Image description

বিনিয়োগের অন্যতম ক্ষেত্র শেয়ারবাজার। দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে আসছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আহমেদ হোসেন। বরাবরই ফান্ডামেন্টাল (ভালো) শেয়ারে বিনিয়োগ করেন তিনি। ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ রয়েছে তার। গত বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারেন একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ইসলামি ব্যাংকের শেয়ার শূন্য হয়ে গেছে। লেনদেন স্থগিত করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। এমন খবরে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে তার মাথায়। তিনি বলেন, এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। অনেকেই এসব ব্যাংকে বিনিয়োগ করে পথে বসে গেছেন।

আহমেদ হোসেনের মতো আরেক বিনিয়োগকারী ইব্রাহীম হোসেন জানান, একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা তিন ব্যাংকে তার ৫ হাজার শেয়ার রয়েছে। হঠাৎ এসব শেয়ারের মূল্য শূন্য ঘোষণা করায় মাথায় যেন বাজ পড়েছে। শুধু এ দুজনই নয়, এমন হাজার বিনিয়োগকারীর মাতম চলছে শেয়ারবাজারে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এসব ব্যাংকের উদ্যোক্তারা অনিয়ম করে ভেগে গেছে। সাধারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কোনো দোষ নেই। কিন্তু তাদের পোর্টফোলিও শূন্য ঘোষণা করায় তারা বিপাকে পড়েছেন। এ জন্য ডিপোজিটরদের মতো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সরকারের তরফ থেকে প্রণোদনা দিতে পারে।

এ বিষয়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, এ বিষয়ে সরকারের একটা উদ্যোগ নেওয়া দরকার। ডিপোজিটরদের মতো করে সরকার প্রণোদনা দিতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি করে ভেগে গেছেন।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। প্রতারণাপূর্ণ আর্থিক বিবরণী বিনিয়োগকারীদের ভুলপথে চালিত করেছে। সরকার চাইলে ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ বিবেচনায় নতুন ব্যাংকের কিছু শেয়ার দেওয়ার বিষয়ে ভাবতে পারে।

জানা গেছে, একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ইসলামি ব্যাংকের ৫৫২ কোটি শেয়ার শূন্য হয়ে গেছে। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ২০৮ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা ছিল ১২০ কোটি ৮১ লাখ। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৮৭ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার ছিল ৯৮ কোটি ৭৪ লাখ। ইউনিয়ন ব্যাংকের ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা ছিল ১০৩ কোটি ৬৩ লাখ। এক্সিম ব্যাংকের ১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা ছিল ১৪৪ কোটি ৭৬ লাখ এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা ছিল ১১৪ কোটি ২ লাখ।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, মার্জারের পুরো প্রক্রিয়াটা বিনিয়োগকারীদের ধ্বংস করতেই নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদাহরণ বাংলাদেশে চলে না। এই ব্যাংকগুলোকে ভালো ভালো তকমা দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর এগুলোর দুর্বলতা সামনে এসেছে। ততদিনে উদ্যোক্তা-পরিচালকরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে গেছেন। যাদের হাতে শেয়ার ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই সাধারণ ও স্বল্প মূলধনী বিনিয়োগকারী। তারা যদি তাদের বিনিয়োগের কোনো অংশ ফেরত না পায়, তাহলে সারাজীবনের জন্য পুঁজিবাজার ত্যাগ করবে।