ছিল আর তা নির্বাচনের পক্ষে এবং সে নির্বাচনও হওয়া চাই ডিসেম্বরে। বিএনপি দাবি করেছিল, প্রয়োজনীয় সব সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব। এ দাবি নিয়ে তারা অস্থিতিশীল একটি পরিবেশও তৈরি করতে চেয়েছিল। রাজপথে নামার হুমকি দিয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টার সাথে একাধিক বৈঠকেও তারা তাদের এ অবস্থান তুলে ধরেছিল। সর্বশেষ বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার সামনেই বলেছিলেন যে, ‘একটি কারণও নেই যার জন্য ডিসেম্বরের পর নির্বাচন হতে পারে।’
কিন্তু সে বিএনপি খুব অবলীলায় ডিসেম্বরের দাবি থেকে সরে গেল যখন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্য গিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করলেন। উল্লেখ্য, বিএনপির এ ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের দাবির সাথে খোদ সেনাপ্রধানও একমত পোষণ করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি নিজেই সে অবস্থানে থাকতে পারলো না। শুধু তাই নয়, বিএনপি নেতারা একাধিক উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। এ অজুহাতে যে, সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারা তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। এ উপদেষ্টাদের মধ্যে একজন ছিলেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইঁয়া। বিএনপি এ দাবি তোলার কয়েকদিন পর প্রধান উপদেষ্টার সাথে তাদের বৈঠকে এ উপদেষ্টা উপস্থিত থাকলেন। অথচ বিএনপি তার উপস্থিতিতেই বৈঠক কন্টিনিউ করলেন। এর মাধ্যমেও তারা তাদের দাবির ক্ষেত্রে ছাড় দিলেন।
বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের ব্যাপারেও আপত্তি দিয়েছিল। অথচ লন্ডনের বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থিতিতেই তারেক রহমান ও ঢাকা থেকে যাওয়া বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরি বৈঠকে অংশ নেন। ফলে নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিল সাহেবের ব্যাপারেও বিএনপির আপত্তি কার্যত আর ধোপে টিকলো না। এ ঘটনাবলীর মাধ্যমে বিএনপির দুটো অবস্থান প্রমাণিত হয়। প্রথমত বিএনপি তার এ দাবিগুলোর ব্যাপারে আন্তরিক ছিল না। আর দ্বিতীয়ত বিএনপি এখনো এমনকী বর্তমান সময়ে সবচেয়ে প্রভাবশালী অবস্থানে থাকার পরও দাবি আদায় করতে শিখেনি। তৃতীয় আরও একটি বিষয় প্রমাণিত হয়ে যায় আর তাহলো নির্বাচনের ব্যাপারে সমঝোতা হয়ে গেলে বিএনপি অন্যান্য সব দাবির ব্যাপারেই ছাড় দিতে রাজি হয়ে যাবে।
সবচেয়ে বড়ো অস্বাভাবিক যে বিষয়টি লন্ডনে ঘটেছে তাহলো বিএনপির সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শেষে বিএনপি নেতারা এবং সরকারের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তারা মিলে অনেকটা খালাতো ভাই-মামাতো ভাইয়ের আদলে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি নজিরবিহীন। আমি যেদিন এ বৈঠকের খবর পরের দিন পত্রিকাগুলোতে দেখি তখন শিরোনাম অনেকটা এরকম ছিল, ‘বিএনপির সাথে সরকারের সমঝোতা: ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন।” আমি তখন স্বস্তিবোধ করিনি। প্রথমত, এ বৈঠকের মাত্র কয়েকদিন আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা নিজে এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন এবং তিনি তা বলেছিলেন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনার প্রেক্ষিতে। সেখানে লন্ডনে তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করেই তার দিক থেকে অবস্থান পাল্টে ফেলাটা সঠিক মনে হয়নি। আর দ্বিতীয়ত আমার চোখে তখন কেবল জুলাই বিপ্লবের শহীদদের লাশের ছবিগুলো ভেসে উঠেছে। মন খারাপ করেই ভেবেছি, তাদের আত্মত্যাগ কি তাহলে বৃথা গেল? না হলো সংস্কার, না হলো বিচার কিন্তুু নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা ঠিকই হয়ে গেলো। তাহলে সংস্কার ও বিচার কি অনিশ্চিত হয়ে যাবে?
এর বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া নিয়েও শংকা প্রকাশ করেছিলাম। তারা এরকম একটি একক বৈঠকের একপেশে সিদ্ধান্তকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন তাও দেখার বিষয় ছিল। লন্ডন বৈঠকের পরই আমার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে আমি লিখেছিলাম-“সবার আলাপের মধ্যেই ভিন্ন একটি সুর তুলি; এই যে পরের নির্বাচনে সম্ভাব্য বিজয়ী শক্তি বিশেষ করে তাদের ভাষায় আগামীর রাষ্ট্রনায়কের সাথে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের সাথে এভাবে বৈঠক হলো- এতে কার কী লাভ হলো? বৈঠক শেষে উভয়পক্ষ যেভাবে একসাথে বসলেন, তাতে পরের নির্বাচন পাতানো হওয়ার সম্ভাবনা বাড়লো কিনা? দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যে বৈঠক হয়, তার অংশ হিসেবে যে কারও সাথে বৈঠক হতে পারে। কিন্তু এভাবে দেশের বাইরে রাষ্ট্রের খরচে সফরে গিয়ে একটি আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর বৈঠক করে যদি মৌলিক কোনো ফয়সালা হয়ে যায়, তাহলে বাকি দলগুলোকে অবজ্ঞা করা হলো কিনা? আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আরো যেসব বৈঠক হতে পারে, এখনই সেগুলোকে গুড ফর নাথিং বা কেবলই ফরমালিটিজ বানিয়ে দেয়া হলো কিনা।”
আমার এ আশংকা একদম অমূলক প্রমাণিত হয়নি। লন্ডন বৈঠকের পর প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীও একই ধরনের একটি অবস্থান গ্রহণ করে। এ মুহূর্তে বিএনপির পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অবস্থানে থাকা জামায়াতের প্রতিক্রিয়াও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। জামায়াতের একটি অফিসিয়াল বিবৃতি প্রকাশিত হয় ১৪ জুন। সেদিন দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ জরুরি একটি বৈঠক করে তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়। এ প্রতিক্রিয়ার সারাংশ হলো: ১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস এর সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এটাকে খুবই স্বাভাবিক মনে করে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে পৃথক পৃথকভাবে এবং যৌথভাবে বৈঠক করেছেন। তিনি বিগত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। তাঁর এ ঘোষণার পর লন্ডনে সফরকালে একটি রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় হিসেবে দলটি বিবেচনা করে। জামায়াতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এর মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন করেছে। জামায়াত জানায় যদি দেশে ফিরে এসে প্রধান উপদেষ্টার অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে এব্যাপারে অভিমত প্রকাশ করতেন তাহলেই বরং ভালো হতো।”
বিবৃতিটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। জুলাই বিপ্লবের পটভূমিতে গড়ে ওঠা একটি সরকারের দেশ পরিচালনার ১১ মাসের মাথায় এসে এবং জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তির দ্বারপ্রান্তে এ বিপ্লবের অন্যতম স্টেকহোল্ডার একটি দল যখন সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, কিংবা সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ দেখানোর অভিযোগ তোলে, তখন মৌলিক অনেকগুলো প্রশ্ন এসে যায়। যদি এ সরকারই সামনের নির্বাচন আয়োজন করে আর তাদের বিরুদ্ধে এখনই কোনো একটি দলের প্রতি বাড়তি অনুরাগের দায় আসে তাহলে সামনের নির্বাচনটি পাতানো বা সুষ্ঠু না হওয়ার আশংকা থেকেই যায়। আর যেনতেন নির্বাচন বা কেবলই নির্বাচন করা জুলাই বিপ্লবের লক্ষ্য ছিল না। এ বিপ্লবের অনেকগুলো ন্যায্য শর্ত ও প্রত্যাশা ছিল। আর শুধু নির্বাচন নিয়েও যদি বলি, তাহলে আসন্ন নির্বাচনটি হওয়া চাই বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা নির্বাচন। কারণ রক্তক্ষয়ী জুলাই বিপ্লবের পর এটিই প্রথম নির্বাচন হতে যাচ্ছে যেখানে বিগত সাড়ে ১৫ বছরে ভোটদানের সুযোগ পাননি এরকম বহু মানুষ ভোট প্রদান করবেন। কিন্তু তেমন একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে এরই মধ্যে নানাবিধ সংশয় তৈরি হয়েছে। সে সংশয়গুলো কাটিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে।