জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সূচনালগ্ন থেকেই এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। প্রথমা প্রকাশন থেকে বের হওয়া জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু বইটি তাঁর সেই আন্দোলনকালের স্মৃতিকথা। বইটির কিছু চুম্বক অংশ প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য দুই পর্বে প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ প্রকাশিত হলো দ্বিতীয় পর্ব
একটা পর্যায়ে শাহবাগ থেকে গণভবনের দিকে রওনা দিলাম। সবাই আমাদের রিকশা ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কারওয়ান বাজার মেট্রোস্টেশনের নিচে থাকা অবস্থায় ফোনে খবর পেলাম, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। মুশফিকুল ফজল আনসারীর পরিচিত আশিক খবরটা দিলেন। বিষয়টা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করলাম।
ডয়চে ভেলের সাংবাদিক হারুন উর রশীদ স্বপন ফোন করে যখন প্রশ্ন করলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, আপনাদের মন্তব্য কী?’ তখন নিশ্চিত হলাম, শেখ হাসিনা সত্যিই পালিয়ে গেছেন। এরপর নানা জায়গা থেকে বন্যার মতো ফোন আসতে লাগল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও যোগাযোগ করা হচ্ছিল। তারা বলল, সেনাবাহিনী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বসতে চায়। আমাদেরও খোঁজা হচ্ছে। আমি বললাম, আমরা ক্যান্টনমেন্টে যাব না। দেশের ভাগ্য ক্যান্টনমেন্ট থেকে নয়, নির্ধারিত হবে জনতার মঞ্চ থেকে।
সংসদ ভবনে যাওয়ার পথে রিকশায় বসেই আমি আর নাহিদ ভাই ফেসবুকে একটা পোস্ট দিলাম, ‘অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-নাগরিকের প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এর বাইরে কোনো সরকার মেনে নেওয়া হবে না। ফ্যাসিস্ট খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতে করা হবে, পালানোর সুযোগ দেওয়া হবে না। সন্ধ্যার মধ্যেই নিরপরাধ ব্যক্তি, রাজবন্দী ও গুমকৃত ব্যক্তিদের মুক্ত করা হবে। শুধু হাসিনা সরকারের পদত্যাগ নয়, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ ও রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণ করা হবে। চূড়ান্ত বিজয় ছাড়া কেউ রাজপথ ছাড়বেন না। বার্তাপ্রেরক—আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলাম, সমন্বয়ক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।’
আমাদের মিছিলের বড় অংশটা সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে ঢুকল। আরেকটা অংশ গেল গণভবনের দিকে। খবর এল, মানুষ গণভবনে ঢুকে পড়েছে, গণভবন দখল হয়ে গেছে। সংসদ ভবন এলাকায় অনেক মানুষের মধ্যে পড়ে গেলাম। সংসদ ভবনের সামনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আমি আর নাহিদ ভাই বক্তব্য দিলাম। পাঁচ-ছয় হাজার মানুষ আমাদের বক্তব্য শুনল।
সেখানে আমি, নাহিদ ভাই আর বাকের ছাড়া আরও ছিলেন আরিফুল ইসলাম আদীব ও তারিকুল ইসলাম। আমরা ভাবছিলাম, এরপর কী? জনগণ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। নানা ধরনের কথা ছড়াচ্ছিল। মানুষ বিভ্রান্ত। সংসদ ভবনের সামনে থেকে আগুনের ধোঁয়া উঠছিল। বিধ্বস্ত অবস্থা। আকাশে কয়েকটা উড়ন্ত হেলিকপ্টার।
খবর পেলাম, বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন। সেখানে ক্ষমতা পালাবদলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হচ্ছে।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে গিয়ে শুনলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন। শুনে আমার মনটা খুবই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল।
আমরা ভাবলাম, এমন বিভ্রান্তিকর অবস্থায় আমাদের দিক থেকে একটা বক্তব্য যাওয়া উচিত। আমরা কারওয়ান বাজারে বার্তা সংস্থা এএফপির কার্যালয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সংসদ ভবন এলাকা থেকে বের হওয়া ছিল কঠিন। আমাদের পেয়ে লোকজন আনন্দ উদ্যাপন করছিল। কোনোভাবেই আমাদের ছাড়ছিল না। জনসমুদ্রের কারণে রাস্তা দিয়ে এগোনো কঠিন হয়ে পড়েছিল। কেউ একজন একটা সিএনজি নিয়ে এল। সিএনজিতে করে কারওয়ান বাজারে এএফপির কার্যালয়ে যাওয়ার পথে ফার্মগেটে যানজটে আটকে যাই। অগত্যা নেমে হেঁটে এগোতে থাকি।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের কার্যালয় থেকে সাংবাদিক জুমাতুল বিদা এ সময় ফোন করলেন। বললাম, আমরা এএফপিতে যাচ্ছি। তিনি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে যেতে বললেন। তখন পর্যন্ত এএফপির ব্যুরোপ্রধান শফিকুল আলমের (বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব) সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। আরিফুল ইসলাম আদীব বললেন, তাহলে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরেই যাই। আমরা তেজগাঁওয়ে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের কার্যালয়েই যাই। কেউ যাতে না চিনতে পারে, সে জন্য আমরা মাস্ক আর ক্যাপ পরে চলাফেরা করছিলাম। কারণ, চিনতে পারলেই লোকজন উল্লাস করতে শুরু করে দিত। সেখান থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ত।
খবর পেলাম, বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন। সেখানে ক্ষমতা পালাবদলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হচ্ছে। মনে হয়েছিল, এমন একটা ঐতিহাসিক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের সব সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে প্রবীণ রাজনীতিবিদেরা ঠিক কাজ করছেন না। ব্যাপারটা আমাদের ভালো লাগেনি। অনেকে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কেউ কেউ বলেন, যাঁরা সেখানে যাবেন, তাঁদের জাতীয় বেইমান ঘোষণা করা হোক। আমরা বললাম, এখন এসবের দরকার নেই, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। কীভাবে কী হবে, সরকার গঠিত হবে, তার রূপরেখা তৈরি করে আমরা একটা সংবাদ সম্মেলনের পরিকল্পনা করলাম।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে গিয়ে শুনলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন। শুনে আমার মনটা খুবই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহকে ফোন করে বললাম, ক্যান্টনমেন্টে গেলে আপনাদেরও জাতীয় বেইমান ঘোষণা করা হবে। হাসনাত ও সারজিস তখন সেনাবাহিনীর গাড়ি থেকে নেমে চলে আসেন। তাঁরাও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের কার্যালয়ে চলে এলেন।
জনতার মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেওয়ার অভিপ্রায়ে প্রথমে আমরা কারওয়ান বাজার মোড়ে সার্ক ফোয়ারায় সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। এর মধ্যে নানা ধরনের গুজব শোনা যাচ্ছিল। যেমন অনেকগুলো বিশ্বাসযোগ্য জায়গা থেকে খবর পাই যে ক্যান্টনমেন্টে না যাওয়ায় আমাদের গ্রেপ্তার করে সরকার গঠন করা হবে। সম্মিলিতভাবে তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে এ রকম খোলা জায়গায় যাওয়া ঠিক হবে না। আমাদের গুলি করা হতে পারে, তুলেও নিয়ে যাওয়া হতে পারে। সার্ক ফোয়ারার পরিবর্তে আমরা চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের কার্যালয়েই সংবাদ সম্মেলন করলাম।
সংবাদ সম্মেলনের আগমুহূর্তে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের কার্যালয়ের একটা ছোট সভাকক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমানের সঙ্গে একটা ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয়। মানবজমিন পত্রিকার সাংবাদিক এহসান মাহমুদ এবং আমাদের পক্ষ থেকে আরিফুল ইসলাম আদীবই মূলত ওই বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। সে বৈঠকে আমি, নাহিদ ভাই, মাহফুজ ভাই ও নাসির ভাই ছিলাম। তারেক রহমানকে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব দিই এবং বিএনপিকে সেই সরকারে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাই। আমাদের প্রস্তাব ছিল, জাতীয় সরকারে ৫০ শতাংশ রাজনৈতিক দলের এবং ৫০ শতাংশ সুশীল সমাজ ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি থাকবেন।
তারেক রহমান বললেন, তাঁরা এ ধরনের কিছুর অংশ হতে চান না। আমরা আমাদের সংস্কারের ভাবনাগুলো বললাম। তিনি সরাসরি বললেন, ‘এত বেশি দায়িত্ব নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে তো মনে হয় না। আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে একটা নির্বাচন দিয়ে দিতে পারেন।’
তারেক রহমান প্রস্তাব দিলেন একজন প্রধান উপদেষ্টা রেখে সাতজনের একটা সরকার গঠন করে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া যেতে পারে। তাঁকে বললাম, আমরা জাতীয় সরকারই গঠন করতে চাই। বিএনপি সরকারে এলে সরকার স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। তারেক রহমান সাতজনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ব্যাপারেই বেশি আগ্রহী ছিলেন। তারেক রহমানকে আমরা জানালাম যে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে।
কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকটা শেষ হয়। পরে এহসান মাহমুদ আর আরিফুল ইসলাম আদীবকে কিছুটা ক্ষুব্ধ স্বরে বললাম, আমাদের পরামর্শ না নিয়ে তাঁরা কেন এমন একটা বৈঠকের আয়োজন করলেন। আমরা বিএনপির মনোভাব বুঝে গেলাম। তারা জাতীয় সরকারে আসবে না। বিএনপিকে ছাড়া সরকার গঠন করলে বিষয়টা এক-এগারো বা মাইনাস টুর দিকে চলে যেতে পার বলে আশঙ্কা হলো। জাতীয় সরকার গঠনের সম্ভাবনাটা সেখানেই শেষ হয়ে গেল। ৬ আগস্ট মাহফুজ ভাই জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন। বিএনপি আসছে না বলে সেখানেও আলাপটা থেমে যায়। এরপর আর কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় সরকারের বিষয়ে আলোচনা হয়নি।
...
৫ আগস্ট সন্ধ্যায় অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা হয়। চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের কার্যালয় থেকেই আমি তাঁকে ফোন করি। ফ্রান্সের যে হাসপাতালে তিনি ভর্তি ছিলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই অস্ত্রোপচারের জন্য সেটির অপারেশনকক্ষে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার কথা। লাউড স্পিকারে আমি আর নাহিদ ভাই তাঁর সঙ্গে কথা বলি। সেদিনই নাহিদ ইসলামের সঙ্গে তাঁর প্রথম কথা হলো। অধ্যাপক ইউনূসকে বললাম, ‘স্যার, সরকারের তো পতন হয়ে গেছে। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ তাঁকে আমরা জাতীয় সরকারের ধারণার কথাটাই বললাম। অধ্যাপক ইউনূস বললেন, তিনি ইতিবাচক, তবে অনেকগুলো ব্যাপার আলোচনা করতে হবে। সবাইকে জানালাম, অধ্যাপক ইউনূস ইতিবাচক।
৫ আগস্ট রাতে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের কার্যালয় থেকে বের হয়ে প্রথমে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গেলাম। কার্জন হল এলাকায় একজন শিক্ষকের সহায়তায় আমরা একটা বিভাগের কনফারেন্স কক্ষে বসি। সেখানে বসে ফেসবুকে পোস্ট করে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই। রাতে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতির খবর পাওয়া যাচ্ছিল। এসব ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক এবং রাজপথে থাকার জন্যও আহ্বান জানানো হয়। চূড়ান্ত বিজয় না আসা পর্যন্ত সবাই যাতে রাজপথে থাকে এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে যারা ঢাকায় এসেছে, তারা যাতে ঢাকাতেই থাকে—আমরা সে আহ্বানও জানাচ্ছিলাম। রাত এগারোটা-বারোটার দিকে অধ্যাপক আসিফ নজরুল কার্জন হলের ওই কনফারেন্স কক্ষে আসেন।
...
রাতেই আমরা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করলাম। তাঁর সঙ্গে লাউড স্পিকারে নাহিদ ভাই আর আমার ঘণ্টাখানেক কথা হলো। অধ্যাপক ইউনূসকে বললাম, ‘স্যার, দেশের যে পরিস্থিতি, তাতে দ্রুত ঘোষণা করা দরকার দেশের পরবর্তী প্রধান উপদেষ্টা কে হচ্ছেন।’ অধ্যাপক ইউনূস এ ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন যে এক-এগারোর মতো সেনাসমর্থিত সরকার হলে তিনি দায়িত্ব নেবেন না। সরকার তাঁর মতো করেই চলতে হবে। অন্য কেউ সরকার চালালে তিনি থাকবেন না। অধ্যাপক ইউনূসকে জানালাম, এটা আমাদেরও মত। সেনাসমর্থিত সরকার হলে আমরাও মানব না। অধ্যাপক ইউনূস ব্যাপারটা নিয়ে আগেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলে নিতে বললেন। নাহিদ ভাই তাঁকে বললেন, হস্তক্ষেপ না করার কথা বললে আমাদেরই দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। এর চেয়ে অভ্যুত্থানের প্রতি মানুষের একাত্মতা আর মাঠের শক্তি দিয়েই আমরা তাদের ক্ষমতা থেকে দূরে থাকার বিষয়টা বোঝাতে পারব।
দীর্ঘ আলোচনার পর অধ্যাপক ইউনূস সম্মত হলেন। রাত তিনটায় আমি, নাহিদ ভাই ও বাকের ফেসবুকে একটা ভিডিওতে অধ্যাপক ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে সম্মত হওয়ার কথা ঘোষণা করি। আমরা বললাম, ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে শান্তিপূর্ণ অবস্থান রাখুন। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।
...
রাষ্ট্রপতি সংসদ ভাঙার ঠিক আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়। তিনি বললেন, সেনাপ্রধান আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান। কিছুক্ষণ পরে সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি খুব আক্ষেপ করে বললেন, ‘আমার ৭০ থেকে ৮০ হাজার ফোর্স ডেপ্লয়েড, কিন্তু দেশে কোনো আইনশৃঙ্খলা নেই। সরকার নেই। আপনারা আসুন। আপনাদের সঙ্গে বসি। শুনি, আপনারা কী বলতে চান?’
সেনাপ্রধান আমাদের ক্যান্টনমেন্টে ডাকলেন। আমরা বললাম, ক্যান্টনমেন্টে যাব না। হতে পারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আপনাদের সঙ্গে কোনো খোলা জায়গায় বসতে পারি। সেনাপ্রধান বললেন, খোলা জায়গায় তো নিরাপত্তার ব্যাপার আছে। কখন কী ঘটে, বলা যায় না। তিনি বললেন, বঙ্গভবন একটা জায়গা হতে পারে। আপনারা আসুন, আমরা একটা গাড়ি পাঠাই।
৬ আগস্ট সন্ধ্যায় আমরা ১৫ জনের মতো বঙ্গভবনে গেলাম। এরই মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যম অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছে। তিনি বললেন, শিক্ষার্থীরা এত ত্যাগ করতে পারলে আমারও কিছু দায়িত্ব আছে।
কথা ছিল, বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি এবং তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে আমরা বসব। দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি থাকার কারণে আলোচনার জন্য আমাদের বঙ্গভবনে যেতে হয়েছিল। বঙ্গভবনে যাওয়ার আগে আমরা ১১ জনের একটা উপদেষ্টা পরিষদের একটি সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করি।
...
●আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া উপদেষ্টা, যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়