Image description

২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে দেশ। প্রথম তিন বছর বাদ দিলেও গত ১৩ বছরে দেশে চাল উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ ১০ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। এই সময়ে মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে লেগেছে সর্বোচ্চ ২৭ কোটি ৩ লাখ ৩ হাজার ৯১১ মেট্রিক টন। গবাদি পশুর খাবার, বীজ ও অন্যান্য কাজে লেগেছে ১২ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৭৫৬ মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত থাকার কথা ৮ কোটি ২৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৩৩ টন চাল, যা দিয়ে ধানের আবাদ বন্ধ রেখেও দেশের মানুষকে প্রায় ৪ বছর খাওয়ানো সম্ভব। তবে গুদামে বা কৃষকের ঘরে নেই এই চাল। উল্টো এই সময়ে প্রায় সোয়া কোটি মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারি গুদামে রয়েছে ১২ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন চাল। প্রশ্ন উঠছে- হিসাবের এত চাল গেল কোথায়?

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে ২৬ ভাগ চাল মানুষের ভোগের বাইরে ধানবীজ, পশু-পাখির খাবার ও শিল্পের জন্য লাগছে। বাকিটা অপচয়। অপচয় রোধের পাশাপাশি পরিসংখ্যানগুলো নিয়মিত হালনাগাদ করা জরুরি। চালের ব্যবহার ও অপচয় নিয়ে বছর তিনেক আগে তারা একটা গবেষণা করেছিলেন। আরেকটা গবেষণা শুরু হলেও নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। কাজ চলছে।

ব্রির ডাবলিং রাইস প্রডাক্টিভিটি ইন বাংলাদেশ : আ ওয়ে টু অ্যাচিভিং এসডিজি ২ অ্যান্ড মুভিং ফরোয়ার্ড শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে শুধু উৎপাদন পর্যায়েই ধানের গড় ফলন নষ্ট হয়েছে ২০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে নষ্ট হয়েছে ১৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এই হিসাবে ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত পাঁচ বছরে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৬৭ লাখ টন চাল থেকে বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ। বীজসহ অন্যান্য কাজে ২৬ শতাংশ ব্যবহার ধরলে ১৩ বছরে প্রয়োজন হয়েছে ১২ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৭৫৬ মেট্রিক টন চাল। অর্থাৎ, ৮ কোটি ২৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৩৩ কোটি টন চাল হিসাবের খাতায় নেই।

ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ বৃদ্ধি ও খ্যাদ্যাভাস্যের পরিবর্তনে ক্রমেই কমছে ভাত খাওয়ার প্রবণতা। বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) আয়-ব্যয় জরিপ অনুযায়ী ২০১০ সালে দেশের একজন মানুষ দৈনিক ৪১৬ গ্রাম চাল ভোগ করতেন। ২০১৬ সালে সেটা কমে দাঁড়ায় ৩৬৭.২ গ্রামে। ২০২২ সালে আরও কমে হয় ৩২৮.৯ গ্রাম। অন্যদিকে ২০১১ সালের জনশুমারিতে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭ জন। ২০২২ সালের জনশুমারিতে বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। দুই শুমারির গড় ১৫ কোটি ৫১ লাখ ৩৬ হাজার ৩০৪ জন। এই সংখ্যক মানুষ ১৩ বছর ধরে ৩৬৭.২ গ্রাম (২০১৬ সালে ভোগের পরিমাণ) করে চাল ভোগ করলে মোট প্রয়োজন হয় ২৭ কোটি ৩ লাখ ৩ হাজার ৯১১ মেট্রিক টন চাল। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) হিসাব অনুযায়ী, ২০১১-১২ থেকে ২০২৩-২৪ সাল পর্যন্ত ১৩ বছরে দেশে উৎপাদিত হয়েছে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ ১০ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন চাল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালের একটা অংশ মানুষের ভোগের বাইরে অন্য কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাকিটা অপচয় অথবা হিসাবের গোঁজামিল। প্রায় ৪৪ শতাংশ চালের সঠিক হিসাব মিলছে না। উৎপাদন ও ব্যবহারের খাতভিত্তিক পরিসংখ্যান না থাকায় প্রায়ই চালের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। উদ্বৃত্ত উৎপাদনের পরও আমদানি করতে হচ্ছে।